স্পোর্টস ডেস্ক

১৮ জুন, ২০১৬ ০০:৩৫

ঢাকা লীগে ভারতীয়দের জয়জয়কার

এক সময় বাংলাদেশের ক্রিকেট লীগে বিদেশি বলতেই ছিল পাকিস্তানিদের আধিক্য। কম পারিশ্রমিক, আর দলগুলোর অত্যধিক পাকিস্তানপ্রীতির কারণে ঢাকা লীগ মানেই ছিল পাকিস্তানিদের জয়জয়কার, কিন্তু সেটা এবার পালটে গেছে অনেকটাই। এবারের ঢাকা লীগে এখন পর্যন্ত ভারতীয় ক্রিকেটারদের মেলা বসেছে এমনটাই বলা যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের ক্রিকেট অবকাঠামো ভেঙে পড়া, আন্তর্জাতিক ম্যাচে সাফল্য না পাওয়া এবং পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের খেলা নিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পড়ার কারণে ঢাকা লীগের দলগুলো পাকিস্তানিদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। জানা যায়, এখন পর্যন্ত লীগে পাকিস্তানি একজন খেলোয়াড়ের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। অপরদিকে ভারতীয়দের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা এখন পর্যন্ত ২৩। এর বাইরে শ্রীলংকার ৯ জন এবং জিম্বাবুয়ের ২ জন খেলোয়াড়ের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন  হয়েছে।
 
জানা যায়, ঢাকা লীগ খেলার জন্য পাকিস্তানের শোয়েব মালিক, উমর আকমল আর আহমেদ শেহজাদও বেশ কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন; কিন্তু কোন দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া তারা পান নি।

নিয়ম অনুযায়ি একাধিক বিদেশি খেলোয়াড় রেজিস্ট্রেশন করাতে পারলেও ম্যাচে একজনই খেলাতে পারবে দলগুলো। তবু এবারের লীগে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭ জন বিদেশি খেলোয়াড় রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে আবাহনী লিমিটেড, এদের আবার সবাই ভারতীয় ক্রিকেটার।

এবার সবচেয়ে বেশি বিদেশি খেলিয়েছে আবাহনী। যার মধ্যে প্রত্যেকেই আবার ভারতীয়। শুধু ভিক্টোরিয়াই একজন লংকানে ভরসা রেখে গেছে_ লংকান বোলার চতুরাঙ্গা ডি সিলভা মোট ১৩টি ম্যাচ খেলে ২৮ উইকেট শিকারে এই মুহূর্তে শীর্ষে আছেন।

আবাহনীর হয়ে শুরুতে চারটি ম্যাচ খেলেছেন ভারতের হিমাচল প্রদেশের উইকেটকিপার কাম ব্যাটসম্যান উদয় কাউল। এরপর হরিয়ানার মনবিন্দার বিসলা খেলে গেছেন ধানমণ্ডির ঐতিহ্যবাহী এ দলটিতে। আইপিএল থেকে সাকিব আসার পর তিনিই নিয়ে এসেছিলেন একসময় কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলা মনোজ তিওয়ারিকে। একটি ম্যাচ বাদে রজত ভাটিয়াও খেলে গেছেন। তারপর ইউসুফ পাঠান আর এ মুহূর্তে আছেন দিনেশ কার্তিক।

ঢাকা লীগে এত ভারতীয় কিভাবে? জানা যায়, ভারতীয় বোর্ড তাদের ক্রিকেটারদের বিশ্বের কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ খেলার অনুমতি দেয় না। তবে সম্প্রতি তাদের ক্রিকেটারদের অন্য দেশের লিস্ট 'এ' ম্যাচ খেলার অনুমতি দিচ্ছে। সে কারণেই ঢাকা লীগে এবার ভারতের তারকা ক্রিকেটারদের বেশি দেখা যাচ্ছে। ঢাকা লীগে খেলার ব্যাপারে ভারতীয় বোর্ড থেকেই সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।

এবারে দুই জিম্বাবুইয়ান খেলে গেছেন ঢাকা লীগ। কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের হয়ে শুরুর দিকে হ্যামিলটন মাসাকাদজা সাতটি ম্যাচ খেলেছেন। আর ব্রাদার্সের হয়ে শন উইলিয়ামস খেলে গেছেন ৪টি ম্যাচ। ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রে খেলেছেন কেরালার রোহান প্রেম আর হিমাচল প্রদেশের পরাস দোগরা। দোলেশ্বরের হয়ে রাজস্থানের অশোক মেনোরিয়া খেলেছেন। এরপর সুপার লীগে এই ক্লাবের হয়ে ব্যাঙ্গালুরু রয়্যালসের শচিন বেবি খেলছেন।

প্রাইম ব্যাংকের হয়ে তিন ম্যাচ খেলে গেছেন ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সাবেক অধিনায়ক উন্মুক্ত চাঁদ, তারও আগে দুই ম্যাচ খেলেছেন শচিন রানা। মোহামেডানের হয়ে বিপুল শর্মা দুটি ম্যাচে মোট ১৩৪ রান আর ৪টি উইকেট শিকার করে গেছেন। এ ছাড়া মিঠুন মানহাস এসেছিলেন মোহামেডানের হয়ে খেলতে। ব্রাদার্সের হয়ে দিল্লির মিলিন্দ কুমার চার ম্যাচ খেলেছেন। রূপগঞ্জের হয়ে আসন প্রিয়ঞ্জন, জালাজ সাক্সেনা আর ইশাঙ্ক রাজিব খেলে গেছেন। তবে সুপার লীগে এই দলে এসে আইপিএলের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার পবন নেগি দুটি ম্যাচেই বাজিমাত করেছেন।

গাজী ট্যাংকের হয়েও খেলেছেন পাঞ্জাবের গুরকিরত সিং। এরপর পুনিজ বিসত একটি ম্যাচ খেলেছেন এই ক্লাবের হয়ে। কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমির হয়ে সাত ম্যাচ খেলেছেন মধ্যপ্রদেশের জতিন সাক্সেনা। একমাত্র পাকিস্তানি হিসেবে সাঈদ আনোয়ার জুনিয়র খেলেছেন গাজী ট্যাংক ক্রিকেটার্সের হয়ে।

পারফরম্যান্সের বিচারে ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে ঢাকা লীগে সফল হয়েছেন মোহামেডানের বিপুল শর্মা। ম্যাচজয়ী একটি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। রূপগঞ্জের পবন নেগিও দুটি ম্যাচে অপরাজিত থেকে মোট ১৫২ রান করেছেন এবং ৪টি উইকেট পেয়েছেন। দোলেশ্বরের শচিন বেবি দুই ম্যাচে মোট ২৩ রান করেছেন। কলাবাগান একাডেমির জতিন সাক্সেনা সাত ম্যাচে ২৩০ আর ৭ উইকেট পেয়েছেন। আর শুরুর দিকে আবাহনীর হয়ে খেলা উদল কাউল চার ম্যাচে করেছেন ১৬৯ রান। ইউসুফ পাঠান দুই ম্যাচে ৬৮, রজত ভাটিয়া ২ ম্যাচে ১১৫, বিসলা দুই ম্যাচে ৫০ রান করে গেছেন আবাহনীর হয়ে।

শুধু সিসিএস এই আসরে কোনো বিদেশি ক্রিকেটার খেলায় নি। গাজী ট্যাংক ক্রিকেটার্স তিন ম্যাচে দু'জন বিদেশি খেলিয়েছে মাত্র। রূপগঞ্জও বিদেশি ক্রিকেটারদের ওপর খুব বেশি নির্ভর করেনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত