কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

০৩ জুন, ২০২০ ২১:২২

মুক্তার লক্ষ্য জজ হওয়ার: একমাত্র বাধা দারিদ্রতা

অদম্য মেধাবী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুক্তা মল্লিক স্বপ্ন দেখে আইন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে জজ হওয়ার। কিন্তু হতদরিদ্র বাবা সবজি বিক্রি করে যা আয় করেন, তাতে সংসারের চাকা সচল রাখাই কঠিন, সেখানে মুক্তা মল্লিকের এই ইচ্ছা প‚রণের সুযোগ কোথায়?

কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার কালী প্রসাদ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়েছে মুক্তা। ফল ভালো দেখে পরিবারের পাশাপাশি তার প্রতিবেশীরাও খুব খুশি। রহিমপুর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামের দরিদ্র সবজি বিক্রেতা অবিনাশ মল্লিকের দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে মুক্তা মল্লিক ৩য় সন্তান। মুক্তার বড় ভাই একটি সরকারি মেডিক্যাল এ্যাসিসটেন্স প্রশিক্ষণ স্কুলে (মেটস্) দ্বিতীয় বর্ষে এবং বড় বোন মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজে ২০২০ সনের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। মুক্তার ছোট এক ভাই ৮ম শ্রেণি ও বোন ৫ম শ্রেণিতে পড়ে। দরিদ্র পরিবারের হলেও সবাই লেখাপড়ায় রয়েছে।

এসএসসিতে ভালো ফলাফল করে মুক্তা মল্লিক আইন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে একজন জজ হতে চায়। অথচ সবজি বিক্রেতা বাবা তাকে আর বেশী দূর পড়াতে চাচ্ছেন না দারিদ্রতার কারণে। তবে মুক্তার আত্মবিশ্বাস যেভাবে তার বড় ভাই ও বোন নিজে টিউশনি করে নিজেদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারছেন, সেভাবে সেও একটি ব্যবস্থা করে নিজের লেখাপড়ার খরচ বের করতে পারবে।

বুধবার (৩ জুন) বিকেলে দেবীপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে কথা হয় অদম্য মেধাবী মুক্তা মল্লিকের সাথে।

সে জানায়, নিজের চেষ্টায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতা আর পরামর্শে পড়াশুনা করে সে প্রাথমিক সমাপনীতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। জেএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস ও এবার এসএসসিতেও গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকেও সে ভালো ফলাফল করে পরবর্তীতে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করে তার লক্ষ্য একজন জজ হওয়ার। এতে দেশ ও দশের সেবা করতে পারবে বলে তার বিশ্বাস। জজ হওয়ার পথে একমাত্র দারিদ্রতাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

তার পরিবারের পাশাপাশি এলাকার মানুষ ও শিক্ষকরাও মনে করেন, মুক্তার পড়ালেখা চালিয়ে নিতে এবং স্বপ্ন প‚রণে সরকারি বেসরকারিভাবে সহায়তা দরকার।

তার বাবা অবিনাশ মল্লিক বলেন, তিনি নিজের জমিতে সবজি চাষ করে ও কৃষি কাজ করে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় কিছুটা সহযোগিতা করেছেন মাত্র। তবে বড় ছেলে ও মেয়ে টিউশনি করে নিজেদের খরচ বের করে নিচ্ছে। এখন তৃতীয় সন্তান মুক্তার লেখাপড়ার খরচ নিয়ে তিনি চিন্তিত। তবে মেয়ে নিজেই অদম্য বলে সে পরবর্তী লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায়। কেউ মানবিক বিবেচনায় সহযোগিতার হাত বাড়ালে হয়তো বা তার মেয়ের এ ইচ্ছে পূরণে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।

কালী প্রসাদ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্যেন্দ্র কুমার পাল বলেন, দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে মুক্তা মল্লিক নিজে ও ভাই বোনেরা পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। মুক্তার এ ফলাফলে এ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা খুশি।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত