কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

১২ জুলাই, ২০২০ ১৮:৪৩

কমলগঞ্জে ধলাই নদীর চর অপসারণ: স্বস্তিতে কমলগঞ্জের বাসিন্দারা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীতে প্রতি বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল নামে। এতে প্রতিবছরই ভাঙ্গনের শিকার হতো নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকা। তবে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ধলাই নদীর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে চর অপসারণের কাজ করায় চলতি বর্ষা মৌসুমে বন্যার ঝুঁকি কমেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, ধলাই নদীতে আঁকাবাঁকা ও ইউ আকৃতির অসংখ্য চর থাকার ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হতো। অল্প বর্ষণেই উজানের পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদী ফুলে ফেঁপে উঠতো প্রায়সই। প্রবল স্রোতে বাঁক ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিত প্রায় সময়ই। নদী ভাঙনের কারণে সেখানকার বাড়িঘর, ফসলি জমি ও গ্রাম্য রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়ে আসছিলো বহু বছর ধরে। এ কারণেই ধলাই নদীকে কেউ কেউ কমলগঞ্জবাসীর দুঃখ হিসেবে মনে করতেন। এ নিয়ে বানবাসী মানুষ ও কৃষকসহ বিভিন্ন মহলেরদ দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো ধলাই নদী খনন ও সংস্কারের জন্য।

স্থানীয়রা জানান, বিগত বছরগুলোতে বর্ষা মৌসুমে ধলাই নদীর একাধিক স্থানে ভাঙন দিয়ে বন্যার পানি ঢুকে তলিয়ে গিয়েছিল বাড়ি ঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কৃষকের শত শত একর ফসলি জমিসহ মাছের ঘের। ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভাঙ্গনের প্রধান কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল ধলাই নদীর গভীরতা কম ও ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিরক্ষা বাঁধের বিপরীত পাশে নদী গর্ভে জেগে উঠা বালু চরগুলো।  

প্রতি বছরই ভাঙ্গন রোধে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জরুরী কাজ করানো হত। কিন্তু বিগত ২০১৯ সালের জুলাই মাসে টানা ১২ দিনের মাঝারি ও ভারী বর্ষণের কারণে নতুন নতুন স্থানে ভাঙ্গনসহ পাহাড়ি ঢলে চলমান জরুরী কাজেরও ব্যাপক ক্ষতি করে, এক কাজ দুবার করায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীনও হয়েছিলেন অনেক ঠিকাদারগণ। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া বানবাসী মানুষ ও স্থানীয় কৃষকের দুঃখ দুর্দশা লাঘব করতে চর অপসারণ কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড।
 
বন্যা সমস্যা থেকে উত্তরণে ও ধলাই নদীর স্বাভাবিক নৈব্যতা ফিরিয়ে আনতে স্থায়ী সমাধান হিসাবে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার খাল, জলাশয়, ও নদী পুন:খনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) এর আওতার অংশ হিসাবে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করে ৩টি প্যাকেজে চলতি বছরে ধলাই নদীর ২২টি স্থানে চর অপসারণের কাজ করানো হয়। আর এই চর অপসারণের কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে এখন পর্যন্ত কোথাও নদী ভাঙ্গন দেখা দেয়নি।  

চর অপসারণেই নদী ভাঙ্গন রোধ হয়েছে বলে অনেকই মনে করছেন। চলতি বর্ষা মৌসুমে শুরুতেই ধলাই নদীতে মে মাসের শুরুতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও নতুন করে কোন ভাঙ্গন দেখা যায়নি।

মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু জানান, নদী ভাঙ্গনের ভোগান্তিতে থাকা মাধবপুর ইউনিয়নের ১৫/২০ টি গ্রামের মানুষ বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙ্গন আতংকে থাকতো। চর অপসারণ করায় এ এলাকায় কোন ভাঙ্গন দেখা দেয়নি। তবে হিরামতির বাঁধটি ইউ আকৃতি হওয়ায় সেখানে বøক দেয়াটা অত্যন্ত জরুরী।

কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ জানান, চর অপসারণের আগে প্রতি বছরই পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা নদী ভাঙ্গন দেখা দিত। পানি উন্নয়ন বোর্ড চর অপসারণ করায় বন্যার কবল থেকে এলাকা রক্ষা পেয়েছে। তবে পৌরসভাধীন আলেপুর এলাকাটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

চর অপসারণের ব্যপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক জানান, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে নদী তার পথ পরিবর্তন করায় ধলাই নদীটি মানুষের ভোগান্তির কারণ ছিল। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিত। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চর অপসারণে এলাকার উপকার হয়েছে। তিনি আরো জানান, কমলগঞ্জে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে বøকের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড, মৌলভীবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, ধলাই নদী খনন ও সংস্কারের জন্য ঝুঁকিপ‚র্ণ ২২ টি স্থানে চর অপসারণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আপদকালীন সময়ে ঝুঁকিপ‚র্ণ বাঁধ মেরামত ও অধিক ঝুঁকিপূর্ণস্থানে জিওব্যাগ ফেলানোসহ জরুরী কাজ চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হলে ভোগান্তির অনেকটাই লাঘব হবে বলে তিনি মনে করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত