নিউজ ডেস্ক

৩০ জুন, ২০১৫ ০৪:১৮

শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ রওশনের

প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করারও প্রস্তাব রাখেন তিনি।

জাতীয় সংসদের সোমবারের অধিবেশনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষাখাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত; এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”

শিক্ষার মান নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেলেও পরবর্তীতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় তারা পাসও করতে পারে না।”

২০১৫-১৬ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৬ শতাংশ, বা ৩৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।

এরমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ১৭ হাজার ১০৩ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ১৪ হাজার ৫০২ কোটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের জন্য ১ হাজার ৫৫১ কোটি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের জন্য ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ‘অনেক কম’ বলেও অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেন রওশন এরশাদ।

“১২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৬ কোটি মানুষের দেশে। সাধারণ মানুষ অসুস্থ হয়ে গেলে চিকিৎসা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।”

জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পাশে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ফাইল ছবি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পাশে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ফাইল ছবি স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা করার দাবি জানিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা অপ্রতুল। আমি ২৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।”
বিশাল বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও বেশি থাকলেও বরাদ্দ কেন কম- তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন রওশন।

বাজেটে ৮৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির কথা তুলে ধরে রওশন এরশাদ বলেন, “এই ঘাটতি কীভাবে পূরণ হবে তার কোনো নির্দেশনা নেই। রাজস্ব আদায় কঠিন হবে। মোটামুটি দুঃসাধ্য হবে।”

ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর আদায়ের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “দেশে ১৩ থেকে ১৪ লাখ ব্যবসায়ী রয়েছে। আলাপ-আলোচনা করে তাদের করের আওতায় আনা গেলে রাজস্ব আদায় সম্ভব হতে পারে।”

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশন জটের কথা তুলে ধরে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করারও পরামর্শ দেন তিনি।

এ সময় সংসদে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাথায় হাত দিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা যায়। তাৎক্ষণিক রওশন বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাথায় হাত দেবেন না। আপনি বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন।”

দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “ঢাকা চট্টগ্রাম চার লেন ও চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়ক উন্নয়নের কাজ গুরুত্বসহকারে নিয়ে দ্রুত শেষ করতে হবে।”

বিনিয়োগের জন্য বিদ্যুৎ প্রয়োজনীয়তা কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সুন্দরবনের ক্ষতির অভিযোগটি বিবেচনায় নিতে হবে। পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মহেশখালীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও রূপপুর পরমাণু কেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিতে হবে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বিশাল বরাদ্দের কথা উল্লেখ করে রওশন এরশাদ বলেন, “অনেক প্রকল্প নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে খরচ বেড়ে যায়।”

ব্যাংকিং খাতের নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরে রওশন এরশাদ বলেন, “ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকিং নিয়মকানুন মেনে চলতে চান না। দিনে দিনে ব্যাংকের ওপর থেকে মানুষের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে।”

বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেন, “কৃষকরা এবার ধানের মূল্য পায়নি। গতবারও পায়নি এবং হাজার হাজার মন আলু পচে গেছে। কৃষকরা উৎপাদিত পণ্যের মূল্য না পেলে প্রবৃদ্ধি বাড়বে না।”

মোবাইল ফোনের কথা বলার ওপর করারোপের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “কম পয়সায় সাধারণ পেশার মানুষ এটি ব্যবহার করে। এখানে করারোপ করা ঠিক হয়নি।”

অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে রওশন এরশাদ বলেন, “মোবাইলের মধ্যে আপনি কর কেন বসালেন? কেউ হয়তো ২০ টাকা ভরে, কেউ হয়তো ৬০ টাকা ভরে। এভাবে তো কথা বলা বন্ধ হয়ে যাবে।”

কৃষিভিত্তিক শিল্পের ওপর কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে মহিলাদের জন্য পৃথক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, “মাছের ফার্ম, গরু-ছাগলের ফার্মের ওপর কর ধরেছেন। এটা ঠিক না। জরিপ করে দেখেন। যার ওপর কর আরোপ করা দরকার, তার ওপর ধরবেন। ঢালাওভাবে এদের ওপর করারোপ করবেন না।”

মুক্তিযোদ্ধাদের সবাইকে একই হারে ভাতা দেওয়ারও দাবি জানান রওশন এরশাদ।

তিনি বলেন, “বীরঙ্গনা শব্দটি উঠিয়ে ফেলতে হবে। বীরঙ্গনা শুনলেই অন্যরকম চিন্তা উঠে আসে। যাদের বীরঙ্গনা বলি তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা বলতে হবে। তারা তো মুক্তিযুদ্ধের জন্যই নিগৃহীত হয়েছে।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত