নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৪:২৫

‘দলের প্রয়োজন’, তাই ৮৬ বছর বয়সেও নির্বাচনে অংশ নিতে চান অর্থমন্ত্রী

এরআগে একাধিকবার বলেছিলেন, আর নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান না। বয়স বিবেচনায় দলের অভ্যন্তরেও তাঁর বিকল্প খোঁজা হচ্ছিলো। বিকল্প হিসেবে ভাই একে আব্দুল মোমেনও প্রবাস থেকে এসে সক্রিয় হয়েছেন সিলেটের রাজনীতিতে। তবে এখন আবার মত পাল্টেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। পরবর্তী নির্বাচনেও অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সিলেটে এসে একটি জাতীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাতকারে মুহিত বলেছেন, বয়স হলেও দলের প্রয়োজনে আবারও জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেব। যতদিন সামর্থ্য আছে ততদিনই দলের জন্য কাজ করে যাব।

নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০১৯ সালের শুরুতে পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা। ১৯৩৪ সালে জন্ম নেওয়া মুহিত ২০১৯-এ ৮৬ বছরে পা দেবেন।

বয়স প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, যদি দলের প্রয়োজন হয় আমি আছি,  হ্যাঁ আমার জন্য একটু কষ্ট হবে। বয়স বাড়ছে, ইয়াং তো আর হচ্ছি না;  সুতরাং এনার্জি তো কমছে। অর্থাৎ ইফেকটিভ এনার্জি কমছে। কিন্তু যদি দেখি যে আমার দলের প্রয়োজন আছে, নিশ্চয়ই আছি। যতদিন সামর্থ্য আছে ততদিন থাকব।

এর আগে অর্থমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন- আগামী নির্বাচনে তিনি আর অংশ নিতে চান না। এর আগেই রাজনীতি থেকে অবসর নিতে চান।

এসময় রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ভরনপোষন প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, বাংলাদেশে প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণ ব্যয় সামাল দিতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ নয়, সহায়তা নিতে চায় সরকার। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাব দিলে অর্থ মন্ত্রণালয় তা সমর্থন করবে। যেহেতু আমরা রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে বসবাস করতে দেব না; তাই এই ইস্যুতে কোনো ঋণ প্রস্তাব বাংলাদেশে দেবে না। ঋণ প্রস্তাব দিলে এই সিগনাল যাবে যে, আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা করছি। এতে করে মিয়ানমারের গুণ্ডাবাহিনী গুণ্ডামি আরও বেড়ে যাবে।

জাতিসংঘের হিসাব মতে, মিয়ানমার বাহিনীর হত্যা-ধর্ষণ ও অভিযানের মুখে গত এক মাসে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর ভরণ-পোষণ নিয়ে চাপে পড়ছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় বুধবার বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আবাসিক প্রধান চিমিয়াও ফান জানান, শরণার্থীদের সহায়তায় বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনে (আইডিএ) ‘রিফিউজি ফান্ড’ নামে নতুন একটি তহবিল গঠন হয়েছে। এর পরিমাণ ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য কোনো প্রকল্প নিতে চাইলে বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক ৪০ কোটি মার্কিন ডলার বা তিন হাজার ২০০ কোটি টাকার সহায়তা দিতে প্রস্তুত।

বিশ্বব্যাংক আবাসিক প্রধানের এই প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো রোহিঙ্গাদের এখানে সেটল করতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। সো দিস ইস গুড যে, বিশ্বব্যাংক একটি সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের স্থানীয় প্রতিনিধি আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি আমাকে জানিয়েছেন নতুন একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, এর আগে এমন সহায়তা করার কোনো সুযোগ ছিল না।’ তিনি জানান, ‘ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি সহায়তা প্রস্তাব পাঠিয়েছে, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও প্রস্তাব পাঠাতে পারে। পাঠালে অর্থ মন্ত্রণালয় সমর্থন দেবে।’

বিশ্বব্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, যে কোনো দেশ নতুন এই তহবিল থেকে প্রয়োজনে তিন বছরে সর্বোচ্চ ৪০ কোটি ডলার ঋণ পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওই দেশে শরণার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি হতে হবে। বাংলাদেশে এখন শরণার্থীর সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। ফলে বাংলাদেশ এই তহবিল পাওয়ার যোগ্য।

বিষয়টি অর্থমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হলে তিনি বলেন, ‘ঋণের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় চিন্তা করতে হয়। আমরা যেহেতু রোহিঙ্গাদের এ দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে দেব না সুতরাং এ ধরনের ঋণে আমরা যাব না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঋণ চাওয়া মানে, আমরা তাদের এখানে সেটল করতে চাচ্ছি। নো, ইট উড বি এ রং সিগনাল, দেই মাস্ট গো ব্যাগ টু দেয়ার কান্ট্রি, উই ডোন্ট ওয়ান্ট টু গিভ অ্যা সিগনাল, যে আমরা তাদের এখানে সেটল করব। নো। এরকম সিগনাল পেলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুণ্ডামি আরও বেড়ে যাবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী একটি গুণ্ডা গোষ্ঠী, তারা দেশটাকে দখল করে বসে আছে। অত্যন্ত একটি সম্ভাবনাময় দেশটাকে ধ্বংস করছে ওই গুণ্ডাবাহিনী।’

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী একটি অসভ্য ও বর্বর বাহিনী। এদের হাত থেকে দেশটাকে মুক্ত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত