নিজস্ব প্রতিবেদক

০৭ জুলাই, ২০২০ ০১:৫৫

মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় যুক্ত হচ্ছে আরও ৩০ বেড

সিলেটে দিনদিন বেড়েই চলছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এর চিকিৎসায় সিলেট নগরীতে যুক্ত হয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল মাউন্ট এডোরা। গতমাসের ৮ তারিখ রোগী ভর্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন সিলেটের এ বেসরকারি হাসপাতালটি। সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় ইতোমধ্যে সুনাম কুড়িয়েছি নগরীর আখালিয়ায় অবস্থিত মাউন্ট এডোরা হাসপাতালটি।

একমাস পূর্বে ৪০টি বেড নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যবস্থাপনায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করতে শুরু করে। এক মাস না পেরুতেই সিলেটের এ বেসরকারি হাসপাতালটি আরও ৩০টি বেড প্রস্তুত করছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে। আজ মঙ্গলবার থেকে হাসপাতালটি অষ্টম তলায় স্থাপিত এই ৩০টি বেডে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের বিষয়টি মাথায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।

এ ব্যাপারে হাসপাতালটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে জানান, কোভিড-১৯ এর রোগীদের চিকিৎসা চ্যালেঞ্জ হলেও সর্বোচ্চ সেবার কথা মাথায় রেখে নতুন করে আরও ৩০টি বেড বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। এ জন্য হাসপাতালটির মূল ভবনের অষ্টম তলায় আমরা ১৭টি কেবিন ও ওয়ার্ডে ১৩টি বেড বাড়িয়ে ৭০ বেডে উন্নীত করেছি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য। এছাড়া আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা রয়েছে ১০টি আইসিইউ ও ৪টি ভ্যানটিলেশন ব্যবস্থা। তবে বর্তমানে ভ্যানটিলেশন সংখ্যা ৭টিতে উন্নীত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নতুনভাবে বাড়ানো ৩০টি বেডে উচ্চচাপে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা রয়েছে। যা করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

এছাড়া হাসপাতালটিতে প্লাজমা অ্যাফেরেসিস মেশিনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে প্লাজমা সংগ্রহ করে সিলেটে রোগীদের শরীরে এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, গত ১৪ জুন আমরা ‘প্লাজমা থেরাপি’ সেবা চালু করেছি। যা সিলেটে প্রথম বলেও যোগ করেন তিনি। এদিন মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে করোনা জয়ী একজনের প্লাজমা গ্রহণ করা হয়। এরপর তা নর্থইস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন করোনা রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়।

এদিকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদেরকে চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য হাসপাতালটিকে পূর্ণাঙ্গভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ হাসপাতালে সকল ব্যবস্থাই রয়েছে। যতই ঝুঁকি থাকুক না কেন আমরা সেগুলো মাথায় নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা পর্যাপ্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্সসহ পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিয়েছি। যারা মাসে তিনবার পালাক্রমে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক আরও বলেন, আমরা নিজ ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা শুরু করেছি, যা আমাদের শুরু থেকেই পরিকল্পনা ছিলো। সে জন্য আমরা আলাদা করে চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়োগ দিয়েছি। কারণ আমরা বেসরকারিভাবে ও বেসরকারি উদ্যোগে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। একইসাথে এখানে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার পাশাপাশি আমরা সাধারণ রোগীদেরও চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসা নিয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক বিভাগীয় প্রধান (কার্ডিওলজি) অধ্যাপক ডা. আমিনুর রহমান লস্করসহ তিনজন চিকিৎসক করোনাভাইরাসমুক্ত হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলেও জানান হাসপাতালটির এ কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সুনাম কুড়িয়েছি। এ হাসপাতাল থেকে ইতোমধ্যে সিলেটের বেশ কয়েকজন চিকিৎসকসহ আরও সাধারণ রোগীরা করোনা মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

প্রসঙ্গত, গত মাসের ৮ তারিখ থেকে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা শুরু করে সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল মাউন্ট এডোরা। প্রথম ধাপে হাসপাতালটি ৪০টি বেড নিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদেরকে চিকিৎসা প্রদান করতে শুরু করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের ব্যবস্থাপনায়ই করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে শুরু করে। এরআগে সিলেটের আরেকটি বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা শুরু করে। আর সরকারি উদ্যোগে নগরীর শহীদ ডা. শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালকে করোনা আইসোলেশন সেন্টার ঘোষণা করে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এছাড়া সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য নির্ধারিত স্থান সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের পাশাপাশি সিলেটের খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে প্রস্তুত করা হয়। শামসুদ্দিন হাসপাতালে রোগীর বাড়তি চাপ কমাতে এ দুই সরকারি হাসপাতালে রোগী স্থানান্তর করা হচ্ছে। এ দুটি হাসপাতালে ৩১ শয্যা করে মোট ৬২টি শয্যা রয়েছে বলে জানা যায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত