সিলেটটুডে ডেস্ক

১৪ জুন, ২০১৬ ২২:৫৭

আ.লীগ- জাসদ বিতর্কের আগুনে জল ঢাললেন হাসিনা!

আওয়ামী লীগ ও জাসদের মধ্যকার সাম্প্রতিক বিরোধে জল ঢেলে দিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি জাসদ ও দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ) নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সমালোচনামূলক বক্তব্যকে তার ব্যক্তিগত বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  মঙ্গলবার (১৪ জুন) সংসদ অধিবেশন চলাকালীন দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

জাসদকে নিয়ে সৈয়দ আশরাফের কড়া সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এখন তো এসব কাদা ছোড়াছুড়ির সময় নয়।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, সভাপতির ভূমিকাও কি আমাকে পালন করতে হবে, ‘সেক্রেটারিশিপ’ও আমি চালাব নাকি?’ তাহলে অন্য কারও দরকার নাই বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

জানা যায় শেখ হাসিনা মন্তব্য করে বলেন- অনেক ষড়যন্ত্রের ভেতর দিয়ে সরকার পরিচালনা করছি। অনেক কষ্টে সবাইকে এক রাখার চেষ্টা করছি। এসময়ে এগুলো বলার কী প্রয়োজন ছিল আমি বুঝতে পারছি না।

এদিকে, জাসদকে নিয়ে সরকারী দলের প্রভাবশালী এ মন্ত্রীর বক্তব্যের পর জাসদের এক সমাবেশ থেকে সৈয়দ আশরাফকে "ঐক্য বিনষ্টকারী' আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার বলেছেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ক্ষেত্র তৈরিতে জাসদকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ঐক্য বিনষ্ট করবে।

জাসদকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্য প্রসঙ্গে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার বলেছেন, জাসদ নিয়ে তিনি (আশরাফ) যে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা একান্তই ব্যক্তিগত মতামত। এটা দলীয় কোনো মতামত নয়।

উল্লেখ্য, সোমবার (১৩ জুন)  এক অনুষ্ঠানে জাসদকে একটি ‘হঠকারী’ সংগঠন আখ্যা দিয়ে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তখন সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে ছাত্রলীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জাসদ গঠন করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাসদ নামক বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদীরা সম্পূর্ণ ভিন্ন দিকে পরিচালিত করে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের ইতিহাসের একটি অংশ। কিন্তু জাসদের নেতাকর্মীরা এই সফল মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছিল। বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার আগেই দেশকে ছিন্নভিন্ন করার চেষ্টা করেছিল। তারা যদি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সমস্ত পরিবেশ সৃষ্টি না করতো তবে বাংলাদেশ একটি ভিন্ন বাংলাদেশ হতো।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করেছিল। এদের কারণেই দলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়িত হয়নি। দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আবার তাদের মধ্য থেকে একজনকে মন্ত্রী করা হয়েছে। এর প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।

এদিকে, জাসদ নিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে মঙ্গলবার (১৪ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এক সময়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান জাসদ (জেএসডি) নেতা আ স ম আবদুর রব বলেন , ‘সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য-অন্যায্য ও অনভিপ্রেত। বঙ্গবন্ধু হত্যার জন্য আওয়ামী লীগই দায়ী। আওয়ামী লীগের দলীয় ভুল রাজনীতি বঙ্গবন্ধুকে দলীয় আবর্তে বন্দী করে, উপনিবেশিক শাসনের বেড়াজালে আবদ্ধ করে-জনগণ থেকে ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করে, মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছিল।’

বিবৃতিতে রব আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগই সরকার গঠন করে। ৩২ নং ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর লাশ রেখে আওয়ামী লীগ নেতারাই মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করে। আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশেই জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয় এবং সেই সরকারই দেশে প্রথম সামরিক শাসন জারি করে। এসব সত্য এবং ভুল রাজনীতি আওয়ামী লীগের স্বীকার না করাই হবে অতিমাত্রায় ভণ্ডামি।’

রব বলেন, ‘সশস্ত্র যুদ্ধের পর ‘‘বিপ্লবী সরকার’’ গঠন না করে শুধু আওয়ামী দলীয় সরকারের কারণে একাত্তরে গড়ে ওঠা জাতির লৌহ কঠিন ঐক্যকে ভেঙে দেয়া হয়। রাজনৈতিক সংকটকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে রক্ষীবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করে রাজনৈতিক সঙ্কটকে তীব্র করা হয়। রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধির মত অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ ও একদলীয় বাকশাল গঠন করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিলো।’

এর আগে গত বছর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরির জন্য জাসদকে দায়ী করলে আরও কয়েকজন নেতা তার সঙ্গে সুর মেলান।

শেখ সেলিমের বক্তব্যের পরের দিন বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপনও সংবাদ সম্মেলনে জাসদের ১৯৭২-৭৫ সময়কার ভূমিকার তদন্ত দাবি করেন।

এরপর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ আবার বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্র তৈরির জন্য জাসদকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও বলেন, ইনুরা তখন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন।

তার প্রতিক্রিয়ায় জাসদ সভাপতি ইনু অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করতে বর্তমান রাজনৈতিক মিত্র দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরোধিতার ওই অবস্থানের মূল্যায়নের প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, “চলার পথে বহু পদক্ষেপ নিতে হয়, কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক, এটা ইতিহাস বিচার করবে।”

তবে বর্তমান ঐক্যে কোনো ফাটল ধরার সম্ভাবনা নাকচ করে ইনু বলেছিলেন, “আওয়ামী লীগ ও জাসদ নীতিগতভাবে ঐক্যবদ্ধ, আন্দোলন-নির্বাচন এবং সরকার পরিচালনায় আমরা একসঙ্গে আছি এবং আমরা মনে করি, এই লড়াইটা শেষ পর্যন্ত নেওয়ার জন্য ঐক্য দরকার।”

১৯৭২-৭৫ সময়ে দলের ভূমিকা নিয়ে জাসদের অন্য অংশের কার্যকরি সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদল বলেছিলেন, তারা এখন ওই সময়ের ভুলের ‘কাফফারা’ দিচ্ছেন। সম্প্রতি কাউন্সিলে জাসদ ভেঙে গেলে ইনু ও বাদল এখন আলাদা অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত