জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, তাহিরপুর

২৭ মে, ২০২০ ১৪:৫২

করোনার প্রভাবে জনশূন্য তাহিরপুরের পর্যটন স্পটগুলো

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় ও মৃত্যুর ঘটনায় সরকারের সতর্কতার অংশ হিসেবে পর্যটন এলাকা খ্যাত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন। এরপর থেকেই হাওর বেষ্টিত ভাটির জনপদ টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ (নিলাদ্রী) লেক, জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান, বারেকটিলা, লাকমাছড়াসহ উপজেলার সকল দর্শনীয় স্পটগুলোতে পর্যটকহীন হয়ে পড়েছে।

এছাড়া যেখানে প্রতিবছর ঈদের এই সময়টা পরিবার নিয়ে সবাই কমবেশি ঘুরতে আসেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার পর্যটন স্পটগুলোতে। পর্যটকদের পদচারণয় মুখর হয়ে ওঠে পর্যটন স্পটগুলো। তবে এবার মহামারি করোনার কারণে ম্লান ঈদ উৎসব। তাই পর্যটকদের উপস্থিতি না থাকায় খালি পড়ে আছে উপজেলার সকল দর্শনীয় পর্যটন স্পটগুলো।

জানা যায়, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওর,ভারতীয় মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষা শহীদ সিরাজ লেক,স্বচ্ছ জলের অধিকারী মায়াবী যাদুকাটা নদী,আইফেল টাওয়ার খ্যাত বারেকটিলা, কাব্রবিক প্রান্তর জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় প্রতিদিনেই হাজার হাজার দেশ-বিদেশী পর্যটক, দর্শনার্থী প্রকৃতিপ্রেমী আর আশ পাশের মানুষের আগমনে ভরপুর থাকলেও এবার চারপাশেই নীরবতা বিরাজ করছে।

ফলে ঐ সব স্থানে গড়ে উঠা ভ্রাম্যমাণ দোকানীদের প্রতিদিন কয়েক হাজার টাকা বিক্রি করতে পারলেও তারাও এখন বসে অলস সময় পার করছে নিজ নিজ বাড়িতে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়তে পারে ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে করোনা ভাইরাসের শুরুতেই টাংগুয়ার হাওরসহ পর্যটন স্পটগুলোতে পর্যটকদের সমাগমে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।  এরপর থেকেই এমন অবস্থা। আর এই অবস্থায় পর্যটকরাও আসে না।

শিমুল বাগানে আগত পর্যটকদের কাছে পানি বিক্রেতা সরেফ মিয়া জানায়,বাগানের পাশেই মানিগাঁও গ্রামে বাড়ি মানিগাঁও মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে। এর ফাঁকেই  বাগানে পানি বিক্রি করছে দীর্ঘদিন ধরে আগত পর্যটকদের কাছে কিন্তু করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার আশংকায় পর্যটক আসে না শিমুল বাগানে ফলে তার বিক্রি নেই। গত ঈদেও প্রচুর পর্যটক এসেছিল আর ঈদের দিন থেকে এক সপ্তাহ মানুষজন প্রচুর ভীড় থাকত আমাদেরও লাভ হত এবার ত কোন কিছুই চোখে পড়েনি।

কথা হয় বাগানে আগত পর্যটকদের ছবি তুলে মুগ্ধ করা তরুন ফটোগ্রাফার মহিবুর রহমান মুহিব এর সাথে। তিনি জানান, শিমুল বাগানে আগত অনেক পর্যটকদের ছবি তুলে কিছু টাকা আয় হত সময়ও ভাল কাটত। এখন শূন্যতা বিরাজ করছে। বাগান মালিকও বাগানে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন।

করোনাভাইরাসের কারণে পর্যটক একবারেই নাই। জীবন বাচাঁনোই এখন বড় কথা। ঈদ এলেও ঈদের আনন্দ নেই মানুষের মাঝে। আছে উৎবেগ আর উৎকণ্ঠা। এই বার ঈদে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের আগমন নেই। ফলে আমি সহ আমার মত অনেকেই পরিবার নিয়েই ঈদের আনন্দ করেছি।

শিমুল বাগান মালিক রাখাব উদ্দিন জানান,করোনা সংক্রমণের শুরুতেই আমি প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী শিমুল বাগানে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছি। বাগানের গেইট বন্ধ করা হয়েছে। প্রতি বছর ঈদে পর্যটকদের আগমন ঘটলেও এবার ঈদে বন্ধ ছিল শিমুল বাগান করোনা পরিস্থিতির কারণে।

বিজ্ঞাপন

শহীদ সিরাজ লেকের পাড়ে ভ্রাম্যমাণ দোকানী শরিফুল জানান,আগে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসত এখানে। ঈদে ত আরও অন্যান্য দিন গুলোর চেয়ে বেশী পর্যটক,দর্শনার্থী ও স্থানীয় লোকজন আসত। এসেই দোকানে থাকা বিস্কুট,কলা,লোফ পানি ও চা খেত এতে সারাদিনে ভালই লাভ হত এখন ত পর্যটক আসে না। আর এসেই কি করবে যার যার জীবন নিয়ে এখন সবাই ব্যস্ত। কি করোনা রোগ আইছে। কাজ কর্ম নাই এখন বাড়িতেই আছি বেকার হয়ে।

মোটরসাইকেল দিয়ে যাত্রী পরিবহন করেন হান্নান মিয়া। তিনিসহ অনেকেই জানান,করোনা ভাইরাসের কারণে আগের মত আর পর্যটক আসেও না। আর আমরাও পর্যটক পরিবহন বন্ধ করেছি প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী। প্রতি ঈদের এক সপ্তাহ পূর্বে আর পরে সপ্তাহ প্রচুর মানুষজন পরিবহন করতাম এখন একবারেই নাই।

টাঙ্গুয়ার হাওর সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দা হাদিউজ্জামান সহ অনেকেই জানান, রমজানের ঈদের সময় এমনভাবে পর্যটক শূন্য টাঙ্গুয়ার হাওর আর কখনো তারা দেখেননি। টাঙ্গুয়ার হাওর ওয়াচটাওয়ার সংলগ্ন এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক কোন হোটেল মোটেল না থাকলেও প্রতিবছর ঈদের সময় টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণকৃত নৌকা সাজ সজ্জা ও আলোক সজ্জায় ঝলমল করতো। করোনার কারণে সেখানে এখন সন্ধ্যা নামলেই ভূতুরে অবস্থা।

তাহিরপুর থানার ওসি মোঃ আতিকুর রহমান জানান,করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই পর্যটকদের থাকা ও অবস্থান নিরুৎসাহিত করতে তাহিরপুর উপজেলা সদর, বাদাঘাট, ট্যাকেরঘাটসহ বিভিন্ন স্থানের আবাসিক হোটেল মালিকদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যেন কোন পর্যটন এখানে এসে থাকতে না পারে। এছাড়াও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পর্যটক পরিবহন যানবাহন জব্দ,চালক মালিকদের সাজার মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানোসহ অর্থদণ্ড আদায় করা হতে পারে আর পর্যটকরাও নিজেদের জীবন রক্ষায় তাহিরপুর মুখি হয়নি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শুরুতেই উপজেলায় পর্যটকদের আগমন ও পর্যটক পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবত এখনও রয়েছে। আর ঈদের পর্যটক আসছে না। পরিস্থিতি উন্নতি হলে নিষেধাজ্ঞা পরিবর্তন হতে পারে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত