সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ আগস্ট, ২০২২ ২০:৩৩

তৃতীয় শক্তি হতে জোট বাঁধছেন রব-মান্না-সাকী-নূর

বিএনপির সঙ্গে সরকারবিরোধী যুগগৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত জানানোর পর কয়েকটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিকল্প হয়ে উঠার মানসে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। নতুন জোটের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি- দেশের দুই প্রধান দলের প্রতিই আস্থা নেই জনগণের। তাই তারা বিকল্প শক্তি হতে চান।

নতুন এই মোর্চার নাম ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’, যা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করবে আগামী সোমবার ৮ আগস্ট।

এই জোটে সাতটি দল থাকবে বলে জানিয়েছেন এই জোট গঠনের অন্যতম উদ্যোক্তা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী। অন্য দলগুলো হলো জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, গণঅধিকার পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

এসব দলের মধ্যে জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে।

এই দুটি দল ছাড়াও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলন সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে। আর গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তারা বিএনপির ডাকের অপেক্ষায় আছেন।

এর মধ্যে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণসংহতি আন্দোলনের এক মত বিনিময় সভায় জোনায়ের সাকী ছাড়াও নাগরিক ঐক্যের প্রধান সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর এই মোর্চার প্রসঙ্গ তোলেন।
এদের মধ্যে মান্না ও নুর দুই জনই আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিরও সমালোচনা করেন।

নাগরিক ঐক্যের নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভিত্তি নেই। মানুষের এখন এমন অবস্থা তারা আওয়ামী লীগকেও বিশ্বাস করে না। আবার বিরোধী দল হিসেবে বিএনপিকেও বিশ্বাস করে না। তারা বিকল্প চায়। আমরা সে চেষ্টা করছি। আমরা একটা পরিবর্তন চাই এবং মানুষকে সেটি বোঝাতে হবে। এই পরিবর্তন শুধু সরকারের পরিবর্তন না, রাষ্ট্রব্যবস্থারও পরিবর্তন।’

আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন জোটের দুই শরিক মাহমুদুর রহমান মান্না ও নুরুল হক নুর আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিরও সমালোচনা করেছেন। বলেছেন, বিএনপির হাতে ক্ষমতা দেয়া যাবে না।

নুর বলেন, ‘আমরা গত ৩৪ বছরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলকেই ক্ষমতায় দেখেছি। আমরা দুই দলেরই চরিত্র দেখেছি। তাদের চরিত্র একই। এই দুই দল ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কিছুই হবে না। এ জন্য তৃতীয় কোনো শক্তিকে আমাদের ক্ষমতায় নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে আমাদের ঐক্য গড়তে হবে। এই ঐক্যে একটা নির্যাতিত দল হিসেবে বিএনপিকে সঙ্গে রাখতে পারি। কিন্তু তাদের হাতে ক্ষমতা ছাড়া যাবে না।’

‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ ৮ আগস্ট আত্মপ্রকাশ করছে জানিয়ে জোনায়েদ সাকী বলেন, ‘শেষ হয়ে যাওয়ার আগে দেশকে উদ্ধার করার যুদ্ধে নামতে হবে।’

নিজেরা তৃতীয় শক্তি হতে চান, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে এক মনে করেন, তাহলে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন কেন- এমন প্রশ্নে নিউজবাংলাকে সুনির্দিষ্ট জবাব দেননি জোনায়েদ সাকী।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের দাবি আদায়ে এই মঞ্চ লড়াই চালিয়ে যাবে। রাজনৈতিক নূন্যতম যে লক্ষ্য সে লক্ষ্য পূরণ করে তাহলে বিএনপির সঙ্গে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করতে পারি। এ বিষয়ে কথাবার্তা চলছে।’

গত ৩১ মে জোনায়েদ সাকীর সঙ্গে সংলাপ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমহীর জানান, দুই দল সরকার পতনের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলন করতে একমত হয়েছে।

এর সাত দিন আগে ২৪ মে জেএসডির আ স ম আবদুর রবের জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে সংলাপ শেষেও একই কথা বলেন ফখরুল।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের আলোচনায় সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ও এভাবে দখলকৃত হয়নি। এখানে বদল আনতে চাইলে মৌলিক কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। গণতন্ত্র মঞ্চের মাধ্যমে অন্যান্য দলের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে গণতন্ত্রের জন্য আওয়াজ তোলা সম্ভব হবে। যার প্রথম রাস্তা হলো এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো। তার জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’

নতুন মোর্চা গঠন প্রসঙ্গে বলেন, ‘জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে গেলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। যারা পারবেন তারা বিভিন্নভাবে লড়বেন।
‘সরকার আমাদেরকে বললেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন এখন তারাই বলছে হারিকেন জ্বলো, কুপি জ্বালো, মোমবাতি জ্বালো। বলছে এটা গ্লোবাল লোডশেডিং। বুলিং করে বা চায়ের দাওয়াত খেয়ে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। গুলির জবাব বাংলাদেশের মানুষ দিতে জানে। গুলির জবাব দিয়েই দেশের মানুষ স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিল। আবারও এই পতনের লড়াই করবে তারা।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত