সিলেটটুডে ডেস্ক

১৯ এপ্রিল, ২০১৫ ০২:০৭

ভোটের প্রচারণায় হঠাৎ রাজপথে খালেদা জিয়া

কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শনিবার গাড়ি নিয়ে রাজপথে নামেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কোথায় যাচ্ছেন জানতেন না তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মীরা, এমনকি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিতরাও।

বিকেল সোয়া ৪টায় নিজ বাস ভবন থেকে গুলশান-২ এর পথে জিপ গাড়িতে করে এ আকস্মিক যাত্রা শুরু করেন খালেদা। তা দেখে একে একে তার গাড়ির পিছু নেন অন্যরা।

খালেদার জিয়ার গাড়ি চলছিল ধরি গতিতে। প্রথমেই গাড়ি থামান গুলশান-২ পিংক সিটির সামনে। গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন পিংক সিটির দোকানীদের উদ্দেশে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের লিফলেট হাতে ভোট চান তাদের কাছে। তাদের হাতে হাতে তুলে দেন লিফলেট। নানান বিষয়ে খোঁজখবরও নেন। গুলশানেই তার সঙ্গে দলের কয়েকজন মহিলা নেত্রী যোগ দেন।

প্রায় ৩ মাস ‘অবরুদ্ধ’ থাকা খালেদার এ রাজপথ অভিযান অভিনব তো বটেই। সিটি নির্বাচনে প্রচারণায় নামবেন- এমন কথা শোনা গিয়েছিল আগেই। কিন্তু এভাবে আকস্মিক গণসংযোগে নামবেন তা জানা ছিল না কারোই। এ দিকে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে বিস্মিত হন জনতা। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অনেকে তার সঙ্গে হাত মেলান, ছবি তোলেন। অনেকে আবার সেলফি তোলার আবদার করলে খালেদা জিয়া তাও পূরণ করেন। এ সময় তাকে দেখার জন্য দর্শনার্থীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন। প্রচণ্ড ভিড় লেগে যায়। ভিড় সামলাতে সিএসএফ সদস্যদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। প্রায় ২০ মিনিট নিচতলার শাড়ি, কসমেটিকস, জুয়েলারির বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে প্রচারণা চালান।

ওই মাকের্টের একটি দোকানে গিয়ে বিক্রয় কর্মীদের সালাম দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ঢাকা শহর অনেক নোংরা হয়ে গেছে। এগুলো পরিষ্কার করতে হবে। তাই তাবিথ আউয়ালকে বাস মার্কায় একটি ভোট দেবেন।’

বিকালে ৪টা ৪০ মিনিটে ওই মার্কেট থেকে বেরিয়ে সামনের রাস্তায় উপস্থিত সাধারণ মানুষের মধ্যে লিফলেট বিলি করেন খালেদা জিয়া। পিংক সিটি থেকে বের হয়ে গুলশান-১ নম্বরের ডিএনসিসি মার্কেটে যান তিনি। ওই মার্কেটের নিচতলায় দোকানীদের সঙ্গে করা বলেন। তাবিথ আউয়ালের জন্য ভোট চেয়ে লিফলেট বিতরণ করেন।

এরপর গুলশান-১ নম্বর মোড়ের নাভানা শপিং কমপ্লেক্সে যান। ওই মার্কেটের নিচতলার ওয়েস্টার্ন ভিশন, জিইএমএস ওয়ার্ল্ড, জুয়েল অপটিকসহ বিভিন্ন দোকানে লিফলেট বিলি করেন। জিইএমএস ওয়ার্ল্ডের দোকোনে প্রবেশ করেই বিক্রয় প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, ‘বাস মার্কা, বাস মার্কা, ভোট চাই, ভোট চাই।’ বিক্রয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। খোঁজ খবর নেন তাদের। হিরার অলংকারের মূল্য জানতে চান তিনি। বিক্রয় কর্মী সোহাগ একটি অলংকারের দাম বলেন, ‘এক লক্ষ টাকা।’ খালেদা জিয়া বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, ‘এক লাখ টাকা।’ সোহাগ আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘অনেক ভাল লাগছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমাদের কাছে চলে আসছেন। তিনি আমাদের কাছে বাস মার্কা ভোট চেয়েছেন।’

দোকানীদের সঙ্গে কথা বলা শেষে খালেদা নাভানা শপিং কমপ্লেক্সে সামনে দাঁড়ান। এ সময় গুলশান-১ নম্বর মোড়ে শত শত লোক জড়ো হয়। খালেদা জিয়া হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। ওইখান থেকে ধীর গতিতে তার গাড়িবহর বাড্ডা লিংক রোড ধরে এগিয়ে যায়। গাড়িতে বসেই রাস্তার দুই পাশে পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপি প্রধান। পেছনে পেছন দলের নেতাকর্মীরা নানা স্লোগান শোনা যায়। তারা বলেন, ‘খালেদার জিয়ার ডাকে সাড়া দিন, বাস মার্কায় ভোট দিন।’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মহিলা নেত্রীরাও পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেন।

খালেদা জিয়ার গাড়িবহর লিংক রোড ঘুরে শাহজাদপুর, উত্তর বাড্ডা হয়ে আমেরিকান দূতাবাসের সামনে দিয়ে ফের গুলশান-২ নম্বর ঢাকা উত্তর ডিএনসিসি মার্কেটের সামনে থামে। ওই মার্কেটের নিচতলায় প্রচারণা চালান খালেদা জিয়া। এম আর বেকারিতে প্রবেশ করে বিক্রয় কর্মীদের গ্রামের বাড়ি কোথায় জিজ্ঞেস করেন। তাদেরকে বাস মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান। প্রায় ২০ মিনিট ওই মার্কেটে প্রচারণা চালিয়ে বনানী সুপার মার্কেটে চলে আসেন। সেখানে প্রায় ১০ মিনিট প্রচারণা চালান। এ সময় তিনি বনানী মসজিদের সামনেও মুসল্লিদের সঙ্গে কথা বলেন এবং কুশলাদি বিনিময় করে তাবিথ আউয়ালের পক্ষে ভোট চান।

সন্ধ্যা ৭টার পর বনানী ১১ নম্বর রোডে গণসংযোগ করেন খালেদা জিয়া। এ সময় মেয়র প্রার্থী তাবিথ যোগ দেন তার গণসংযোগে। তাবিথ আউয়ালকে নিজের মতো করে প্রচারণা চালানোর পরামর্শ দেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের পরামর্শ ও দোয়া নিয়ে গণসংযোগে চলে যান তাবিথ।

এবার খালেদা জিয়ার মহাখালীর দিকে কোথায় যাচ্ছেন কেউ জানে না। মহাখালী আমতলী ও কাঁচাবাজার এলাকায় এসে আবার গাড়ির গতি ধীর হয়ে যায়। তিনি গাড়ির ভেতর থেকেই হাত নেড়ে বাস মার্কায় ভোট চান ও লিফলেট বিলি করেন।

আবার গাড়ি যেতে থাকে মহাখালী বাস টার্মিনালের দিকে। টার্মিনালের প্রথম গেট দিয়েই প্রবেশ করেন খালেদা। গাড়ি থেকে নেমে গাড়িচালক, হেলপারসহ মালিক সমিতির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং নোংরা রাজধানীকে আধুনিক করে গড়ে তোলার জন্য তাবিথ আউয়ালের পক্ষে ভোট চান। এ সময় বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কালাম উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের মতো এত বড় নেত্রী আমাদের এই বাসস্ট্যান্ডে আসবেন- তা কল্পনাও করতে পারিনি।’

মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে খালেদা জিয়া তেজগাঁও কলোনি বাজার হকার্স মার্কেটে গণসংযোগ করেন। হাতিরঝিল এলাকায় গণসংযোগকালে সংবাদিক ও পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে খালেদা জিয়া।

কেমন সাড়া পাচ্ছেন?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আর আপনারা তো দেখতেই পাচ্ছেন কেমন সাড়া পাচ্ছি।’

এ সময় একজন পথচারী খালেদা জিয়াকে বলেন, ‘আমরা নেগেটিভ রাজনীতি চাই না। পজেটিভ রাজনীতি চাই।’ জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপি পজেটিভ রাজনীতি করে। আমরা নেগেটিভ রাজনীতি করি না। আমরাও পজেটিভ রাজনীতি চাই।’

এভাবে প্রায় ৫ ঘণ্টার প্রচারণা শেষে রাত ৯টা ৫মিনিটে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসায় ফিরে যান।

এ দিকে খালেদা জিয়ার প্রচারণার কারণে গুলশান, বাড্ডা, নতুন বাজার প্রধান সড়কে যানজট লেগে যায়। অনেকেই এ বিষয়ে নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেন। সিএনজি চালক তোফায়েল আমমেদ বলেন, ‘খালেদা জিয়া প্রচার নেমেছেন ভাল কথা। কিন্তু রামপুরা, বাড্ডার পুরো রাস্তা যানজট লেগে গেছে এই খবর কি তিনি রাখেন?’ পথচারী চাঁন মিয়া বলেন, ‘ম্যাডাম রাজপথে নামছে এটা খুশির খবর। আমার চাই দেশে শান্তি ফিরে আসুক। আমরা চাই একটি সুষ্ঠু নিবার্চন হোক।’

 

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত