সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

১৬ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ২২:০১

যমুনা বাঁচাতে সিরাজগঞ্জে গ্রামীণ নাগরিক সভা

তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র বেসিনের বিভিন্ন জেলার নদীপাড়ের মানুষের সাথে ধারাবাহিক মতবিনিময় সভার অংশ হিসাবে তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার যমুনা নদী পাড়ে 'যমুনা নদী ও নদী পাড়ের জীবন' শীর্ষক গ্রামীণ নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টায় এ নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

যমুনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে বিপর্যস্ত সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ভাট পিয়ারী গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এই সভা আয়োজন করে ইন্টারন্যাশনাল রিভার নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ব্ল প্ল্যানেট ইনেশিয়েটিভ, রিভারাইন পিপল ও সলিডারিটি।

ফুলজোড় নদী রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক সাংবাদিক দীপক কুমার করের সঞ্চালনায় গ্রামীণ নাগরিক সভায় সভাপতিত্ব করেন ভাটপিয়ারী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মোঃ শুকুর মাহমুদ খান। সভায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ ও নদী আন্দোলনের সংগঠক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর জাতীয় পরিষদ সদস্য ও বাপা সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, ছোনগাছা ইউনিয়নের চরম ক্ষতিগ্রস্থ চার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমির হোসেন, তারিকুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, আব্দুল ওহাব টুলু, স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন মুক্তজীবন-এর সাধারন সম্পাদক খোরশেদ আলম, ভাটপিয়ারী সরকারি মডেল প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক সুরাইয়া খাতুন, রোকসানা খাতুন, এনজিওকর্মী হোসনে আরা, রোজিনা খাতুন প্রমুখ।

নাগরক সভায় আব্দুল করিম কিম বলেন, তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র বেসিনের অন্যতম নদী যমুনা। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্লোগান ছিল, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা। আজ এই যমুনা তার ঠিকানা হারাতে বসেছে। শুস্ক মৌসুমে পানির অভাবে যমুনায় ধুধু বালুচর আর বর্ষায় প্রলয়ঙ্করী ভাঙ্গন নদী পাড়ের মানুষের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সারা দেশেই নদ-নদীগুলো আজ বিপন্ন। একদিকে উজানে ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহার, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ অপরিকল্পিত নদীশাসন, নদী দখল-দূষন। এ অবস্থায় দেশব্যাপী নদী রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।

সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, ২২ বছর ধরে যমুনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে যমুনা নদী পাড়ের মানুষ ও গৃহপালিত প্রাণির জীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত। নদীর গভীরতা ১৫০ থেকে ২০০ফুটের স্থলে ১০ থেকে ১৫ ফুটে দাঁড়িয়েছে। নদী ভাঙ্গন এলাকায় কোন কোন স্থানে নদীর প্রস্থ ৬/৭ কিলোমিটারের স্থলে ১৫/১৬ কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। পানির প্রবাহ সাম্প্রতিক সময়ে হ্রাস পাওয়ায় মাছের প্রাকৃতিক প্রজননও কমে গেছে। যমুনা নদীর সাথে মানুষের জীবন ও জীবিকার যে নিবিড় সম্পর্ক ছিল তা বদলে যাচ্ছে। পরিবেশ এখন চরম ভাবাপন্ন। পরিবর্তিত হচ্ছে জলবায়ু। এ অবস্থায় যমুনা নদী ও নদীপাড়ের মানুষ ও বসতী রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী।

স্থানীয় বক্তারা নদীতীরের সাধারণ মানুষেরা অতীত-বর্তমানের জীবনযাত্রা, চলমান সঙ্কট ও সম্ভাবনার চিত্র তুলে ধরেন। তাঁরা সরকারের কাছে পরিবেশবান্ধব ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহন করে জনদুর্ভোগ লাঘবে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মোঃ শুকুর মাহমুদ খান বলেন, ষাটের দশকে যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সিরাজগঞ্জ জেলখানা থেকে বগুড়ার সারিয়াকান্দি পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ঐ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে সংযোগ খালের মুখে স্লুইস গ্রেট স্থাপন করা হয়েছিল। পানির প্রবাহ ব্যাপক বৃদ্ধি পেলে স্লইসগেটগুলো খুলে দেয়া হতো। ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণ হতো মাঠে চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনমত পানিও সরবরাহ পাওয়া যেত। এক পর্যায়ে সেই বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার পর যথাযথভাবে মেরামত না করে নতুন করে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র বাঁধ নির্মাণ করায় সরকারের বিপুল অর্থ নষ্ট হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে ওসব বালির বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় গ্রামের পর গ্রাম হাজার হাজার বসতবাড়ি আর লাখ লাখ একর আবাদি জমি বাগান বাড়ি যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকায় স্থায়ী বাসিন্দা ছিল প্রায় ৫২ হাজার। বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার লোক পৈতৃক ভিটেমাটি হারা হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এক সময় যারা বড় জোতদার ছিলেন তাদের অনেকেই ভয়াবহ যমুনা ভাঙ্গনের কারণে রাতরাতি পথের ভিখারী হয়ে গেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত