নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ অক্টোবর, ২০১৫ ২৩:২৯

‌‘সিন্ডিকেটের প্রভাবে’ সমন্বয়হীন মহানগর ছাত্রলীগ, আড়াই মাসেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি

আড়াই মাস আগে গঠন করা হয়েছিলো সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি। এই সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন দূরে থাক নিজেদের মধ্যে একবার বসতেও পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতা। পদপ্রাপ্ত নেতারা বিভিন্ন সিন্ডিকেট থেকে উঠে আসায় এমন সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে বলে দাবি মহানগর ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতার।

এই সমন্বয়হীনতার কারণে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগে বিরাজ করছে স্থবিরতা। নেই কোনো কর্মসূচীও। আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ না থাকায় পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ।

তবে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল বাসিত রোম্মান জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পর মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।

দীর্ঘ ৪ বছর পর গত ৪ জুলাই সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন সম্মেলনে কমিটি ঘোষণা না করেই তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ঢাকা ফিরে যান। পরে ২০ জুলাই ঢাকা থেকে সিলেট মহানগর কমিটির চার সদস্যের নাম ঘোষণা করেন তখনকার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম।

নতুন কমিটির সভাপতি হন আব্দুল বাসিত রুম্মান এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার। সাংগঠনিক সম্পাদক হন সজল দাস অনিক এবং সৈকত চন্দ্র রিমি। তখন কথা ছিলো শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কিন্তু প্রায় আড়াই মাস পার হয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটির দেখা নেই। এমনকি দায়িত্বপ্রাপ্ত চার নেতা একসাথে বসে কোন বৈঠকও করতে পারেন নি এখন পর্যন্ত।

এক বছরের জন্য দায়িত্ব পেয়ে আড়াই মাসেও কোন কার্যক্রম শুরু করতে না পারায় ক্ষোভ বাড়ছে তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে।

অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা একেকজন সিলেট ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণকারী একেক গ্রুপের নেতা হওয়ার কারণে তাদের মধ্যে রয়েছে সমন্বয়হীনতা।

মহানগর ছাত্রলীগের নতুন সভাপতি দর্শন দেউড়ি গ্রুপের ও মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ গ্রুপের অনুসারী। আর দুই সাংগঠনিক সম্পাদক যথাক্রমে বিধান সাহা ও পিযুষ কান্তি দে গ্রুপের অনুসারী। চার নেতা চার গ্রুপের হওয়ায় দেখা দিয়েছে সমন্বয়হীনতা।

সিলেটের ছাত্রলীগের রাজনীতি মূলত নিয়ন্ত্রণ করে আসছে চারটি গ্রুপ। এই চার গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন ৫ আওয়ামী লীগ নেতা। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের নেতৃত্বাধীন তেলিহাওর গ্রুপ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের নেতৃত্বাধীন দর্শন দেউড়ি গ্রুপ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ এবং যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক রনজিত সরকারের নেতৃত্বাধীন টিলাগড় গ্রুপ ও উপ দপ্তর সম্পাদক বিধান কুমার সাহার নেতৃত্বাধীন কাশ্মীর গ্রুপই এতোদিন নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলো ছাত্রলীগ। জেলা ও মহানগর কমিটির পদ-পদবিও এই চারগ্রুপের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করা দেওয়া হয়। তবে নব গঠিত মহানগর কমিটিতে উত্থান ঘটে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পিযুষ কান্তি দে গ্রুপের।

সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিন্ডিকেটের জোরেই মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির পদ পদবি পেয়েছন শীর্ষ নেতারা। তবে পদ পাওয়ার পর দেখা দিয়েছে সিন্ডিকেট কেন্দ্রীক বিভাজন। তাই দায়িত্বপ্রাপ্তরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। ফলে থমকে আছে ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির সিলেট মহানগরের কার্যক্রম। আগস্ট মাসে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নানান কর্মসূচিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাইকে কোন কর্মসূচিতেই একসাথে পাওয়া যায়নি। এভাবে চলতে থাকলে মহানগর ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা করেন সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করলেন মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম তুষারও। সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন - "কমিটিতে কথিত সিন্ডিকেট প্রভাব রয়েছে তবে আমরা যারা সিন্ডিকেটের বাইরে থেকে এসেছি তারা চেষ্টা করছি একসাথে বসার।" এটাকে অবশ্য বড় সমস্যাও মনে করেন না তিনি।

বৈঠক না হওয়া প্রসঙ্গে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল বাসিত রুম্মান বলেন- '"যেহেতু আপাতত কোন কর্মসূচি নেই তাই বৈঠক করারও দরকার পড়ছে না।" আনুষ্ঠানিক বৈঠক না হলেও অনানুষ্ঠানিক ভাবে তারা মিলিত হন বলে জানান তিনি।

দায়িত্ব পাওয়ার দীর্ঘ আড়াইমাস হয়ে গেলেও কেন এখনো পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল বাসিত রুম্মান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন - "নব গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় সিলেট মহানগরের পূর্নাঙ্গ কমিটি দেয়া যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও দেয়া হবে।"

গত ২৬ জুলাই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন সাইফুর রহমান সোহাগ এবং এস এম জাকির হোসাইন। যদিও এর আগেই দায়িত্ব পাওয়া সিলেট মহানগর কমিটি নেতারা এখনো তাকিয়ে আছেন নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির উপর।

পূর্নাঙ্গ কমিটি করতে কেন এই বিলম্ব জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম তুষার বলেন- শোকের মাস আগস্টে আমাদের সংগঠন গোছানোর সুযোগ পাওয়া যায়নি তবে নির্ধারিত ৪ মাস শেষ হবার আগেই আমরা পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত