শাকিলা ববি

২৩ মে, ২০২০ ০০:৫৮

করোনাকালে সিলেটে অনলাইনে জমজমাট ঈদ বাজার

করোনার কারণে এখন ঘরবন্দি মানুষ। সিলেটের বেশিরভাগ শপিংমল-ফ্যাশন হাউসও বন্ধ। তবে থেমে নেই ঈদের কেনাকাটা। শপিংমল বন্ধ থাকায় এবার অনলাইনে ঝুঁকেছেন ক্রেতারা। ফলে এবারের করোনাকালীন ঈদ অনলাইনে পোশাক বিক্রেতাদের জন্য শাপেবর হয়ে এসেছে। অনলাইনে চলছে জমজমাট কেনাকাটা।

সিলেটের শিবগঞ্জ এলাকার আমিনা খুশি। অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘গ্ল্যামডাস্ট’ এর পরিচালক তিনি। বুধবার (২০ মে) ইফতারের পর গ্ল্যামডাস্ট নামক ফেসবুক গ্রুপ থেকে লাইভে এসে নারীদের জন্য বাহারি ডিজাইনের কুর্তি, শার্ট, কাফতানসহ বিভিন্ন পোশাক ও কসমেটিকস প্রদর্শন করেন তিনি। তিনি যখন লাইভে বিভিন্ন পোশাক প্রদর্শন করছিলেন তখনই ক্রেতারা কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করে ক্রয় করছিলেন পোশাক।

লাইভ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই পণ্য নিয়ে বিক্রেতা ও ক্রেতাদের মধ্যে রীতিমত কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে যায়। একই পোশাক নিতে চাইছিলেন একাধিক ক্রেতা। বিক্রেতা আমিনা খুশিকে তাই লাইভে বলতে হয়েছে, যে আপু আগে কমেন্ট করবেন সে আপুই ড্রেস পাবেন। এভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টা লাইভে বিভিন্ন পোশাক বিক্রি করেন আমিনা খুশি। তারপর যারা পোশাক কিনতে পারেননি তাদেরকে পরের দিন আরও সুন্দর ডিজাইনের পোশাক কেনার সুযোগ করে দেওয়া হবে বলে লাইভে ঘোষণা দেন তিনি।

বিজ্ঞাপন



আমিনা খুশির মতো সিলেটের অনেক অনলাইন বিক্রেতাই এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ক্রেতারাও অনলাইনে কিনে নিচ্ছেন কাপড়, কসমেটিকস ও গহনা। অন্যবারের চেয়ে এবারের ঈদে ৩/৪ গুণ বেশি বেচাকেনা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সিলেটের বিভিন্ন অনলাইন ব্যবসায়ীরা।

‘গ্যামযামডাস্ট’ এর পরিচালক আমিনা খুশি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, করোনার প্রথম দিকে খুব খারাপ যাচ্ছিলো সব। ভেবেছিলাম কিভাবে কী করব। পেইজে, গ্রুপে অনেক আপুরা বলছিলেন বেবি প্রোডাক্ট, নিত্যপ্রয়োজনীয় স্কিনকেয়ার কোথাও পাচ্ছেন না। সাথে লেডিস পোশাকের চাহিদাও অনেক ছিল। পণ্য কীভাবে ক্রেতার কাছে পৌঁছাবো এটা নিয়েও অনেক টেনশনে ছিলাম। পরে আমরা সব ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে প্রোটেকশন সেইফটি ম্যানটেইন করে পণ্য হোম ডেলিভারি দেওয়া শুরু করলাম।

তিনি বলেন, ১০ রোজা থেকে বিক্রি শুরু হয়েছিল। চাঁদরাত পর্যন্ত পণ্য বিক্রি করবো। প্রোডাক্টের ব্যাপারে আজ ৫ বছরে ১টা নেগেটিভ রিভিউ পাইনি। এবারও পণ্য হাতে পাওয়ার পর অনেকেই খুশি হয়ে কল দিয়েছেন। এটাই আমার বড় অর্জন। গ্ল্যামডাস্টের উপর এভাবে সবাই ভরসা রাখলে সামনে কাজ করতে আরও স্পৃহা পাবো।

সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও রয়েছে বেশ কয়েকটি অনলাইন শপ। যার মধ্যে অনেকের বিভিন্ন শপিংমলে শোরুম আছে। চাহিদার কারণে শপিংমলের শোরুমের ব্যবসায়ীরা ইন্টারনেট ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেইজ ও গ্রুপ খুলে পণ্য বিক্রি করছেন। মূলত শাড়ি, রেডি-আনরেডি সালোয়ার কামিজ, কুর্তি, শার্ট, কসমেটিকস, গহনা ইত্যাদি অনলাইনে বিক্রি করেন তারা। বেশিরভাগ বিক্রেতারাই একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাদের ফেসবুক পেইজ বা গ্রুপে লাইভে এসে পণ্য বিক্রি করেন। অনেকেই আবার পণ্যের ছবি ও দাম ফেসবুক পেইজ বা গ্রুপে দিয়ে ব্যবসা করছেন অনেকে।  

একদিকে ঈদ অন্যদিকে করোনাভাইরাস, তাই হঠাৎ পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও জানান সিলেটের অনলাইন বিক্রেতারা।

বিজ্ঞাপন



সিলেট নগরীর উপশহরের একটি শপিংমলে রয়েছে বারাকা বুটিক্স এন্ড টেইলার্সের শোরুম। এই বুটিক্সের পরিচালক মালিহা মেহনাজ (ইছমতারা নিলা)। তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে রয়েছে রেডি আনরেডি থ্রিপিস, ক্যাডালক ড্রেস, শাড়ি, লেডিস টপসসহ নারীদের বিভিন্ন পোশাক। এছাড়াও রয়েছে কসমেটিকস, গহনা, স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট, হাতে বুনা নকশিকাঁথা, বেবি ড্রাইফুড। কিন্তু করোনার কারণে তার প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তবে ১০ মে পর থেকে সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রেখেই শপিংমল খোলা হলেও নিজের এবং ক্রেতাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তিনি তার দোকান বন্ধ রেখেছেন। বর্তমানে শুধু অনলাইনেই পণ্য বিক্রি করছেন তিনি। মালিহাস কালেকশন নামে ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপ থেকে তিনি তার পণ্য বিক্রি করছেন।

বারাকা বুটিক্স এন্ড টেইলার্সের পরিচালক পরিচালক মালিহা মেহনাজ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে শো-রুম বন্ধ রেখেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার খুলবো। এখন শুধু অনলাইনেই প্রোডাক্ট বিক্রি করছি। সিলেট নগরীতে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বজায় রেখেই হোম ডেলিভারি সার্ভিস দিচ্ছি। সিলেটের বাইরে কুরিয়ারের মাধ্যমে প্রোডাক্ট পাঠাচ্ছি ক্রেতাদের কাছে। ক্রেতারা বিকাশ, নগদ, রকেট, ব্যাংক একাউন্টে পেমেন্ট পেইড করছেন।

তিনি বলেন, আমি দেশী প্রোডাক্টের পাশাপাশি বিদেশি প্রোডাক্ট নিয়েও কাজ করছি। যার মধ্যে রয়েছে কসমেটিক্স, গহনা, স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট, হাতে বুনা নকশীকাঁথা, বেবি ড্রাই ফুড। ইউকে, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, চীন এই দেশগুলা থেকে প্রোডাক্টস ইম্পোর্ট করি। কিন্তু লকডাউনের কারণে ঈদে নতুন কোনো প্রোডাক্ট আমদানি করতে পারিনি। তবে কিছু প্রোডাক্ট আমদানি করার সুযোগ ছিল, কিন্তু নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে করিনি।

পণ্য বিক্রির ব্যাপারে মালিহা মেহনাজ বলেন, স্টকে যেসব প্রোডাক্ট ছিলো সেগুলা বিক্রি করছি। ঈদে ইতিমধ্যে ৯০% পণ্য শেষ হয়ে গেছে। ইন্ডিয়া, পাকিস্তানের শিপমেন্ট বন্ধ থাকায় এবার দেশীয় কাপড় বেশি বিক্রি হয়েছে। জামদানী, তাঁত, সিল্ক, কটন, এন্ডি কটন, জর্জেট মোটামুটি এই ধরনের রেডি ড্রেস, থ্রিপিস, গাউন, লেহেঙ্গা, শাড়ি, বেবি ড্রেস বিক্রি হয়েছে।

তিনি বলেন, ঈদের বেচাকেনা মূলত রোজার প্রথম দিক থেকেই শুরু হয়েছে। কিন্তু ১৫ রোজার পর বেশিই জমে উঠেছে অনলাইন শপিং। তার কারণ হচ্ছে শপিংমল গুলো বন্ধ। অনলাইন শপিং ছাড়া আর কোনো অপশন নেই ক্রেতাদের কাছে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় ২০২০ সালের ঈদুল ফিতরে বিগত দিনের থেকে বেশিই ব্যবসা হয়েছে।

Wear & Glow নামে একটি ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপে রেডি আনরেডি থ্রীপিস, টপস, কুর্তিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন সিলেট নগরীর আরামবাগ এলাকার তাহমিনা তন্নি। ২০১৮ সালে তিনি এই পেইজের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন। তার ক্রেতা শুধু সিলেটে নয়, দেশের বিভিন্ন এলাকা ও দেশের বাইরের বিভিন্ন দেশেও তার ক্রেতা রয়েছেন। তবে এবার এই করোনাকালীন ঈদে দেশের বাইরের ক্রেতাদের চাহিদা না থাকলেও অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো ব্যবসা করেছেন বলে জানান তাহমিনা তন্নি।

তাহমিনা তন্নি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, করোনার কারণে বড় বড় শপিংমল-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও করেনার ভয়ে মানুষজন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। তাই এই ঈদে আমার মতো অনলাইন ব্যবসায়ীদের সুসময় এসেছে। বিকাশে আগে প্যামেন্ট নিয়ে পণ্য ডেলিভারি দিচ্ছি। কুরিয়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নিজস্ব ডেলিভারি ম্যানও রয়েছে। ক্যাশ অন ডেলিভারি সিস্টেমেও পণ্য বিক্রি করছি।

তিনি বলেন, দেশের বাইরে আমার অনেক ক্রেতা ছিলেন। তাদের কেনা পণ্য কার্গো সার্ভিসে আমি তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। অনেকেই আবার দেশে থাকা তাদের আত্মীয়স্বজন দিয়ে পণ্য ডেলিভারি নিয়েছেন। কিন্তু এবছর করোনার কারণে দেশের বাইরের ক্রেতারা তেমন কিছু ক্রয় করেননি। তবে এবার ঈদে অন্য যেকোনো সময়ের ঈদের তুলনায় ভাল বিক্রি হয়েছে। চাঁদরাত পর্যন্ত পণ্য বিক্রি অব্যাহত থাকবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত