সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

১৪ মার্চ, ২০১৭ ০০:৫৩

দিরাই-শাল্লায় জয়া সেনের বিরুদ্ধে মাঠে আওয়ামী লীগের একাংশ

প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুতেও থামে নি স্থানীয় আওয়ামী লীগের গৃহবিবাদ। দিরাই-শাল্লার উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সুরঞ্জিত সেনের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগেরই একটি অংশ।

শনিবার এই অংশটি উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেনের সিলেট নগরের তপোবন আবাসিক এলাকায় বাড়িতে বৈঠকও করেছেন।

বৈঠকে কয়েকজন বিএনপি নেতাও উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের সমর্থক হিসাবে পরিচিত দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলতাব উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ ও যুব লীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানের অনুসারী বলে পরিচিত।

বৈঠকে উপস্থিত একজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, তারা গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে শনিবার দুপুর ১২ টা থেকে দেড় টা পর্যন্ত ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেনের সিলেট শহরের বাসায় বসেছিলেন। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে সুনামগঞ্জে দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে আরো বেশি কর্মীসহ তারা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেন’র বিরুদ্ধে মো. ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেনের পক্ষে প্রচারণায় নামবেন।

ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন কুয়েতের সাধারণ সম্পাদক এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। দিরাই উপজেলার শরীফপুরে তাঁর গ্রামের বাড়ি। এই আসন থেকে ৮ বার নির্বাচন সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত গত ৫ ফেব্রয়ারি মারা যান। তাঁর  মৃত্যুর পর দিরাই-শাল্লা আসনে উপ-নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেন দেশে আসেন।

সুরঞ্জিত বিরোধী স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ছায়েদ আলী মাহবুবকে পক্ষে মাঠে নেমে জয়া সেনগুপ্তকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা একজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেনের সিলেট শহরের তপোবন আবাসিক এলাকার বাড়িতে শনিবারের বৈঠকে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলতাব উদ্দিন, দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর চৌধুরী, গত ইউপি নির্বাচনে দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হুমায়ুন রশীদ লাভলু, যুব লীগ নেতা মারফত আলী, মকসুদ আলম, একরার হোসেন, পারুল মিয়া, বিএনপি নেতা মেরাজ মিয়া ও ভুট্টো মিয়া, যুবলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম জুয়েল, দুদু মিয়া, জ্যোতিষ রায়, আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল করিম, হারুন মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক উপস্থিত থাকার সত্যতা স্বীকার করে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা আলতাব উদ্দিন বলেন, ‘বহুদিন থেকে আওয়ামী লীগ করছি। ৭০’এ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। সুরঞ্জিত সেন দলে আসার পর থেকে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। ২০১৫ সাল পর্যন্ত সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের চালচলন ভাল ছিল। এরপর থেকে প্রদীপ রায় (উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) ও মোশারফ মিয়া (দিরাই পৌরসভার মেয়র) তাঁকে বিপথে পরিচালিত করায় আমরা সুরঞ্জিতের সঙ্গ ছেড়েছি। আমরা মনে করছি জয়া সেনগুপ্তকে প্রদীপ-মোশারফ বিপথে পরিচালিত করবে, এজন্য আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি জানান, শনিবার ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেনের সিলেটের বাসায় তারা প্রায় দেড়ঘণ্টা বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকের পরিকল্পনা মোতাবেক দু’এক দিনের মধ্যেই ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেনের পক্ষে প্রচারণায় নামবেন তারা।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমানকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,‘আলতাব মিয়ারা নৌকার বিরুদ্ধে কোন সভা করেছে বলে আমি জানি না। শুনেছি বিএনপি’র জেলা আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন শাল্লায় গিয়ে সভা করেছেন। সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের মৃত্যুর পর শোক সভায় আমাকে বলা হয়নি। রবিবার শাল্লায় শোক সমাবেশ হয়েছে ওখানকার দলীয় নেতা অবনিকে (অবনি মোহন দাস, মতিউর রহমানের অনুসারি হিসাবে পরিচিত) তারা বলেছে। আমাকে অবনি জিজ্ঞেস করেছিল, যাবে কী-না। আমি বলেছি যাও। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে আমিও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে নৌকার পক্ষে যাব।’

দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশারফ মিয়া বলেন,‘আমরা আওয়ামী লীগের সকলেই নৌকার পক্ষে, শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করছি। আলতাব উদ্দিন উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হয়ে এমন কাজ করতে পারেন না। আমরা তাঁর কার্যক্রমের নিন্দা জানাই।’

দিরাই-শাল্লা উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ৩০ মার্চ। ওই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়বেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফায়েজ আলী মাহবুব হোসেন।

১৩ মার্চ নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেখ জাহির আলী ও জাসদের প্রার্থী আমিনুল ইসলাম।

নির্বাচনে সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার ৪৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ  ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ২২৮ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ২৬ হাজার ২০২ জন, দিরাই ও শাল্লা উপজেলা নিয়ে সুনামগঞ্জ-২ আসনের ১৩ টি ইউনিয়নের ১১০ টি ভোটকেন্দ্রের ৫০২ টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জীবনাবাসন হওয়ায় আসনটি শূন্য হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত