দেবকল্যাণ ধর বাপন

৩০ মে, ২০২০ ০০:৫১

করোনা চিকিৎসা: ৩ মাসে ২৬ কোটি টাকা চায় নর্থইস্ট হাসপাতাল

সিলেটে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় প্রতি মাসে সরকারের কাছে প্রায় ৯ কোটি টাকা দাবি করেছে নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিক অবস্থায় তিন মাসের জন্য হাসপাতালটির একটি ইউনিট কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় ছেড়ে দিতে সম্মত হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই তিন মাসের সরকারের কাছে দাবি করা হয়েছে ২৬ কোটি টাকা।

সরকার সম্মত থাকলে ১ জুন থেকেই চিকিৎসা কার্যক্রম শুরুর আগ্রহের কথাও জানিয়েছেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় অবস্থিত এই হাসপাতালটির সংশ্লিষ্টরা। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবিকৃত টাকার পুরোটা দিতে রাজি হয়নি বলে জানা গেছে। তিন মাসে নর্থইস্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিন মাসে ১৫ কোটি টাকা দিতে রাজি হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সিলেটে দিন দিন বেড়েই চলছে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শুক্রবার রাত পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮৭৪ জনের। আর সিলেট জেলায় এ সংখ্যা ৪৬১ জন।

সিলেটের মধ্যে একমাত্র শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালকে করোনা আইসোলেশন ইউনিট ঘোষণা করে এখানেই করোনা শনাক্ত হওয়া ও উপসর্গ থাকা রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এদিকে, দিনদিন রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে ১০০ শয্যার এই হাসপাতালটিকে। তাই নতুন হাসপাতাল খুঁজতে হচ্ছে স্বাস্থ্যবিভাগকে।

বিজ্ঞাপন



পর্যাপ্ত নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) ও ভেন্টিলেটর থাকায় বেসরকারি নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকেই প্রথম পছন্দ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেটের কর্মকর্তাদের। প্রথম দিকে নর্থইস্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করলেও পরে তারা এই অবস্থান থেকে সরে আসে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়ে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদানে অনীহার কথা জানায়। পরে  স্বাস্থ্য অধিপ্তর থেকে আবার তাদের অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া হয়।

এরপর করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা প্রদানে রাজি হলেও চিকিৎসক-স্টাফ বেতন ও আনুষঙ্গিক চার্জ বাবদ তিন মাসে ২৬ কোটি টাকা দাবি করা হয়েছে।

২৬ কোটি টাকা চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি প্রদানের বিষয়টি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে নিশ্চিত করেছেন নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, তিন মাস ব্যবহারের জন্য সিলেটের এই বেসরকারি হাসপাতালটিকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি হয়েছে মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে এ কথা জানানো হয়েছে। দুই পক্ষের চুক্তি হলে সরকারি তত্ত্বাবধানেই এ হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

নর্থইস্ট হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অন্য রোগীদের সমস্যার কথা ভেবে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় পরিচালকরা আপত্তি জানালেও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের হস্তক্ষেপে ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের অনুরোধে তারা সম্মত হয়েছেন। হাসপাতালের পুরো একটি ভবন ১০টি আইসিইউসহ এজন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর্মী দিয়েও সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি রিয়াল টাইম পলিমারেস চেইন রিঅ্যাকশন' (আরটি-পিসিআর) মেশিন ও দুইটি ভেন্টিলেটর চেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। একইসাথে নিজেদের স্বাস্থ্যকর্মীর পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক-নার্স সরবরাহ করার জন্যও আবেদন জানিয়েছে তারা।

এ ব্যাপারে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, বিভাগীয় কমিশনার আমাদের সহযোগিতা চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন, আমরা এতে আগ্রহ দেখিয়ে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেবো বলে চিঠির জবাব দিয়েছি এবং আমরা আশা করছি আগামী মাসের ১ তারিখ থেকে নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা চালু করতে পারবো।

বিজ্ঞাপন



তিনি জানান, আমরা মূল হাসপাতালের পুরো একটি ভবন কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ দিয়েছি। এতে আইসিইউসহ অন্যান্য সকল ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন চিকিৎসক, সেবিকা (নার্স), ক্লিনারসহ পর্যাপ্ত জনবল দিয়ে সহযোগিতা করবে বলেও জানান এ চিকিৎসক। তবে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে একটি আরটি-পিসিআর মেশিন ও দুইটি ভেন্টিলেটর চেয়েছি।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. আনিসুর রহমান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে জানান, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরা সরকারিভাবে এই হাসপাতালকে অধিগ্রহণের কথা ভেবেছিলাম, পরে ২৩ মে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগ্রহ প্রকাশ করে একটি বাজেট আমাদের কাছে পেশ করেছেন। যা পরবর্তীতে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু তথ্য জানতে চেয়ে আমাদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে, যা আগামীকাল শনিবার আমরা খবর নিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারবো। এর পরেই আমরা সেখানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় যেতে পারবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত