স্পোর্টস ডেস্ক

১০ জুলাই, ২০১৬ ১৩:০১

তিন ফরাসি পর্তুগাল দলে!

২০১৪ সালে স্তাদ দো ফ্রান্সে অদ্ভুত এক সমস্যায় পড়েছিলেন আদ্রিয়েন সিলভা। ফ্রান্স-পর্তুগাল প্রীতি ম্যাচ।

পর্তুগালের জাতীয় সংগীত মাত্রই শেষ হলো। তাতে কণ্ঠ মিলিয়ে ডাগ-আউটে নিজের জায়গায় বসতে না-বসতেই বেজে উঠল ‘লা মার্শেইজ’। কোনো ভাবনাচিন্তা ছাড়াই মনে মনে সিলভা গাইতে লাগলেন ফ্রান্সের জাতীয় সংগীতও।

পর্তুগালের লাল জার্সিটা বেছে নিলেও তাঁর শরীরে যে বইছে ফ্রেঞ্চদের ‘নীল’ রক্ত! সিলভা একা নন, ইউরোর পর্তুগিজ স্কোয়াডে এমন আরও দুজন আছেন যাঁরা অর্ধেক ‘ফরাসি’। সিলভার মতো লেফটব্যাক রাফায়েল গুরেইরো ও গোলকিপার অ্যান্থনি লোপেসেরও জন্ম ফ্রান্সে।

তাহলে তাঁরা পর্তুগালের হয়ে গেলেন কীভাবে? বাবার সূত্রে। তিনজনেরই মা ফরাসি হলেও বাবা পর্তুগিজ।

ফাইনালের ভেন্যু যে স্তাদ দো ফ্রান্স, সেখান থেকে খানিকটা দূরেই জন্ম ২২ বছর বয়সী গুরেইরোর। ফুটবলে ক্যারিয়ার গড়েছেনও ফ্রান্সেই, তবু আজ ‘প্রায় ঘরের মাঠে’ খেলবেন জন্মভূমির বিপক্ষে। সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়টাও স্মরণ করলেন ফাইনালের আগে, ‘আমি পর্তুগালকে বেছে নিয়েছি, এটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমার মত বদলানোর কোনো চেষ্টা করেনি আমার পরিবার।’ এতে ফ্রান্সের ক্ষতি হলো কি না, সেই আলোচনায় না গিয়েও পর্তুগালের যে লাভ হয়েছে, তা বলে দেওয়াই যায়। সেমিফাইনালে রোনালদোর গোলটি তো গুরেইরোর ক্রস থেকেই।

লোপেসের গল্পটাও গুরেইরোর মতোই। জন্ম, বেড়ে ওঠা, ক্যারিয়ার সবকিছুই তাঁর ফ্রান্সে। তবু ১৭ বছর বয়সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, খেলবেন বাবার জন্মভূমির হয়েই। অনূর্ধ্ব-১৭ দল দিয়ে শুরু করে সবগুলো বয়সভিত্তিক পার করে ঢুকেছেন জাতীয় দলে। পর্তুগিজ দলের তিন ‘ফরাসি’র মাঝে ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি পরিচিত লোপেসই। সেই পরিচিতি অলিম্পিক লিঁও’র গোলকিপার হিসেবে। এই ইউরোতে ফ্রান্সের অধিনায়ক হুগো লরিস টটেনহাম হটস্পারে চলে যাওয়ার পর তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করতে লোপেসকে একাডেমি থেকে মূল দলে নিয়ে এসেছিল লিঁও। ফ্রেঞ্চ লিগের অন্যতম সেরা গোলকিপার, তবে এবারের ইউরোতে এখনো মাঠে নামা হয়নি তাঁর। গোলপোস্টে কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের প্রথম পছন্দ স্পোর্টিং লিসবনের রুই প্যাত্রিসিও। ফাইনালেও বেঞ্চেই থাকার কথা ২৫ বছর বয়সী লোপেসের।

সিলভা অবশ্য ফ্রান্সকে বিদায় বলেছেন বেশ আগে। ১২ বছর বয়সেই পর্তুগালে চলে গেছেন। যোগ দিয়েছেন স্পোর্টিং লিসবনের একাডেমিতে। তবে ফুটবলে শুরুটা তো ফ্রান্সেই। নানা বিতর্কে জড়িয়ে ফ্রান্স দল থেকে বাদ পড়া ম্যাথু ভালবুয়েনার সঙ্গে বোর্দোর যুব প্রকল্পে খেলেছেন। ফ্রান্সের প্রতি মমতা তাই এখনো আছে। তবে অনেক দিনই তিনি মনেপ্রাণে পর্তুগিজ, ‘আমার হৃদয়ে ফ্রান্স অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান দখল করে আছে। কিন্তু ১২ বছর বয়স থেকে আমি লিসবনে থাকি। আমার বউ-বাচ্চা পর্তুগিজ। আমি এখন অনেক বেশি পর্তুগিজ।’ আজ এই তাঁর পর্তুগিজ রূপই চাইবেন কোচ, গ্রুপ পর্বে কোনো ম্যাচ না খেললেও নকআউট পর্বে তিন ম্যাচেই ছিলেন প্রথম একাদশে। ফাইনালেও তা-ই থাকার কথা।
সূত্র: এএফপি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত