নিউজ ডেস্ক

১৬ জানুয়ারি, ২০১৫ ১৮:২৪

এবার খালেদাকে পদত্যাগের আল্টিমেটাম ‘আসল বিএনপির’


আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পদত্যাগ না করলে পরদিন হাজারো নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে তার নেতৃত্বের সমাপ্তি ঘটানোর হুমকি দিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব বলেন কামরুল হাসান নাসিম।

এই সংবাদ সম্মেলনে নাসিম ছাড়া অন্য কোনো নেতা উপস্থিত ছিলেন না। শুধু কয়েকজন কম বয়েসী সহকর্মীকে দেখা যায় সেখানে।

এর আগে গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর অন্য একটি হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপিকে অবৈধ ঘোষণা করে জিয়াউর রহমানের ‘আদর্শের বিএনপিকে’ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন কামরুল হাসান নাসিম।

দ্বিতীয় এ সংবাদ সম্মেলনে তিন সপ্তাহের কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন তিনি।

নিজেকে একজন সাংবাদিক, গবেষক, টক শো উপস্থাপক ও রাজনীতিক পরিচয় দিয়ে নাসিম বলেন, “আগামী ৩০ জানুয়ারি সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে রাজধানীতে একটি অর্থবহ সমাবেশ করা হবে।

“যদি আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া পদত্যাগসহ সব কমিটি ভেঙে না দিয়ে স্বপদে বহাল থাকেন, তবে আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি জিয়ার আদর্শে অনুরণিত মহানগরীর সকল পর্যায়ের ১৭০০ নেতাকর্মী সমেত খালেদা জিয়াকে পদত্যাগের জন্য তিনি যেখানেই থাকুক না কেন শিষ্টাচার রেখেই তার বরাবর পৌছানো ও অবৈধ নেতৃত্বের পরিসমাপ্তি নিশ্চত করা এবং জিয়ার বিএনপিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্যেগ নেওয়া হবে।”

আগামী ১৫ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে প্রায় সব গ্রহণযোগ্য নেতাদের তার পাশে দেখা যাবে বলে দাবি করেন নাসিম।

“নেতৃত্বে চমক থাকবে। তবে কৌশলগত কারণে তাদের নাম বলা যাবে না,” বলেন তিনি।

পরবর্তী সাংগঠনিক কার্যক্রমের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “দলের প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি সমর্থক যেভাবে আছেন সেভাবেই থাকবেন। আগামী ৬ মাসের মধ্যে দলের সব পর্যায়ের কাউন্সিলে নেতৃত্ব উঠে আসবে, কেন্দ্রীয় কাউন্সিল জুনের মধ্যে সেরে ফেলা হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে ১০ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য পড়তে শুরু করেন নাসিম। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের অনুরোধে এই বক্তব্যকে ‘পঠিত বলে গণ্য’ হয়েছে বলে তিনি প্রশ্ন-উত্তর পর্বে চলে যান।

বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব দলকে জঙ্গিবাদ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের দিকে ঠেলে দিচ্ছে অভিযোগ করে নাসিম বলেন, “দলের এ ক্রান্তিলগ্নে আমি এক মুখপাত্র মাত্র।”

‘নবধারার কার্যত আসল বিএনপি’ঘোষণা করেন নাসিম।

“দলটির ক্রান্তিলগ্নে ও অসুস্থতাকে ঠিক করতে আমি চিকিৎসক।”

বিএনপি কি তার কাছে চিকিৎসা চেয়েছে- সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, “বিএনপি আমাকে ডাকবে কেন? সকল পর্যায়ে কথা বলেই আমি সামনে এসেছি, আমি একা নই।”

জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করে আপনি কোন পর্যায়ে যেতে চাচ্ছেন- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, “কে সাধারণ থেকে অসাধারণ হবে তা সময় বলে দিবে, রাষ্ট্রযন্ত্র যে চালাতে পারবো না-সে ধারণা ভুল হবে।”

বিএনপির আর কোন কোন নেতা সঙ্গে থাকবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাই আসবে, কৌশলগত কারণে তা বলা যাবে না।

“অনেক জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক করা হচ্ছে।”

স্থায়ী কমিটি থেকে এসব সিদ্ধান্ত আসছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যখন আর্মি ‘ক্যু’ হয় তখন আসে মিড লেভেল থেকে, তবে আমি কোন ‘ক্যু’ করেনি। অনেক সময় ‘ক্যু’ জাতিকে এগিয়েও নিয়ে গেছে।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাসিম বলেন, “কামরুল হাসান নাসিম-আমি অতি সাধারণ হলেও রাজনৈতিক সংগ্রামী জীবন রয়েছে।

“বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার আমার অনেক ফর্মুলা নিয়েছে, বিএনপিকেও দিয়েছি। যখন দেখছি আর সম্ভব হচ্ছে না, জিয়াউর রহমানের শেকড় অন্যায়ভাবে চলে যাচ্ছে তাই এ উদ্যোগ।”

তার এই বিএনপির আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে নাসিম বলেন, “বিএনপি নেতা-কর্মীর অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অনেক রাজনৈতিক দলই বিদেশি সাহায্যে চলে, বিএনপি কোনো এজেন্সির দ্বারস্থ হয়নি বা কোনো এজেন্সি বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টাকায় এটি আসেনি।”
তাদের প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা জানতে চাইলে অপকটে নাসিম বলেন,  “কার্যালয় নয়া পল্টন ও গুলশানে। ওইখানে আমাকে পাওয়া যেতেই পারে।”

কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়া অভিজাত হোটেলে কেন সংবাদ সম্মেলন করছেন-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ধরেন আপনের একটা জায়গা আছে তবে তা সন্ত্রাসীদের দখলে রয়েছে, তখন আপনার অন্য জায়গায় সংবাদ সম্মেলন করতে হবে।”

নয়া পল্টন কার্যালয় কি সন্ত্রাসীদের দখলে- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে  নাসিম বলেন, “নয়া পল্টনে কেউ যাচ্ছে না, গুলশান কার্যালয় মহিলা দলের দখলে। তবে নয়া পল্টনে যাওয়ার আমার অ্যাবিলিটি আছে।”

নতুন বিএনপি যদি সফল হয় এবং সরকার যদি মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয় তাহলে কোন প্রতীকে নির্বাচন করবেন জানতে চাইলে নাসিম বলেন, “চেষ্টা করে যাব নেতৃত্ব সংস্কারের, সংস্কার হলে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করব।” 


আপনার মন্তব্য

আলোচিত