তাহিরপুর প্রতিনিধি

১১ জুলাই, ২০২০ ২৩:৪৬

তাহিরপুরে বন্যায় ডুবছে নিম্নাঞ্চল, বিশুদ্ধ পানির সংকট

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় বন্যা দেখা দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বসত বাড়ি, সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে অনেক এলাকায়।

জানা যায়, ঢল ও ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পানি দ্বিতীয় দফায় বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দূর করতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর জানিয়েছেন, শনিবার(১১ জুলাই) সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে সেন্টিমিটার যাদুকাটা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৩ সেন্টিমিটার ও সুরমা নদীর পানি ৭৬ সেন্টিমিটার বেশি বেড়েছে। সুনামগঞ্জে আরও তিন দিন বৃষ্টি পাত হবে এতে করে পানি আরও বাড়বে।

আরও জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, তাহিরপুর বাদাঘাট সড়কসহ অভ্যন্তরীণ সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থাপনা পানিতে তলিয়ে গেছে। ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রামে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়ছে বালিজুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণকূল, আনোয়ারপুর, পাতারি, তিওর জালাল, লোহাচুরা, বড়খলা, মাহতাবপুর বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগড়া, ঘাগটিয়া, পাঠানপাড়া, গড়কাটি, উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রজনীলাইন, রাজাই, শান্তিপুর, চানপুর, দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের পুরান খালাস, সাদেরখলা, চতুর্ভজ, কাউকান্দি, জামলাবাজ, তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের জামালগড়, চিকসা, গোবিন্দশ্রী, গাজীপুর, টাকাটুকিয়া, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মারালা, নোয়ানগর, রাজধরপুর, পৈন্ডপ, নোয়াগাঁও, সন্তোষপুর, ইকরামপুর, পাঠাবুকা, লামাগাঁও, দুমাল, ভবানীপুর, শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বাগলী, দুদের আউটা, ইন্দ্রপুর, মন্দিয়াতাসহ ৫০টি গ্রাম।

টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা সাজিদুর মিয়া জানান, প্রথম দফা বন্যার পানি ঠিকমতো সরেনি। এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফা বন্যায় বসত বাড়িতে এখন পানি। গত ১০ দিনের ব্যবধানে দু’বার বন্যায় প্লাবিত হওয়ার বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে তাহিরপুরের গ্রামীণ অবকাঠামো অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবারও বন্যায় মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠছে। একই সাথে গবাদিপশু নিয়েও তারা সমস্যায় পড়েছেন। প্রশাসন তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছে।

সুনামগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, যেখানে টিউবওয়েলের ব্যবস্থা নেই সেখানে আমরা অস্থায়ী টিউবওয়েল স্থাপনের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করছি। পানি সংক্রান্ত যেকোনো অসুবিধায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগাযোগ করা হলে তাৎক্ষণিক ভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ জানান, বন্যায় দুর্গতদের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক প্রতিটি উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবরাখবর রাখছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত