নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ মার্চ, ২০১৫ ০১:০৯

প্রার্থনায় বাংলাদেশ, আজ হোক আরেকটি উৎসবের দিন

আজকে সকালে যে সূর্যটা আকাশে জ্বলজ্বল করবে তা অন্য দিনের মতোই। আজকের আকাশ, এই চৈত্রের রোদ সবই একই রকম। অন্যান্য দিনের মতোই। তবু আজকের দিনটা হয়ে উঠতে পারে অন্যরকম। আজকের দিনটা বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠতে পারে বিরাট এক উৎসবের উপলক্ষ্য।

উৎসবের প্রস্তুতি মোটমুটি দেশজুড়েই সম্পন্ন করে ফেলা হয়েছে। বড় পতাকা প্রস্তুত, পটকার ওর্ডার দিয়ে রাখা, রংয়ের জোগারযন্ত্রও করে রেখেছেন অনেকে। মোটরসাইকেলওয়ালাদেরও বলে দেয়া হয়েছে, জিতলেই মিছিল। জিতলেই উৎসব।

টাইগার ভক্তদের জন্য বুধবার রাতটা হয়ে উঠেছে দীর্ঘতম রাত। কিছুতেই যেনো কাটতে চায় না এই রাত। অধীর অপেক্ষায় রাত ভোর হওয়ার অপেক্ষা। দম আটকে আসার মতো টেনশন। অপেক্ষা, টেনশনও কখনো কখনো আনন্দের হয়ে উঠে। এই অপেক্ষার মধ্যে একটা আত্মতৃপ্তি আছে। গর্ববোধ আছে। আছে আরো উচ্চতায় উঠার হাতছানি।

আজ মেলবোর্নে খেলবে মাশরাফিরা। স্বপ্নের কোয়ার্টার ফাইনালে মাঠে নামবে ১১ বীর। আর পুরো বাংলাদেশ আজ প্রার্থনারত। একটি জয়ের প্রত্যাশায় পুরো জাতি।

ভারত গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ান। এই বিশ্বকাপে এখনো পর্যন্ত অপরাজিত। শিরােপার অন্যতম প্রত্যাশী। শক্তিমত্তার বিচারে ভারতই এগিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশ তো এবার ক্রিকেটীয় সকল সমীকরণকে উলাটপালট করেই চলছে। প্রত্যাশার চেয়েও ভালো খেলে চলছে মাশরাফিবাহিনী। দলের আত্মবিশ্বাসও তুঙ্গে।

দলের এই পারফরমেন্স, প্রতিটি খেলোয়াড়ের 'জিততে পারি' এই বিশ্বাস আশাবাদী করে তুলেছে সমর্থকদের। ফলে আরেকটি ভারত বধ দেখার অপেক্ষায় ১৬ কোটি বাংলাদেশী।

মাঠে যেতে পারছেন না ঠিকই কিন্তু সবাই নিজেদের অবস্থান থেকে শুভেচ্ছা-শুভকামনা জানাচ্ছেন দলকে। আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতাকা মিছিলও হলো। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লড়াই তো চলছে কয়েকদিন ধরেই। পারলে যেনো মাঠেই নেমে পড়েন ফেসবুকের টাইগার ভক্তরা। সেটা যেহেতু হচ্ছে না, তাই এই বিশ্বকাপের অজেয়, এখন পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য ভারতকে হুংকার দেওয়া চলছেই- তোমারে বধিবে যে গো্কূলে বাড়িছে সে।

এমন হুংকার টাইগার ভক্তরা দিতেই পারেন। এবারের বিশ্বকাপে তো গোকূল থেকেই এক এক জন ত্রাতা হাজির হচ্ছেন বাংলাদেশ দলে।
ভাবুন মাহমুদুল্লাহর কথাই। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের পক্ষে খেলে যাচ্ছেন। খেলছেন তো খেলছেন। কিন্তু তাকে নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। সমালোচনাই আছে বরং। অথচ এই বিশ্বকাপে কী খেলাই না দেখাচ্ছেন মাহমুদ্দুল্লাহ। টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরী। প্রতিপক্ষকে একাই বধ করে চলছেন।

কিংবা বলা যেতে পারে সৌম্য-সাব্বিরের কথা। এই বিশ্বকাপের আগে দেশের ক'জনই বা জানতো তাদের নাম। অথচ এই বিশ্বকাপে দেখুন। যেনো সবার অলক্ষ্যে, লোকচক্ষুর অন্তরালে গোকূলেই বেড়ে উঠেছেন এরা।

এভাবে একেক জনের কথা আলাদাভাবে বলার কী দরকার। পুরো দলটার কথাই ভাবুন না! আগের একবছর যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স। তারউপর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধ কন্ডিশন। কে গোণায় ধরেছিলো বাংলাদেশকে। ক্রিকেট কুলিনরা তো তাচ্ছিল্যই করেছিলো। দেশের অনেক সমর্থকরাই তো ভয়ে ভয়ে ছিলেন, ওল্টো স্কটল্যান্ড-আরব আমিরাতের সাথে হেরে লজ্জ্বায় ডুবতে হয় কী না।

অথচ বিশ্বকাপ শুরুর পর দেখা গেলো উল্টো চিত্র। কোন এক জিয়ন কাঠির ছোয়ায় রুপকথার গল্পের মতোই বদলে গেলো বাংলাদেশ। অবাক করা পারফরম্যান্সে মুগ্ধ করছে দর্শকদের। সমালোচকরাো এখন দলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ক্রিকেট বোদ্ধাদেরও সমীহ আদায় করে নিয়েছে এই দল। এমন দলকে নিয়ে তো বাজি ধরাই যায়। এমন দলের জন্য তো উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়াই যায়।

তবে খেলার আনন্দের পাশাপাশি করুণ দিকটা হলো এই শেষপর্যন্ত একদলকে হারতেই হয়। বাংলাদেশী সমর্থকরা চাইবেন এই দলটা যেনো বাংলাদেশ না হয়। যেনো জয় নিয়েই বীরের বেশে মাঠ ছাড়ে মাশরাফি বাহিনী।

খেলার ফলাফল যাই হোক, বাংলাদেশর ক্রিকেটাররা কিন্তু এরমধ্যে সমর্থকদের হৃদয় জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। তবে ক্রিকেটারদের বড় জয় বোধহয় অণ্যখানে। রাজনৈতিক মতভেদে দ্বিদ্বাবিভক্ত হয়ে পড়া একটা জাতিকে এই ক্রিকেটারার আবার ঐক্যবদ্ধ করে তুলেছেন। বিনি সুতোর মালায় গেথেছেন।
রাজনৈতিক সংঘাতে জর্জরিত, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের আনন্দে ভাসিয়েছেন। উৎসবে মাতিয়েছেন। এবং চলমান হত্যা-সন্ত্রাসে দেশ নিয়েই হতাশ হয়ে পড়া অনেককে নতুন করে আশা দিয়েছেন। স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এটাই বাংলাদেশের এই দলটির সবচেয়ে বড় জয়। একটি ক্রিকেট টিমের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশী আর কী চাওয়ার থাকতে পারে! আ্র আজকে জিতে গেলে তো সেটা একেবারে সোনায় সোহাগা।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত