কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

০৫ জুন, ২০২০ ২০:২০

কমলগঞ্জে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি, তলিয়ে গেছে ধানক্ষেত

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল

গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও ঢলে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি পাহাড়ি ছড়ার পানি উপচে প্রায় ৩শ’ হেক্টরের আউশ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এছাড়া উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উজানের পানি কিছুটা নামলেও আদমপুরসহ নিম্নাঞ্চলে অবনতি হচ্ছে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার আদমপুর, ইসলামপুর ইউনিয়ন ঘুরে ঘুরে এ চিত্র পাওয়া যায়। গত ২৪ ঘণ্টায় তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ধলাই নদীর পানি কমে শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ধলাই রেল সেতু এলাকায় বিপদ সীমার ১৮ দশমিক ৮৯ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

স্থানীয়রা জানান, গত তিনদিনের ভারী বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে উপচে পড়ে ছড়ার পানি। এসব পানি ইসলামপুর ইউনিয়ন হয়ে আদমপুর ইউনিয়নের মধ্যদিয়ে আলীনগর, শমশেরনগর, পতনউষার, মুন্সীবাজারসহ নিম্নাঞ্চলে প্রবাহিত হচ্ছে। ইসলামপুর ও আদমপুর ইউনিয়নের ডালুয়াছড়া, বাঘাছড়া, ইছাছড়া ও লাউয়াছড়ায় পাহাড়ি পানি উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা ও রাস্তাঘাট নিমজ্জিত হয়। ফলে পাহাড়ি ঢলের পানি জমে জলাবদ্ধতায় আদমপুর, ইসলামপুর, শমশেরনগর, পতনউষার ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের প্রায় ৩শ’ হেক্টরের আউশক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। অনেক বাড়িঘরও পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আদমপুর ইউনিয়নের তেতইগাঁও, ঘোড়ামারা ও উত্তরভাগ গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া বন্দরগাঁও, ছনগাঁও, তেতইগাও, পূর্বজালালপুর, উত্তরভাগ, মধ্যভাগ, জালালপুর, আধকানি, বনগাঁও, ঘোড়ামারা গ্রামের পুরোদমে আউশক্ষেত নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। কমলগঞ্জ-কুমরা সড়কের আদমপুরের আধকানি ও ইসলামপুর ইউনিয়নের গোলের হাওর এলাকার রাস্তা প্রায় এক ফুট পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত আছে। শমশেরনগর ইউনিয়নের শিংরাউলী, বড়চেগ, কৃষ্ণপুর, হাজিনগর, সতিঝির গাঁও, রাধানগর ও মরাজানের পারের বেশ কিছু এলাকার আউশ ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। পতনউষার ইউনিয়নের কেওলার হাওরেও নিমজ্জিত হচ্ছে আউশক্ষেত।

আদমপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল খতিব, আসলাম মিয়া, সহিদ মিয়া, সোয়াব আলী ও আধকানি গ্রামের সালাম মিয়া, রজব আলী, আরব আলীসহ কৃষকরা বলেন, আমাদের শতাধিক কৃষকের রোপিত আউশ ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। কয়েকদিন হলো রোপণের এখনই পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও চলতি মৌসুমের কিছু সবজি ক্ষেতও নিমজ্জিত হয়েছে। দ্রুত পানি না নামলে তারা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলেন অভিযোগ করেন।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, শুক্রবার বিকালে সরেজমিনে আদমপুর ও ইসলামপুর ইউনিয়নে তলিয়ে যাওয়া ক্ষেত পরিদর্শন করেছি। এই দুই ইউনিয়নের ১৩০ হেক্টর আউশ ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। তবে অনেক স্থানে পানি নেমে গেছে। ফলে এসব এলাকায় কোন ক্ষয়ক্ষতি করবে না। জলাবদ্ধতার কারণে ফসলি জমি পানিতে নিমজ্জিত ছিল এখন পানি নামতে শুরু করেছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, স্থানীয় কিছু লোকজন তাদের জমিতে ভিটা ভরাট, ছড়ার কালভার্ট বন্ধ ও ড্রেনেজ বন্ধ করে দেওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার কিছু কালভার্ট খুলে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোও খুলে দেওয়া হবে। তাহলে আর এ সমস্যা হবে না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ধলাই নদীর পানি অনেক কমে গেছে। এখন পানি বিপদ সীমার ১৮ দশমিক ৮৯ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাধবপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। এ স্থান সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত