সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ জুলাই, ২০১৬ ২২:৫৩

সংসদে তোপের মুখে সুরঞ্জিত

জাতীয় সংসদ অধিবেশনে মন্ত্রীদের অনুপস্থিতির সমালোচনা করায় সাংসদদের তোপের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সংসদে অধিকাংশ মন্ত্রীদের অনুপস্থিতির বিষয়ে ডেপুটি স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুরঞ্জিত বলেন, “মর্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বাংলাদেশ দখল তারা করবেন না। সাহায্য করার জন্য ‍উনি চেষ্টা করবেন।

“এ কথায় মনে হলো, ইচ্ছা করলে তারা দখল করতে পারে এবং দখল বহালও রাখতে পারে। এ ধরনের হুমকি আমেরিকানরা দিচ্ছেন! এই হুমকিতেই কি তাহলে মন্ত্রী বাহাদুররা তাদের নিরাপত্তার জন্য যে যার জায়গায় আশ্রয় গ্রহণ করছেন?”

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এ বক্তব্যকে ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত’ আখ্যা দিয়ে এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুরঞ্জিত বলেন, “এ ধরনের কোনো হুমকি কোনো দেশের কোনো কূটনৈতিকের দেওয়া শোভনীয় নয়। এ ব্যাপারে অন্তত আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা মন্ত্রণালয় একটি জোরদার আপত্তি দেবেন বলে আমরা আশা করি।”

মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বুধবার এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, সন্ত্রাস দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রস্তাব বাংলাদেশে আক্রমণ বা বাংলাদেশকে দখল বা যে কোনো উপায়ে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নয়।
 
আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদরা সুরঞ্জিতের এ বক্তব্যের সমালোচনা করলেও ওই বক্তব্য ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার-বহির্ভূত’ ছিল বলে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের কথায় সমর্থন এসেছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের কাছ থেকে।

রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য নিয়ে সুরঞ্জিতের প্রতিক্রিয়াকে সমর্থন করে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “একজন অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি হুমকি দেবে! পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্যই তাকে ডেকে এর সদুত্তর দেবেন।”

মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনাদের তখন ভূমিকা কী ছিল? ইয়াহিয়াকে সমর্থন করেছিলেন। এর জন্য ক্ষমতা চেয়েছেন?

“আপনাদের দেশে কী হচ্ছে? নাইট ক্লাবে ৫০ জন খুন হয়েছে। তাহলে কি এখন আমরা আপনার দেশ দখল করতে যাব? এটা ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান না, এটা বাংলাদেশ।”

বার্নিকাট ‘ধৃষ্টতা’ দেখিয়েছেন মন্তব্য করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান শেখ সেলিম।

সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিতের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “মাননীয় মন্ত্রীরা কেবল ঢাকায় নয়, শুক্রবার-শনিবার এলাকায় গিয়ে অফিস করেন বলেই এখন সংসদে নেই। মাননীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত একটা শব্দ বলেছেন, সেটা এক্সপাঞ্জ করা হোক- ‘মনে হয় যেন মন্ত্রীরা পালিয়ে গেছে’।”

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য গণমাধ্যমে ‘সঠিকভাবে’ আসেনি বলেও নানক দাবি করেন।

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী এ সময় বলেন, “আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। যদি আনপার্লামেন্টারিয়ান কোনো শব্দ থাকে তবে এক্সপাঞ্জ করব।”

তবে এরপর প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ একটি পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে বার্নিকাটের বক্তব্য পড়ে শুনিয়ে বলেন, “পত্রিকায় এটা এসেছে। এখানে যে বক্তব্য এসেছে, সেটা ঠিক না।”

তারপর নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান মাইক ছাড়াই কথা বলতে শুরু করলে তাকে ফ্লোর দেন ডেপুটি স্পিকার।

শামীম ওসমান বলেন, “আমাদের অত্যন্ত সিনিয়র নেতা আমার পিতৃতুল্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, মন্ত্রীরা ভীত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন তারা গুরুত্বপূর্ণ নেতা, তারা মোটেও ভীত নন। একুশে আগস্টে গ্রেনেড হামলার সময়েও তারা ভীত হননি।

“এই নেতাদের এখানে অসম্মানিত করা হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। এধরনের মন্তব্যে আমি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাই।”

সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, “আমাদের কথা বলার সময় কী বার্তা যাচ্ছে সেটা মাথায় রেখে কথা বলা উচিৎ। সব সময় মন্ত্রীরা এখানে উপস্থিত থাকেন। মন্ত্রীদের উপস্থিতি এরকমই থাকে।” যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের ভাষাও যথাযথ হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত