তাহিরপুর প্রতিনিধি

২০ মে, ২০২০ ১৩:২১

তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক যেন মরণ ফাঁদ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কে প্রায় ৩০ বছরেও দুর্ভোগের শেষ হয় নি। সড়কের স্থানে স্থানে গর্ত। গর্তের কারণে যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত। এলজিইডি একাধিকবার সড়কটি যান চলাচলে উপযোগী করার লক্ষ্যে টেন্ডার দিলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই। বছরে বছরে শুধু গচ্ছা গেছে সরকারের কোটি কোটি টাকা।

বর্তমানে এই সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় চরম দুর্ভোগের মাঝেই চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে ৪টি ইউনিয়নের দুই লক্ষাধিক মানুষ। ফলে সবার মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, জেলার তাহিরপুর উপজেলাটি অর্থনৈতিক ও পর্যটনসমৃদ্ধ হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র বাদাঘাট ইউনিয়নের বাদাঘাট বাজার ছাড়াও ৪টি ইউনিয়নের লোকজন, বাদাঘাট বাজার হয়ে উপজেলার ৩টি শুল্ক স্টেশনের ব্যবসায়ী, শিমুল বাগান, যাদুকাটা নদী, বারেকটিলা, শহীদ সিরাজ লেকসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে যাতায়াত করতে হলে তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কই মূল সড়ক। এই ৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩ কিলোমিটার সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ। বর্তমানে এই সড়কের হুসনারঘাট থেকে পাতারগাঁও ১ কিলোমিটার সড়ক যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) তাহিরপুর উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৩ সালে এলজিইডি তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করলে মাটির সড়ক তৈরি করা হয়। পরে বিভিন্ন চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ২০১১-১২ অর্থবছর পর্যন্ত সড়কের ৬ কিলোমিটার কাজ পাকা করা হয়েছে। এরপর ২০১৮ সালের শুরুর দিকে এই সড়কটিতে তিনটি ভাগ করে মেরামতের জন্য প্রায় ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এই সড়কের বৌলাই নদীর উপর নির্মিত ব্রিজ থেকে সূর্যেরগাঁও পর্যন্ত ৭৫০ মিটার ও টাকাটুকিয়া ব্রিজে দুই পাশে মিলিয়ে ব্লক দিয়ে ২৫ ফুট সড়কের কাজ হয়েছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভাঙন অংশ (হুসনারঘাট, পাতারগাও) কোনও কাজ হয় নি।

এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে আরও জানা যায়, এই সড়কটি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখনও অনুমোদন হয় নি। অনুমোদন হলে এ সড়ক কাজ শুরু হবে।

তাহিরপুর উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কটির পাতারগাঁও নামক স্থান থেকে হুসনারঘাটে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভেঙে যাওয়া সড়কের একাধিক স্থানে গর্ত দেখা দিয়েছে। সেই সাথে সড়কে কাদা জমেছে। আমরা চেষ্টা করছি সড়কটি মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করার জন্য।

এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারীরা হোসাইন, শফিকুল, মতিউর, শিক্ষক, ব্যবসায়ীরা জানান, ভাঙাচোরা সড়কে করোনাভাইরাসের মধ্যেই পিকআপ, ঠেলাগাড়ি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে চরম দুর্ভোগ নিয়ে। এ সড়কের ৮ কিলোমিটারের মধ্যে ৩ কিলোমিটার সড়কই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। তবে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হুসনারঘাট থেকে পাতারগাঁও ১ কিলোমিটার সড়কে প্রতিদিনেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে চলাচলকারী যানবাহন ও মানুষজন। এখন চলাচল এক প্রকার বন্ধই রয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি জানান, গুরুত্বপূর্ণ তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়কটির স্থানে স্থানে ভাঙনের কারণে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে চলাচল করছেন। জনদুর্ভোগ লাঘবে গুরুত্বসহকারে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, দীর্ঘ দিন ধরেই গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি দিয়ে জনসাধারণ চরম দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করছে। আমি আমার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি এই দুর্ভোগ লাঘব করতে। আর আশা করি আগামী বছর এই দুর্ভোগ লাঘব করতে পারবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত