নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ জুলাই, ২০২০ ১৯:০৯

সিলেটে পথশিশু ও ছিন্নমূলদের নিয়ে পুলিশ সুপারকন্যার জন্মদিন পালন

আয়েশা তাবাসসুম সানভি, এবার তার বয়স ১২ হল। শনিবার (১১ জুলাই) ছিল তার জন্মদিন। তার বাবা সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন। সানভি জানে করোনার এই অসময়ে ঘটা করে জন্মদিন পালন হবে না। কিন্তু বিকেল থেকেই তাদের সরকারি বাসভবনে অনেক মানুষের রান্না হচ্ছে, বেশ কয়েক জাতের ফলও কেনা হয়েছে। তদারকি করছেন বাবা মো. ফরিদ উদ্দিন এবং মা মাহফুজা শারমিন। রাত দশটায় সানভিসহ তিন কন্যাকে নিয়ে তারা উপস্থিত হলেন সিলেটের সুরমা নদীর ধারে, ক্বিনব্রিজের পাশে চাঁদনীঘাটে।

সেখানে জড়ো হয়েছে পথশিশু আর ভবঘুরে ভাসমান মানুষ। সিলেটের টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট এসোসিয়েসন (ইমজা) করোনাকালীন তাদের রাতের খাবার বিতরণ করে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিয়ে আসছে। ‘ভালোবাসা সহমর্মিতায় করোনা সংকটকালে মানুষের পাশে ইমজা’ এই স্লোগান নিয়ে সংগঠনটি চেষ্টা করছে অনেকে যারা ছোটোখাটো অপরাধে জড়িত তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে।

সানভি, জানভি আর জারাভি এই তিন কন্যাকে নিয়ে মো. ফরিদ উদ্দিন ও মাহফুজা শারমিন দম্পতি নিজেদের ঘরে তৈরি খাবার আর ফল বিলিয়ে দিলেন পথশিশু আর ভাসমান মানুষের মধ্যে। বড় মেয়ের জন্য পুলিশ সুপারের এটিই ছিল জন্মদিনের আয়োজন। সবাইকে নিয়ে বাঁচা, মানুষের জন্য কিছু করার প্রেরণা তিনি নিজ কন্যাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান। তবে খাবার বিতরণের আগে তিনি কাউকে বলেননি যে এটি জন্মদিনের আয়োজন।

ইমজার এই কর্মসূচিতে অনেক হৃদয়বান মানুষই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে পুলিশ সুপারও আছেন। কিন্তু শনিবারের রাতটা ছিল অন্যরকম। পথশিশুদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিল মূলত তিন শিশুই। মেয়েদের নিয়ে খাবার বিতরণের পরই তিনকন্যার জননী মাহফুজা শারমিন জানালেন আজকের আয়োজনটি তার বড়কন্যা সানভির জন্মদিন উপলক্ষে। ইমজার সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য বিষয়টি যেমন ছিল প্রেরণাদায়ক তেমনি তিনকন্যার চোখেও ছিল খুশির ঝিলিক।

বিজ্ঞাপন

লাঠির বদলে খাবার আর ফলমূল নিয়ে আসা পুলিশ দেখে যারপরনাই খুশি আর বিস্ময় পথশিশু আর ছিন্নমূল মানুষের চোখেও। পুলিশ সুপারের সাথে সেখানে উপস্থিত হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফুর রহমান, কোতোয়ালি থানার সহকারি পুলিশ কমিশনার নির্মল চক্রবর্তী এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি সাইফুল আলমও।

খাবার বিতরণ শেষে ব্রতচারী সংগঠক বিমান তালুকদারের পরিচালনায় 'জয় জয় সোনার বাংলা' গান গেয়ে সবাই মিলে সানভিকে জানানো হয় জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

ইমজার সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রীর সঞ্চালনায় হয়ে যায় সংক্ষিপ্ত একটি সভাও। ইমজার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মঈন উদ্দিন মনজু, সাবেক সভাপতি ও কর্মসূচির সমন্বয়ক আশরাফুল কবির, সহ সভাপতি আনিস রহমান, সহ সাধারণ সম্পাদক প্রত্যুষ তালুকদার, সাবেক কোষাধ্যক্ষ মারুফ আহমেদ, সদস্য শফি আহমেদ, এনটিভি ইউরোপের প্রতিনিধি সাজলু লস্কর, সংস্কৃতিকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী প্রলয় দে, সিরাজ উদ্দিন শিরুল, রিপন আহমদ ফরীদি, জাহাঙ্গীর আহমদ, অলক চৌধুরী, বাপন তালুকদার, গোপ নন্দলাল, মাহবুব রহমান, মুরাদ বক্স, সিলেট সিটি কর্পোরেশন ড্রাইভার কল্যাণ সমিতির সভাপকি রফিক মিয়া প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।

নিজের বক্তব্যে পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, করোনাকালে সিলেট জেলা পুলিশ প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে। ব্যক্তিগতভাবেও দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করার মানসিকতা আমি ধারণ করি। সেটি নিজের কন্যাদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে চাই। তারা যেন শুধু নিজের জন্য না বাঁচে, মানুষের জন্য কিছু করাই তাদের জীবনের ব্রত হয়।
ইমজার স্বেচ্ছাসেবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে পুলিশ সুপারের সহধর্মীনি মাহফুজা শারমিন বলেন, নিজের আনন্দ বঞ্চিত মানুষের সাথে ভাগাভাগি করে যে তৃপ্তি তার তুলনা নেই।

ইমজার মানবিক কর্মসূচির সমন্বয়ক আশরাফুল কবির বলেন, এই দুঃসময়ে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে এটিই আমাদের আশাবাদী করে। আমরা সবাই মিলে একটি মানবিক সমৃদ্ধ দেশ গড়তে পারব।

পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইমজার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মঈন উদ্দিন মনজু বলেন, একজন মানবিক কর্মকর্তা হিসেবে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন এরই মধ্যে সুপরিচিত হয়েছেন। উনার মানবিকতা ও নেতৃত্বের এই গুণাবলি পুলিশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল করছে। মানুষ পুলিশকে বন্ধু ভাবছে এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আমরা প্রত্যাশা করি তার কন্যাত্রয় তার এই মানবিক গুণাবলি ধারণ করে দেশের জন্য আরও বড়ো অবদান রাখবে।

প্রসঙ্গত করোনা পরিস্থিতি সুরমা নদীর তীরে ক্বীনব্রিজের নিচে ছিন্নমূল, ভবঘুরে ও ছোটোখাটো অপরাধের সাথে জড়িতদের করোনা সংক্রমণ রোধ ও অপরাধ থেকে দূরে রাখার উদ্দেশ্যে দুমাসেরও বেশি সময় ধরে স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে রাতের খাবার বিতরণ করে আসছে ইমজা। এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন হৃদয়বান ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত