ক্রীড়া প্রতিবেদক

২৪ অক্টোবর, ২০১৬ ১০:৩৬

টেস্টে আরও এক আক্ষেপের হার

পারল না বাংলাদেশ। দরকার ছিল ৩৩ রান। নিতে পারল মাত্র ১০ রান। জিততে জিততে চট্টগ্রাম টেস্ট ইংল্যান্ডের কাছে হেরে গেল ২২ রানে। আগের দিনের ২৫৩ রান নিয়ে খেলেতে নেমে ২৬৩তে গুটিয়ে গেল সবাই। ফলে ২৮৬ রানের লক্ষ্যকে কাছে থেকেও মনে হল অনেক দূরের তারা।


সাধারণত লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের স্ট্রাইকে না রেখে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা বেশি স্ট্রাইক নিয়ে খেলেন। কিন্তু সাব্বিরকে দেখা গেল একেবারেই ভিন্নভাবে। তিনি তাইজুলকে আগলে রেখে খেলার চেষ্টা করলেন না। স্টুয়ার্ড ব্রডের করা দিনের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে উল্টো তাইজুল ১ রান দিয়ে পরের পুরো ওভার খেলতে স্ট্রাইকে এলেন। এটাই হয়ে গেল আত্মঘাতি। বেন স্টোকসের স্ট্যাম্পে থাকা বলে পা লাগিয়ে খেলতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়লেন। আম্পায়ার ধর্মসেনা আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সাফল্য পান স্টোকস। এক বল পরই শফিউল পড়েন একই ফাঁদে। এবার আম্পায়ার ধর্মসেনাই আউট দিয়ে দেন। যদিও ইমপ্যাক্ট ছিল আউটসাইড অফ স্টাম্প, কিন্ত শফিউল যে শট খেলেননি!

আগের দিনের দোলাচলের সমীকরনে অনেকেরই নির্ঘুম রাত কেটেছে। ১৩ বছর আগে এরকম আরেকটি নির্ঘুম রাত কেটেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের। মুলতানে পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতার সম্ভবনায় উত্তেজনায় সে রাতে ঘুমাননি অনেকেই। সেবার জয়ের আভাসই বেশি ছিল। এই একটা জায়গায় সামান্য ভিন্নতা আর সেবার বোলিং আর এবার ব্যাটিংয়ে থাকার পার্থক্য বাদ দিলে পুরো চিত্রপট যেন একই।

সেবারও বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে ১ উইকেটে জিতে গিয়েছিল পাকিস্তান। ১৩ বছর পর চট্টগ্রামে ইংল্যান্ডকেও নাগালের মধ্যে পেয়ে একটুর জন্য হারানো গেল না ফের। চতুর্থ দিন শেষে সমীকরন জিততে হলে বাংলাদেশের দরকার আরও ৩৩ রান। খুব বেশি না কিন্তু হাতে যে আছে মাত্র ২ উইকেট। হারার শঙ্কায় বেশি। তবে জেতার সম্ভবনাও আছে। এমন একটি দোলাচলে উত্তেজনায় রাত পার করে দেয়ার পর সকালের শুরুতেই সব অপেক্ষার অবসান ঘটল।  পারল না বাংলাদেশ। দিনের চতুর্থ ওভারেই সাব্বিরকে রেখে  দুই টেল এন্ডার ফিরে গেলেন।

সাব্বিরের অর্ধশতক, মুশফিকের দৃঢ়তায় চতুর্থ দিনে একটা সময় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল বাংলাদেশ।  সাব্বির ও মুশফিকের দারুণ জুটিতে যেখানে ইংল্যান্ডের কপালে ভাঁজ পড়েছিল। ৫ উইকেট হাতে নিয়ে দরকার ৫৯ রান তখনই গ্যারেথ ব্যাটির হঠাৎ লাফিয়ে উঠা বলে ভড়কে গিয়ে আউট হয়ে যান মুশফিক। সাব্বির ছিলেন বলে আশা ছিল। কিন্তু তাকে সঙ্গ দেয়ার মত তো কেউ থাকতে হবে। বোলিংয়ে দারুণ করা মেহেদি হাসান মিরাজ দুই ইনিংসেই হতাশ করেছেন ব্যাটিংয়ে। ব্যাট হাতে ক্রিজে শুরু থেকেই তিনি ছিলেন বেশ নড়বড়ে। আগের ইনিংসে স্টোকসের বলে যেভাবে আউট হয়েছিল প্রায়ই একইভাবে ব্রডের বলে কোন রান না করেই ফিরে যান তিনি। ফলে খেলা ঝুঁকে যায় ইংল্যান্ডের দিকে।

মিরাজের পর কামরুল ইসলাম রাব্বিকে পাঠানো হয়েছিল সাব্বিরকে সঙ্গ দিতে তিনি বোলিংয়ের মত ব্যাটিংয়ে দলে থাকার মত দৃঢ়তার ছাপ রাখতে পারেননি। ২৩৮ রানে ৮ উইকেট পড়ার পর যেকোনো মুহূর্তে খেলা শেষ হবার পরিস্থিতি এড়িয়েছন তাইজুল। সাব্বিরকে কিছুটা সঙ্গ দিনে কোনভাবে দিন পার করেন তিনি।

এর আগে ২৮৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিল বাংলাদেশ। ৯ রান করে তামিম ফিরে গেলেও ইমরুল কায়েস ও মুমিনুল ছিলেন সাবলিল। লাঞ্চের ঠিক আগে ৪৩ রান করে ইমরুল ফিরে যান। লাঞ্চ থেকে ফিরে দলীয় ১০৮ রানেই মুমিনুল ও মাহমুদুল্লাহ আউট হলে শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। মুমিনুল করেন ২৭ আর মাহমুদুল্লাহ করেন ১৭ রান। এরপর মুশফিক আর সাকিবই ছিলেন ভরসা। আগের ইনিংসের ছেলেমানুষী ভুল শুধরানোর সুযোগ ছিল সাকিবের সামনে। কিন্তু ২৪ রান করে আউট হয়ে হতাশায় ডোবান।

ব্যাটে বলে দারুণ পারফর্ম করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন বেন স্টোকস। বাংলাদেশ হেরে গেলেও ১৪ মাস পর টেস্ট খেলতে নেমে রোমাঞ্চকর একটি ম্যাচের জন্ম দিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে এই ফরম্যাটে ভালো করারও নতুন বার্তা দিয়ে দিল ঠিকই। আক্ষেপের মাঝেও তাই মুশফিকরা সাবাস পেতেই পারেন।

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ২৮৬) ৮১.৩ ওভারে ২৬৩/১০ (তামিম ৯, ইমরুল ৪৩, মুমিনুল ২৭, মাহমুদউল্লাহ ১৭, সাকিব ২৪, মুশফিক ৩৯, সাব্বির ৬৪*, মিরাজ ১, রাব্বি ০, তাইজুল ১৬, শফিউল ০ ; ব্যাটি ৩/৬৫, মইন ২/৬০, ওকস ০/১০, রশিদ ১/৫৫, ব্রড ২/৩১, স্টোকস ২/২০)।

 

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ২৪০ (কুক ১২, ডাকেট ১৫, রুট ১, ব্যালান্স ৯, মইন ১৪, স্টোকস ৮৫, বেয়ারস্টো ৪৭, ওকস ১৯*, রশিদ ৯, ব্রড ১০, ব্যাটি ৩; মিরাজ ১/৫৮, সাকিব ৫/৮৫, তাইজুল ২/৪১, কামরুল ১/২৪, মাহমুদউল্লাহ ০/৬, শফিউল ১/১০)

 

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২৪৮ (তামিম ৭৮, ইমরুল ২১, মুমিনুল ০, মাহমুদউল্লাহ ৮৫, মুশফিক ৪৮, সাকিব ৩১, শফিউল ২, সাব্বির ১৯, মিরাজ ১, তাইজুল ৩*, কামরুল ০; ব্রড ০/১২, ব্যাটি ১/৫১, ওকস ০/১৫, রশিদ ২/৫৮, মইন ৩/৭৫, স্টোকস ৪/২৬, রুট ০/৫)।

 

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৯৩ (কুক ৪, ডাকেট ১৪, রুট ৪০, ব্যালান্স ১, মইন ৬৮, স্টোকস ১৮, বেয়ারস্টো ৫২, ওকস ৩৬, রশিদ ২৬, ব্রড ১৩, ব্যাটি ১*; শফিউল ০/৩৩, মিরাজ ৬/৮০, কামরুল ০/৪১, সাকিব ২/৪৬, তাইজুল ২/৪৭, সাব্বির ০/১১, মাহমুদউল্লাহ ০/১৭, মুমিনুল ০/০)।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত