সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ অক্টোবর, ২০১৫ ১৬:০৫

খালেদাকে যা লিখলেন সমশের মবিন চৌধুরী

শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা সমশের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিঠি লিখে তিনি এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রাজনীতি থেকেও অবসরের ঘোষণা দেন।

বুধবার বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে পদত্যাগপত্র প্রেরণ করেন তিনি। এবং বৃহস্পতিবার তার পদত্যাগের সংবাদ সবাইকে জানান। 

চিঠিতে তিনি লিখেন:

‘মাননীয় চেয়ারপার্সন,

আমার সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করিবেন।

আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি গুরুতর ভাবে আহত হয়েছিলাম। সে কারণে আমাকে বিভিন্ন সময় দেশে বিদেশে নানাবিধ চিকিৎসা নিতে হয়েছে। বর্তমানে আমার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে।

আমার বর্তমান স্বাস্থ্যগত অবস্থার কারণে আমি অনতি বিলম্বে রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

অবসর গ্রহণের প্রেক্ষিতে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সকল পদ থেকেও পদত্যাগ করলাম।

একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার স্বাস্থ্যগত সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সামনে রেখে দেশ ও জাতীয় কল্যাণে কাজ করার প্রয়াস আমার চিরকাল থাকবে।

আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

ধন্যবাদান্তে,

সমশের এম চৌধুরী, বীর বিক্রম

ঢাকা, বাংলাদেশ।’

চিঠিটি বুধবার রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় বলে জানান সমশের মবিন।

সমশের মবিন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানের পাশাপাশি বর্হিবিশ্বের সাথে বিএনপির যোগাযোগের দায়িত্বে ছিলেন সিলেটের এই নেতা। সিলেট-১ আসনের আগামীদিনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবেও ভাবা হতো তাকে।

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০১-২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বে।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দুই বছর চাকরি মেয়াদ শেষে করে ২০০৮ সালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিএনপিতে যোগ দেন সমশের মবিন চৌধুরী। সে সময় চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পান তিনি। ২০০৯ সালে বিএনপির কাউন্সিল হলে তাঁকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়।

এ বছরের শুরুতে বিএনপি ও শরিকদের টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সেনাবাহিনী থেকে কূটনীতিক হয়ে যাওয়া শমসের মবিন। পরে আদালত তাকে জামিনে মুক্তি দেয়।

একাত্তরে সেনাবাহিনীতে ছিলেন সমশের মবিন চৌধুরী। ২৫ মার্চ তাকে চট্টগ্রামে জনতার ব্যারিকেড ভেঙ্গে দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে রাতে বাঙালি অন্য সেনা সদস্যদের সঙ্গে বিদ্রোহ করে ২৬ মার্চ ভোরে কালুরঘাট পৌঁছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে আনুগত্য ঘোষণা করেন তিনি।

১১ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী কালুরঘাটে হামলা করলে বাঙালি অন্য অফিসাররা সরে যেতে পারলেও পাকিস্তানী গোলায় আহত হন সমশের মবিন। তখন আহত অবস্থায় তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শালের প্রস্তুতের মধ্যেই ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করলে তিনি মুক্তি পান। তাকে বীর বিক্রম উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

তবে কোমরে গুলি লাগায় তিনি পঙ্গু হয়ে যাওয়ার কারণে সেনাবাহিনীতে মেজর পদে থাকা অবস্থায় তার চাকুরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। বঙ্গবন্ধু তাকে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠান।

শেখ হাসিনার মতো তার অনেক সহকর্মীও বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে শমসের মবিন চৌধুরী তার প্রতিদান দিয়েছেন।

জিয়াউর রহমান এবং তার পরিবারের সঙ্গে সবসময়ই ঘনিষ্ঠ ছিলেন সমশের মবিন চৌধুরী। সেই ধারাবাহিকতাতেই পররাষ্ট্র সচিব এবং রাষ্ট্রদূতের চাকুরি জীবন শেষে ২০০৮ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন।

তবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক অনেক কর্মকর্তার অভিযোগ, সরকারি চাকুরি করার সময়ও তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের সময় তিনি তারেক রহমানের রাজনৈতিক কর্মসূচি আয়োজন করে সেখানকার বিএনপি নেতাদেরও তটস্থ অবস্থায় রেখেছিলেন বলে তারা অভিযোগ করেছেন।

গত বছর তারেক রহমানের সঙ্গে তার একটি টেলিসংলাপ ফাঁস হয়ে গেলেও তিনি আলোচনায় আসেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত