সিলেটটুডে ডেস্ক

০১ নভেম্বর, ২০১৫ ১২:০৫

এ্যামনেস্টির ঔদ্ধত্য : একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র নিন্দা

’৭১-এর গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অসত্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিবৃতির তীব্র নিন্দা করেছে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’।

শনিবার সংগঠনের সভাপতি বিচারপতি মোহম্মাদ গোলাম রাব্বানী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, সহ-সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, চলচ্চিত্রনির্মাতা শামীম আখতার ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়—

‘বাংলাদেশে ’৭১-এর গণহত্যাকারী, মানবতা বিরুদ্ধে অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে, গণহত্যাকারীদের দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগীরা গত পাঁচ বছর ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে একই ভাষায় কথা বলছে। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গণহত্যাকারীদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য যেভাবে মড়াকান্না জুড়েছে গণহত্যার ভিকটিমরা যে চার দশকের অধিককাল বিচারের দাবিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মাথা খুঁড়েছে সে বিষয়ে তারা কোনও উদ্বেগ বা সহমর্মিতা প্রকাশ করেনি। এমনকি ’৭১-এ এই গণহত্যা চলাকালেও এ্যামনেস্টি এর নিন্দা করে গণহত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেনি।

ঢাকার আইসিটির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও মান সম্পর্কে গণহত্যাকারীদের দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগীরা যে ভিত্তিহীন অভিযোগ বার বার করছে এ্যামনেস্টির বিবৃতি সেটাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। নুরেমবার্গ ট্রাইবুনাল থেকে আরম্ভ করে গণহত্যাকারী মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের জন্য ইউরোপ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যত ট্রাইবুনাল গঠিত হয়েছে কোথাও আসামীদের সুপ্রিমকোর্টে আপিল রিভিউর সুযোগ নেই যা বাংলাদেশে তাদের দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বচ্ছতার স্বার্থে অনেকক্ষেত্রে গণহত্যার ভিকটিমদের আবেদন উপেক্ষা করে গণহত্যাকারীদের আবেদন শুনেছেন। আমাদের বিচারের এসব ইতিবাচক দিক এ্যামনেস্টি কখনও প্রশংসা না করলেও জামায়াতের মিথ্যা অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে তারা একটি দেশের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত করেছে। এর ফলে এ্যামনেস্টি বাংলাদেশ সহ গণহত্যার ভিকটিম শতাধিক দেশের নিকট নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে।

হঠাৎ করে ’৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের দাবি জানিয়ে এ্যামনেস্টি গণহত্যাকারী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দু’হাজার বছরের ইতিহাসে সব সময় বিজয়ীরাই পরাজিতদের বিচার করেছে। আজ যদি এ্যামনেস্টির দাবি অনুযায়ী ’৭১-এর গণহত্যার জন্য বাংলাদেশকে দায়ী করা হয় তাহলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীতে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হত্যার জন্য মিত্রশক্তি বৃটেন, আমেরিকা, ফ্রান্স ও রাশিয়ার বিচার করতে হবে। নুরেমবার্গ ট্রাইবুনালে নাৎসী যুদ্ধাপরাধীদের আইনজীবীরা এমন দাবিই করেছিল, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রত্যাখ্যান করেছিল। এ্যামনেস্টি কখনও জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকিতে আণবিক বোমা নিক্ষেপ করে গণহত্যার জন্য আমেরিকার বিচার দাবি করেনি। এমনকি ভিয়েতনামের গণহত্যার জন্যও ফ্রান্স ও আমেরিকার বিচার দাবি করে নি।

‘জামায়াত, বিএনপি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে আমেরিকা ও ইউরোপে লবিস্ট নিয়োগ করেছে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং মহাজোট সরকারকে উৎখাত করার জন্য। বাংলাদেশবিরোধী এসব তৎপরতা চালাবার অর্থের উৎস কী এবং জামায়াত-বিএনপি এবং তাদের ভাড়া করা লবিস্টরা বিদেশে কী ধরনের ষড়যন্ত্র করছে তা গোয়েন্দা নজরদারিতে আনার পাশাপাশি এ্যামনেস্টির মতো সংগঠন কীভাবে জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের গডফাদার জামায়াতের পক্ষে কাজ করছে এসব তথ্যপ্রমাণ সহ আন্তর্জাতিক ফোরামসমূহ তুলে ধরার জন্য আমরা সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে রিভিউর নামে গণহত্যাকারী সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর বিলম্বিতকরণে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক থাকবার আহ্বান জানাচ্ছি।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত