রিপন দে, মৌলভীবাজার

২৩ মে, ২০২০ ২০:৩৪

করোনা আক্রান্ত মৌলভীবাজারের পর্যটন শিল্প, প্রণোদনা চান ব্যবসায়ীরা

সারা বছর পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারে পর্যটকের আনাগোনা থাকলেও, শীত মৌসুমে তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এছাড়া প্রতি ঈদে রীতিমত ঢল নামে মৌলভীবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে। ঈদের ১০ থেকে ১৫ দিন আগে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন হোটেল বা রিসোর্টগুলোতে সংকট দেখা দেয় থাকার জায়গা। একই অবস্থা দেখা যায় জেলার অন্যান্য উপজেলায় হোটেল বা রিসোর্টগুলোতেও।

জেলার পাশাপাশি পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি পছন্দের পর্যটন স্পট শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জে। এসব এলাকার অবস্থিত প্রায় ৭০ টি হোটেল ও রিসোর্টের ব্যবসা জমে উঠে ঈদের মৌসুমে। কিন্তু চলমান করোনাসংকটের কারণে সারাদেশে কার্যত লকডাউন থাকায় এ বছর সি সুযোগ পাচ্ছেন না জেলা বা উপজেলার হোটেল বা রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা।

বরং দীর্ঘদিন পর্যটকের আগমন বন্ধ থাকায় ঝুঁকিতে পড়েছে এই এলাকার পর্যটন শিল্প। কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা। এছাড়া ট্যুর গাইডরা অপেক্ষা করছেন সুদিনের। এমতাবস্থায় কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে একটি অংশ চায় মৌলভীবাজারের হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসায়ীরা।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট সূত্রে যায় যায়, প্রতি ঈদে বিশেষ করে রমজানের মৌলভীবাজারে সবচেয়ে বেশি পর্যটক দেখা যায় কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, মনিপুরী পাড়ায়। জেলার বিভিন্ন চা-বাগান ও বাইক্কাবিল, বড়লেখার মাধবকুণ্ড. কুলাউড়ার কালাপাহাড়, হাকালুকি হাওর। শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন পর্যটন স্পটও ব্যাপক জনপ্রিয়।

এই পর্যটকদের ৯৫ শতাংশই থাকার জন্য বেঁছে নেন মৌলভীবাজার সদর, কমলগঞ্জ- শ্রীমঙ্গলের প্রায় ৭০টি হোটেল রিসোর্টকে। এসব হোটেল-রিসোর্ট প্রতি বছর ঈদের সময় কয়েক হাজার পর্যটক আগাম বুকিং দিয়ে রাখেন। কিন্তু এই বছর পর্যটকের সংখ্যা শূন্য। সেই সাথে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পুঁজি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান বন্ধ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্মচারী রাখতে হচ্ছে। যেহেতু কোন আয় নেই তাই পুঁজি ভেঙ্গে বেতন দিতে হচ্ছে ।

বিজ্ঞাপন

এসকেডি আমার বাড়ি রিসোর্টের পরিচালক সজল দাশ বলেন, আমার ব্যাংক লোন আছে ২ কোটি। মার্চের ১১ তারিখ থেকে আমার রিসোর্ট বন্ধ। কর্মচারীদের ছুটি দিয়েছি কিন্তু তাদের বেতনতো দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিলের জন্য চাপ আসছে। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের ঋণের জালে যেভাবে আটকে যাচ্ছি, সরকারের সহযোগিতা ছাড়া বের হতে পারবনা। উল্টা পুঁজি হারানোর ভয়ে আছি।

শ্রীমঙ্গল শহরের গ্রিণলিফ রিসোর্টের পরিচালক এস কে দাস সুমন বলেন, গত বছর তার রিসোর্টের ঈদের ১ মাস আগেই সব বুকড হয়ে যায়। তার রিসোর্টের বেশিরভাগ বিদেশীরা আসেন । ঈদের সময়টা ব্যবসার উল্লেখযোগ্য সময় হিসেবে সারা বছরের প্রস্তুতি থাকে কিন্তু এই বছর করোনা সংকটের কারণে সেই সুযোগ নেই। উল্টো ঝুঁকিতে পড়েছে আমার ব্যবসা। পরিবারের অন্য খাত থেকে টাকা এনে কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছি। তিনি জানান, আমরা পর্যটন ব্যবসায়ীরা বছরে কোটি কোটি টাকা ভ্যাট ট্যাক্স দেই। বিপদের এই সময় সরকারের সাহায্য প্রয়োজন।

হোটেল মেরিনার পরিচালক নাজমুল হাসান মিরাজ বলেন, আমার হোটেলটি ভাড়া নিয়ে করেছি। মাসিক ভাড়া ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কর্মচারীদের বেতনসহ মাসিক খরচ আড়াই লাখ টাকা। বর্তমান অবস্থায় ঋণে জড়িয়ে পড়েছি। সরকারের সাহায্য ছড়া এই অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে পারবনা। পর্যটকদের আগমনকে ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটান ট্যুর গাইডরা। কিন্তু এ বছর তাদের ফোনে কল আসছে না ।

লাউয়াছড়ার ট্যুর গাইড সাজু মারচিয়াং বলেন, ঈদের ২ মাস আগে থেকেই অনেকে ফোন দেন । কেউ কেউ বিকাশে অগ্রিম দিয়ে রাখেন। সব কাভার দেওয়া যায়না বলে তখন আমরা মৌসুমী মানুষ রাখি। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত কোন ফোন আসেনি।

পর্যটন সেবা সংস্থা শ্রীমঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক বলেন, আমার রিসোর্টগুলাতে গত বছর ২ মাস আগেও অনেকে বুকড করেছেন। পরিচিত অনেককে শেষ মুহূর্তে দিতে পারিনি বলে তাদের মন খারাপ হয় কিন্তু এই বছর উল্টা চিত্র। শুনেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা থেকে আমাদেরকেও দেওয়া হবে। কিন্তু কবে হবে, বা হবে কিনা নিশ্চিত নই। যেভাবে আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি ব্যবসা ঠিকিয়ে রাখতে হলে প্রণোদনা দরকার ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত