তাহিরপুর প্রতিনিধি

০৭ জুলাই, ২০২০ ১৪:৫৮

তাহিরপুরে বন্যায় সড়কে ব্যাপক ভাঙন, জনদুর্ভোগ চরমে

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় পাকা সড়ক, গ্রামীণ সড়ক ভেঙে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে জেলা শহরের সাথে উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। অনেক স্থানে ভাঙ্গনের কারণে ফেরি ও নৌকা দিয়ে পারাপারের মাধ্যমে জেলা শহর ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সঙ্গে যাতায়াত চালু রাখা হয়েছে।

জানা যায়, বন্যার পানি কমলেও জেলা সদরের সাথে স্বাভাবিক হয়নি সড়ক যোগাযোগ। সড়কে একাধিক স্থানে পানি, নৌকাযোগে কোনরকম পারাপার হচ্ছে মোটরবাইক ও লোকজন। সিএনজি, ট্রাক, ট্রলি, বাস কিংবা প্রাইভেটকার কোনটি আর চলছে না এ সড়কে। সিএনজি চালক ও লেগুনা চালকরা রয়েছেন বেকায়দায়। কবে সচল হবে এ সড়ক সহসা বলা যাচ্ছে না। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তাহিরপুর উপজেলার তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে যাতায়াতকারী তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার ৫ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে জেলা সদরের দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার। সড়কে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দুর্গাপুর (১শ মিটার) ও শক্তিয়ার খলাতে (২শ মিটার) স্থান দুটি অপেক্ষাকৃত নিচু। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সামান্য পানিতে সড়ক দুটি তলিয়ে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে প্রায়ই কখনো ১০ দিন কখনো ১৫ দিন এ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। অপরদিকে আনোয়ারপুর ব্রিজের পূর্ব পাশে ১শ মিটার এপ্রোচ এর কাজ ২০১৮ সালে থেকে এখনো সম্পন্ন করতে পারছে না ওই কাজের ঠিকাদার। ঠিকাদারের গাফিলতি ও এলজিইডির উদাসীনতায় গত দুবছর ধরে ওই স্থান দিয়ে পাহাড়ি ঢলে পানি প্রবাহে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়।

উপজেলার সচেতন মহল জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সড়ক পথে যে কাজ করে তার মান খুবই খারাপ। যার জন্য কাজ করার পরেই গর্ত ও ভেঙে যায় আর পাহাড়ি ঢলের চাপেও ভেঙে যায়। আর বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল ও পায়ে হেটে চলাচল করা কঠিন হয়ে পরে। পাহাড়ি ঢলের যাতে করে সড়ক ডুবে না যায় তার জন্য সময় উপযোগী সড়ক উঁচু করে ও সহজে সড়ক ভাঙ্গতেও না পারে তাই সঠিকভাবে সড়ক নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও কঠোর নজরদারি গ্রহণ করলে প্রতি বছরেই আমাদের দুর্ভোগ কমে যাবে।

সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কে চলাচলকারী আরিফ মিয়া, ইসলাম উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, এই সড়কের শক্তিয়ারখলা বাজারের সামনে দুর্গাপুর নামক স্থানটি (১০০ কিলোমিটার) পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় যার জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে ও আনোয়ারপুর বাজারে সামনে ব্রিজ থেকে দুশত মিটার সড়ক পাহাড়ি ঢলে ভেঙ্গে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এই অংশে এখন নৌকা দিয়ে মোটরসাইকেল ও মানুষ পারাপার করছে। এই সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও ২৫ বছরের বেশী সময় ধরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি ও বরাদ্দ দিলেই সঠিক ভাবে কাজ না করে নয় ছয় করার কারণে দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না।

লক্ষীপুর গ্রামের তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কে ভাড়ায় সিএনজি চালান আরিফ মিয়া। তিনি জানান, গত কয়েকদিন ধরে বন্যার পানি কমেছে। কিন্তু সড়ক ভাঙ্গা থাকার কারণে তিনি গাড়ি নিয়ে বের হতে পারছেন না।

রতনশ্রী গ্রামের মোটরবাইক চালক সাজিদ মিয়া বলেন, সড়কে তিন স্থানে পানি থাকায় নৌকায় করে পারাপার হতে হয়। এতে ১ ঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগে ৩ ঘন্টা। তাই ইচ্ছে করেই জেলা সদর ভাড়া নিয়ে যাই না। আনোয়ারপুর ভাঙ্গাতেই বসে থাকি, এখান থেকেই যে কয়টা ভাড়া পাই।

বালিজুরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুজ জহুর বলেন, এপ্রোচ সড়কের কাজটি না করায় সড়কে ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়কে যাতায়াতাকারী যাত্রী সাধারণ।

সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, বন্যায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ভেঙে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে কয়েকটি সড়কের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পাহাড়ি ঢলে বন্যায় তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর ব্রিজের এপ্রোচ সড়কটি মেরামত করা যায়নি। পানি কমলে দ্রুত সড়কটি মেরামত করে দেয়া হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত