তাহিরপুর প্রতিনিধি

০২ জুলাই, ২০২০ ১৫:০৩

তাহিরপুরে বন্যায় পুকুরের মাছ ভেসে কোটি টাকা ক্ষতি

সুনামগঞ্জে টানা বৃষ্টিপাত ও বন্যায় পাহাড়ি ঢলে তাহিরপুর উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নের ৭০টি পুকুরের পোনা ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গিয়ে ও অবকাঠামো মিলে প্রায় কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা বিভিন্ন এনজিও ও সরকারিভাবে ঋণ, কেউ ধার করে আবার অনেকেই চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করে মাছ বিক্রির টাকায় জীবিকা নির্বাহ করতেন।

বন্যায় মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষীরা সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষীদের পুনর্বাসনে জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ও উপজেলার সচেতন মহল।

বিজ্ঞাপন

তাহিরপুর উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে জানা যায়, গত শুক্রবার থেকে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। এতে অব্যাহতভাবে ডুবতে থাকে জেলার তাহিরপুর উপজেলার ৭০টি মাছ চাষের পুকুর। আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যাওয়া পুকুরের মধ্যে সদর তাহিরপুর, বাদাঘাট, উত্তর বড়দল, দক্ষিণ বড়দল, উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ শ্রীপুর, বালিজুড়ী ইউনিয়নের ৩৯ জন মৎস্যচাষীর পুকুর তলিয়ে যাওয়ায় মাছ ও পোনা ভেসে গেছে।

এর মধ্যে বাদাঘাট, উত্তর বড়দল, উত্তর শ্রীপুর ক্ষতির পরিমাণ বেশি। ক্ষতির পরিমাণ ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত মৎসচাষীরা বলছে তাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় কোটি টাকার বেশি।

তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়ন মাছচাষী রফিকুল ইসলাম জানান, আমি গত ১০ বছর ধরে আমার তিনটি পুকুরে রুই, কাতলা, পাঙাস, তেলাপিয়া, শিং, ব্রিগেড, মৃগেল,চিড়াই ও সিলভার কার্প জাতের মাছ চাষ করেছি। কিন্তু সম্প্রতি বন্যায় আমার বড় পুকুরটি সম্পূর্ণ ও অন্য দুটি পুকুর আংশিক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় প্রায় ৯-১০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। আমি চরম ক্ষতির শিকার হয়েছি। তিনি সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের জন্য দাবি জানান।

সমাজসেবক মাসুক মিয়াসহ উপজেলা ও হাওরপাড়ের সচেতন মহল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎসচাষীদের সরকারিভাবে সহযোগিতা প্রদানের দাবি জানিয়ে বলেন, এবার বন্যায় মাছচাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুকুরে মাছচাষীদের এই দুঃসময়ে সরকারের পাশে দাঁড়ানো উচিত। কারণ তারা বিভিন্ন এনজিও ও সরকারিভাবে ঋণ, অনেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছেন লাভের আশায়। সরকারি সহায়তা না পেলে মাছচাষীদের দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।

বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত উপজেলার ১৪ দশমিক ৮ হেক্টর আয়তনের ৭০টি পুকুরে একশত মৎস্যচাষী মাছ চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৩৯ জন চাষীর বন্যার পানিতে মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে ৩৬ মেট্রিক টন মাছ, আড়াই মেট্রিক টন পোনা ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতিসহ মোট ক্ষতির পরিমাণ ৬৫ লাখ টাকা।

এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মাছচাষীদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাহিরপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সারোয়ার হোসেন। সরকারিভাবে কোনও সহায়তা এলেই ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে। আর এখন করনীয় বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ জানান, উপজেলায় বন্যায় মৎস্যচাষীদের পুকুর ডুবে মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছে মৎস্য বিভাগ। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারিভাবে কোনও সহায়তা এলেই তাদের সহায়তা প্রদান করা হবে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে আর তালিকা তৈরির কাজ শেষ হলে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে জানিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, বন্যায় জেলার ১১ উপজেলার ২ হাজার ৮শ ৪৬টি পুকুরের মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। মাছ ও অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ২১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার। আমরা সার্বক্ষণিক চাষীদের বন্যা পরবর্তী করণীয় বিষয়ে নির্দেশ দিচ্ছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত