শাকিলা ববি

২৬ মে, ২০২০ ২২:১৫

আনারসের গ্রাম হাসাউড়া

হাসাউড়া গ্রামের টিলাগুলোতে সারিবদ্ধ আনারস। ছবি : প্রভাত পাল

শান্ত, সবুজ, ছায়াঘেরা গ্রাম হাসাউড়া। গ্রামজুড়ে অসংখ্য টিলা। প্রতিটি টিলায় স্থানীয়রা চাষ করেন আনারস। ফলনও হয় ভালো। এই গ্রামকে সুনামগঞ্জের সবাই চেনেন আনারসের গ্রাম হিসেবে।

সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার রঙ্গারচর ইউনিয়নের গ্রাম হাসাউড়া। এই গ্রাম ছাড়াও আশপাশের আরও চারটি গ্রামের মানুষজন আনারস চাষ করেন। মূলত হাসাউরা, পেচাকোনা, বানাইগাঁও, দর্পগ্রাম, মাঠগাঁও এই পাঁচটি গ্রাম মিলে রয়েছে শতাধিক টিলা। হাসাউরা থেকে শুরু হয়ে টিলা শেষ হয় মাঠগাঁও গিয়ে। পাঁচ গ্রামে চাষিরা আনারস চাষ করলেও আনারসের প্রধান কেন্দ্র হাসাউড়া গ্রাম। তাই সুনামগঞ্জে‘হাসাউড়ার আনারস’-এর বিশেষ খ্যাতি রয়েছে।

সুনামগঞ্জ শহরসহ প্রত্যন্ত এলাকার হাট বাজারে হাসাউড়ার আনারস বিক্রি হয়। রসে, ঘ্রাণে ও স্বাদে হাসাউড়ার আনারস অনন্য।



সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, হাসাউড়াসহ আশপাশের এলাকায় প্রায় ১৮ হেক্টর জায়গা একশর অধিক টিলায় আনারসের বাগান রয়েছে। এসব এলাকায় অর্ধশতাধিক কৃষক আছেন, যারা আনারস চাষ করেন। মে মাসের শেষ থেকে জুন মাস পর্যন্ত টিলা থেকে আনারস সংগ্রহ করেন চাষিরা।  

আনারসের চারা রোপণের পর ফল পেতে একবছর সময় লাগে। তবে নতুন বাগান হলে প্রথম বছর আনারস চাষ করার পর পরের বছর সেখানে আর চাষ করা যায় না। টিলা পরিচার্যার জন্য এক বছর প্রথম বছরের পর একবছর বিরতি দিতে হয়। তবে এর পর থেকে প্রতি বছরই আনারস চাষ করা যায়।

বিজ্ঞাপন



হাসাউড়ার একটি আনারস বাগানের পরিচালক বিজয় দাস বলেন, এক একরের একটি নতুন বাগানে চাষ করতে ৫ হাজার চারা রোপণ করা হয়। প্রতিটি চারার মূল্য ৫ টাকা থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। রোপণ করতে আরও ১০ টাকা খরচ হয়। দুই বছর পরিচর্যা করতে আরও ১৫ হাজার। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। ২ বছর পরে আনারস এক লক্ষ ২৫ হাজার টাকার মত বিক্রি করা সম্ভব হয়।


আনারস ব্যবসায়ী কানন দাস বলেন, গত বছর আমার বাগানে ৫ হাজারের মতো আনারসের ফলন হয়। এবার ফসলাদি কম হওয়ার কারণে ২ হাজারের মত আনারস ফলন হয়েছে। এবার খরার কারণে ফলন বেশি ভালো হয়নি। তার উপর এই করোনার মধ্যে আনারস হাটে নিয়ে যাওয়াও সমস্যা হবে। তারপরও ২ হাজার আনারস ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আনারস বাগান মালিক ইসলাম উদ্দিন বলেন, আমার ১০ একর জমির উপর দুটি বাগান রয়েছে। খরার কারণে এবার ফলন বেশি ভাল হয়নি। তার উপর এখন করোনা। এই সময় আনারস কিভাবে বিভিন্ন বাজারে পাঠাবো এই চিন্তায় আছি।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাসাউড়াসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের কৃষকরা আনারস চাষ করেন। প্রতি বছরই ভাল ফলন হয়। তবে এবার খরার কারণে মোটামুটি ফলন হয়েছে। যেহেতু টিলায় আনারস চাষ করা হয় তাই বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে কৃত্রিম সেচ দেওয়ারও ব্যবস্থা নেই। তাই বৃষ্টির পানিই একমাত্র ভরসা। এবছর বৃষ্টিও বেশি হয়নি। তারপরও আশা করা যায় কৃষকরা মোটামুটি লাভবান হবেন।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার সালাহ উদ্দিন টিপু বলেন, হাসাউড়ায় এবার আনারসের ফলন মোটামুটি ভাল হয়েছে। এই এলাকার আনারসের বিশেষত্ব হল আকারে ছোট হলেও স্বাদ অনেক ভাল। চাষিরা সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে আনারস বিক্রি করেন। হাসাউড়ার আনারস পুরো সুনামগঞ্জ জেলার মানুষের চাহিদা মেটাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত