জৈন্তাপুর প্রতিনিধি

১১ জুলাই, ২০২০ ১৬:১৭

জৈন্তাপুরে তৃতীয় দফায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

প্রায় ১০ দিনের ব্যবধানে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা আবারও বন্যার কবলে পড়েছে। গত তিনদিনের অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তৃতীয় দফায় উপজেলার নদনদীর পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ৪ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।

শনিবার (১১ জুলাই) দুপুর ২টায় উপজেলার সারি নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বিপদ সীমার ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সারি নদী, করিচ নদী, বড়গাংসহ অন্যান্য নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ফলে উপজেলার নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্লাবিত এলাকার মানুষ। পানির নিচে ডুবে গেছে অনেক রাস্তাঘাট তাই বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে তাদের পরিবারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী ২/৩দিন ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে পানিও বাড়তে পারে।

পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টি ফলে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ এবং বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তের স্বীকার হয়েছে নিম্নআয়ের দিনমজুর ও মৎস্যচাষিরা। গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলোর বসতভিটা কাঁচা থাকায় বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বন্যায় বাড়ি-ঘরসহ মাছ চাষ করা পুকুর, দীঘি তলিয়ে যাওয়ার কারণে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছে গ্রামীণ জনপদে বসবাসকারীসহ মৎস্যচাষিরা। সীমান্তবর্তী ৩টি ইউনিয়নের বন্যায় আটকে পড়া পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণ করে উপজেলা প্রশাসন।

এ দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বন্যাকবলিত এলাকা উপজেলার ১নং নিজপাট ইউনিয়নের মেঘলী, বন্দরহাটি, লামাপাড়া, ময়নাহাটি, জাঙ্গালহাটি, মজুমদারপাড়া, হর্নি, বাইরাখেল, গোয়াবাড়ী, তিলকৈপাড়া, বড়খেল, ফুলবাড়ী, ডিবিরহাওর, ঘিলাতৈল, হেলিরাই। ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের মুক্তাপুর, বিরাইমারা, বিরাইমারা হাওর, লামনীগ্রাম, কাটাখাল, খারুবিল, চাতলারপাড়, ডুলটিরপাড়, ১নং লক্ষীপুর, ২নং লক্ষীপুর, আমবাড়ী, ঝিঙ্গাবাড়ী, নলজুরী হাওর ও শেওলারটুক। ৩নং চারিকাটা ইউনিয়নের বালিদাঁড়া, লালাখাল, রামপ্রসাদ, থুবাং, বাউরভাগ উত্তর, বাউরভাগ দক্ষিণ, পুঞ্জীসহ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

অপর দিকে বেশ কয়েকদিন থেকে দরবস্ত ইউনিয়নের কাঞ্জর, গর্দনা, সেনগ্রাম, মোহাইল, ছাতারখাই, শুকইনপুর। ফতেপুর ইউনিয়নের হেমু ভাটপাড়া, পাখিটিকি, মাঝপাড়া, দত্তপাড়া,বেলুপাড়া, বালীপাড়া, শিকারখা এবং চিকনাগুল ইউনিয়নের কাটুয়াকান্দি, কাপনা কান্দি, সহ উপজেলার বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, গত তিনদিন অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবারও বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২/৩ দিন টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। তাই সবাইকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জৈন্তাপুর শাখার উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. জাহিদুল ইসলামকে বলেন, উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে। সারি নদীসহ সবকটি নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীর পানি দুপুর ২টায় পর্যন্ত বিপদসীমার ১২ দশমিক ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলেন, শুক্রবার বিকালে সীমান্তবর্তী ৩টি ইউনিয়নের বন্যায় আটকে পড়া পরিবার গুলোর মধ্যে চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে আমরা চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছি। আজ দুপুরে আরো বরাদ্দ এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব তাদের মাঝে খাবার পৌঁছে দিবো। আমার একটাই অনুরোধ বন্যায় কোনও পরিবার আটকে পড়লে আমাকে জানাবেন আমাদের নৌকা ও আশ্রয় কেন্দ্র রেডি আছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত