সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ আগস্ট, ২০১৬ ১৭:১৬

২১ আগস্ট রাজনৈতিক ইতিহাসের কলঙ্কময় ঘটনা : ফখরুল

একুশ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক ইতিহাসের কলঙ্কময় ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার (২১ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির চেয়ারম্যান শফিকুল গানি স্বপনের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “এদিনে আমি স্মরণ করতে চাই, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, আজকে সেই ২১ আগস্ট।

“যে ২১ আগস্টে একটা বর্বরতম হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল এবং একটি রাজনৈতিক দলের ২২ জন নেতাকর্মী সেদিন নিহত হয়েছিলেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটা কলঙ্কময় ঘটনা ঘটেছিল।”

ওই ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “আজকের এই দিনে আমি নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। তার মধ্যে আমাদের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সাহেবের স্ত্রী আইভি রহমানও ছিলেন। আমি তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।”

এছাড়াও তিনি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে দেশের সকল দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক শক্তির সাড়া দেবার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জঙ্গিবাদ দমনের নামে সরকার বিরোধী দলকে ধ্বংস করার চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করে সরকার প্রমাণ করেছে তারা জঙ্গিবাদ নির্মূলে আন্তরিক নয়। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই পারবে দেশকে জঙ্গিবাদ থেকে রক্ষা করতে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় দলটির তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ’ আহত হন।  বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে অভিযোগপত্র দিয়ে বিচার শুরু হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর অধিকতর তদন্ত হয়। এতে আসামির তালিকায় যোগ হন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ ৩০ জন।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে দেশে একটি ভিন্নমুখী রাজনীতি চলছে। সেই ভিন্নমুখী রাজনীতি হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিপন্নের রাজনীতি। বাংলাদেশের মানুষকে আজকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করবার চক্রান্ত, অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করবার চক্রান্ত- যেটা আজকে বাংলাদেশে চলছে।”

জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় খালেদা জিয়ার ‘জাতীয় ঐক্যে’র আহবান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই আহবান বিএনপির পক্ষ থেকেও ছিল না, ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকেও ছিল না, তিনি একজন জাতীয় নেতা হিসেবে, দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে তার দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ থেকে এই ডাক দিয়েছিলেন।” খালেদার এই আহ্বানের ‘অপব্যাখ্যা’ দেয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

“জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে দেশনেত্রী কাউকে চিঠি দেননি। যারা তার আহবানে সাড়া দিয়েছেন, তারা যোগাযোগ করছেন, তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন। এখনও তিনি বলছেন। আমরা আশা করি অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এই ঐক্যটাকে আমরা একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারব।” জঙ্গিবাদের কথা বলে সরকার বিরোধীদল নির্মূল করার কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার সমালোচনাও করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, এই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র কোনোদিনই হতো না, যদি দেশে একটা জনগণের নির্বাচিত সরকার থাকত। কারণ তাদের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা থাকত। এই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র যদি আমার সুন্দরবনকে ধ্বংস করে দেয়, আমার পরিবেশকে ধ্বংস করে দেয়, আমার ভবিষ্যতকে ধ্বংস করে দেয়, তাহলে এই বিদ্যুৎ দিয়ে আমার কি হবে? এটা বেসিক প্রশ্ন।”

মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনে এক দুর্যোগ চলছে। এই দুর্যোগ থেকে দেশ জাতিকে মুক্তি দিতে হলে চলমান সংগ্রামকে চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে নিয়ে যেতে হবে। এই অবস্থায় দেশ জাতি চলতে পারে না। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে বিজয়ী হতে না পারলে আমরা অস্তিত্ব সংকটে পড়বো। তিনি বলেন, শফিকুল গানি স্বপন আজীবন গণতন্ত্রের পক্ষেই লড়াই করে গেছেন।

শফিউল আলম প্রধান বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘জাতীয় ঐক্যের’ আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতার জন্য নয়, জাতির প্রয়োজনে দেশের প্রয়োজনে। যা অতিতে মওলানা ভাসানী ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির মত নেতারা করেছিলেন। যারা দেশনেত্রীর ঐক্যের আহ্বানে আসবা কিংবা বিরোধিতা করে তাদের দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি ভারতের অব্যাহত আগ্রাসন প্রসঙ্গে বলেন, আমরা বন্ধুত্ব চাই সমমর্যাদার ভিত্তিতে। বন্ধুত্বের নামে কোন দাসত্ব আমরা মেনে নিতে পারি না। শফিকুল গানি স্বপনও জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করেছেন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে।

সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম শফিকুল গানি স্বপনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে সুন্দরবন ধ্বংসের চক্রান্ত দেশবাসী মানে না, মানতে পারে না। আমরা শুধু প্রতিবেশীর স্বার্থ দেখবো তারা আমাদের স্বার্থ রক্ষা করবে না তা হতে পারে না। তিনি বলেন, গণতন্ত্রহীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের এক দশমাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করতে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে হবে।

এম. গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বলেন, রাজনীতিক জীবনে শফিকুল গানি স্বপন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কঠোর সমালোচনরা করলেও কারো সম্পর্কে কটূক্তি বা অশ্লিল শব্দ ব্যাবহার করতেন না। যা আজকের রাজনীতিতেই ক্রমেই কমে হ্রাস পাচ্ছে। তিনি দেশ ও জাতির স্বার্থে জাতীয় ঐক্যের রাজনীতি করেছেন। তিনি বলেছেন, শফিকুল গানি স্বপন কখনো তার রাজনীতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেননি। তিনি যে রাজনীতি বিশ্বাস করতে তাই প্রয়োগ করার চেষ্টা করতেন। আমরা যখন শুধুমাত্র ক্ষমতায় জন্য রাজনৈতিক বিশ্বাসকে পদদলিত করতে কুণ্ঠিত হই না, তখন শফিকুল গানি স্বপন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় রাজনীতির সংজ্ঞা কি?

সভাপতির বক্তব্যে জেবেল রহমান গানি বলেন, রাজনীতি ক্রমান্বয়ে রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলছে যাচ্ছে। কালো টাকার মালিকরা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের অপচেষ্টায় লিপ্ত। আর সেই কারণেই দেশে আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা অনুপস্থিত। ফলে রাষ্ট্রে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। বরেণ্য রাজনীতিক জননেতা শফিকুল গানি স্বপন রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়ন মুক্ত করতে আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। আর সেই কারণেই তাকে বার বার লাঞ্ছিত হতে হয়েছে সুবিধাবাদী ও বর্ণচোরা রাজনীতিকদের দারা। তিনি বলেন, দেশনেত্রীর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ন্যাপ সকল সময়ই তার পাশে থাকবে।

ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি‘র সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, জাতীয় দল চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাপ প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার মশিউর রহমান গানি, ভাইস চেয়ারম্যান কাজী ফারুক হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মোঃ নুরুল আমান চৌধুরী, সম্পাদক মোঃ কামাল ভুঁইয়া, নগর সদস্য সচিব মোঃ শহীদুননবী ডাবলু, যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ আনছার রহমান শিকদার, বাসন্তি বরুয়া বাবলী, জিল্লুর রহমান পলাশ, আবদুল্লাহ আল-কাউছারী, ছাত্র নেতা সোলায়মান সোহেল প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত