নিউজ ডেস্ক

১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১৯:২৩

শিক্ষায় ভ্যাট নিয়ে যা বললেন সুরঞ্জিত

অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে লাইসেন্স নিলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা নিজেদের ‘লাভের স্বার্থে’ শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে নামিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “লাইসেন্স নেওয়ার সময় মালিকরা যদিও এটাকে নন-প্রফিটেবল বলেন, কিন্তু সেটা পরে আর নন-প্রফিটেবল থাকে না।

“এখন তারা যথেষ্ট লাভ করছেন। লাভ করবেন কিন্তু ভ্যাট দিবেন না, তাতো হতে পারে না। মালিক অসুবিধায় পড়লে ছাত্রদের রাস্তায় নামায় দেবেন তা তো হতে পারে না।”

মালিকপক্ষ যাতে ভ্যাটের জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায় করতে না পারে সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকদের ‘যোগ্যতার’ দিকে ইঙ্গিত করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “যারা এই বিশ্ববিদ্যালয় করেছে এরা কয়জন হাজি সাহেব সেটা তো আমরা জানি। এরা মনে করেন, এটা করলাম ওটা করলাম, ইটের ব্যবসা করলাম, তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসাকেও যুক্ত করলাম।”

হাতেগোনা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া প্রায় সবগুলোর অবস্থা বেহাল মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বাসা বাড়িতে ক্যাম্পাস খুলে বসেছেন। অধিকাংশেরই নিজস্ব ক্যাম্পাস নাই। ক্যাম্পাস না থাকলে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না।”

বিশ্ববিদ্যালয় করতে হলে ‘কমিটমেন্ট, বিশ্বাস ও ত্যাগ’ থাকা দরকার বলেও মনে করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

“আমরা চাইব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপযুক্ত শিক্ষক থাকুক, উপযুক্ত ক্যাম্পাস থাকুক। কইতরের খোপের মতো জায়গায় ছাত্ররা ক্লাস করবে সেটা হতে পারে না।”

‘কোন বিশ্ববিদ্যালয় কোন অবস্থায় রয়েছে’ তা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জানানোর সময় নির্ধারিত রয়েছে। এর আগে এ বছরের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন নিয়ে মোট ৮৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। সাত বছর ধরে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে এমন ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭টি সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছে; ২৭টি আংশিক স্থানান্তর করেছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে মুহিতের বক্তব্যে ‘সমস্যা সংকটে’ পরিণত হতে পারত মন্তব্য করে সুরঞ্জিত বলেন, “আমাদের প্রবীণ মন্ত্রী জ্ঞানের অভাবের কথা বলেছেন। কার কি জ্ঞানের পরিধি সেটাতো আমরা একটা ফিতা দিয়ে মাপতে পারব না, এর জন্য কয়েকটা ফিতা লাগবে। এই ব্যাপারটা কারোরই ভাল লাগে নাই।

“প্রবীণ মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা চেয়েছেন, এজন্য তিনি খাটো হননি। এখন এটা নিয়ে শিক্ষকদের ক্ষোভ আর প্রশ্ন থাকতে পারে না।”

“এর জন্য ক্লাস বর্জন আর কর্মবিরতি মতো কর্মসূচির দিকে যাওয়াও ঠিক হবে না।”

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী স্বতন্ত্র বেতন-কাঠামো নির্ধারণে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থানে যাওয়া দরকার বলে মনে করেন সুরঞ্জিত।

“পাবলিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরা শুধু সম্মানের কথা বললে তো হবে না। মেধাবীদের উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যুক্ত রাখতে তাদের মান-মর্যাদা ঠিক রেখে সুযোগ সুবিধাও দিতে হবে।

গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পর গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর প্রেক্ষিতে জনগণের কষ্ট যাতে না বাড়ে সেদিকে নজর দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

“সিএনজি ভাড়া যাতে মিটারে নেওয়া হয় এবং মালিকরা যাতে যখন-তখন ভাড়া বাড়াতে না পারে সেজন্য মনিটরিং বাড়াতে হবে।”

বাড়ি ভাড়াকে সামাজিক সমস্যা হিসাবে অভিহিত করে এক্ষেত্রে বাড়ি মালিকদের সহনশীল হওয়ার আহ্বানও জানান এই সাবেক মন্ত্রী।

চলমান রাজনীতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু একাডেমি ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, সাম্যবাদী দল নেতা হারুন চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত