হৃদয় দাশ শুভ, শ্রীমঙ্গল

৩০ জুলাই, ২০২০ ০১:৩৭

সাদা চা, রঙিন স্বপ্ন

সাদা চা! নাম শুনেই অবাক হলেন নিশ্চয়ই? অবাক হওয়ারই কথা কারণ বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ এই সাদা চা নামের সাথে পরিচিত না৷ বাংলাদেশি চা প্রেমীরা বেশীরভাগ সময় ই রং চা, দুধ চা এবং সবুজ চা (গ্রীণ টি) পান করে অভ্যস্ত কিন্তু তার বাইরেও যে একধরনের চা পাতা আছে সেই সম্পর্কে বেশিরভাগ চাপ্রেমীদেরই ধারণা নেই৷

এদেশে সাদা চা খুব সহজলভ্য না, এদেশে সাদা চা উৎপাদিত হয় খুব সীমিত পরিসরে অবং উৎপাদিত চা পাতার সিংহভাগই রপ্তানির মাধ্যমে চলে যায় বিভিন্ন দেশে৷

কিন্তু এবারই প্রথম দেশে উৎপাদিত সিলভার নিডেল গ্রেডের ‘হোয়াইট টি’ চট্টগ্রামের চা নিলামে উঠেছে। প্রতিকেজি চা বিক্রি হয়েছে আড়াই হাজার টাকায়।

সোমবার (২৭ জুলাই) চট্রগ্রামের আগ্রাবাদে প্রগ্রেসিভ টাওয়ারে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়।

ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) চাম্পারাই চা বাগানে উৎপাদিত ১০ কেজি হোয়াইট টি চট্টগ্রাম নিলামে ক্যাটালগভুক্ত করে পূর্ব বাংলা ব্রোকারস। এই সাদা চা পরে কিনে নিয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল স্টেশন রোডের চা সাপ্লাইয়ার পদ্মা টি সাপ্লাই।

পূর্ব বাংলা ব্রোকারস লিমিটেডের পরিচালক আরিফুর রহমান শাহীন বলেন, চট্টগ্রাম চা নিলাম কেন্দ্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো হোয়াইট টি উঠলো এবং নিলামে ওঠা সবহুলো চা বিক্রি হয়ে গেলো।

চা ব্যবসায়ীদের সংগঠন চা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, এই চায়ের গ্রেড সিলভার নিডেল। এ চায়ের জন্য বিশেষ যত্নের সঙ্গে পাতা বাদ দিয়ে শুধু কুঁড়িটাই সংগ্রহ করা হয়। তাই ইচ্ছা থাকলেও সাদা চায়ের খুব বেশি উৎপাদন হয় না। দেশের মাত্র কয়েকটি চা বাগানে সীমিত পরিসরে এ চা উৎপাদন হচ্ছে। সাদা চায়ের ক্রেতারা মূলত বিদেশি পর্যটক ও দেশের শৌখিন চা প্রেমীরা।

চা বিশেষজ্ঞরা জানান, সাদা চা আসলে সাদা নয়। এই চা ফ্যাকাশে হলদেটে রংয়ের হয়।

দেশে প্রথমবারের মত সাদা চা কেনা প্রতিষ্ঠান "পদ্মা টি সাপ্লাই" এর স্বত্তাধিকারী মেঘনাদ হাজরা বলেন, এই সাদা চা নিয়ে আমরা বিশাল স্বপ্ন দেখি৷ প্রায়শই দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ক্রেতারা আমাদের কাছে খুবই উৎকৃষ্টমানের চায়ের খোঁজ করেন কিন্তু তাদের তৃষ্ণা মেটানোর মত চা খুঁজে পেতে আমাদের কষ্ট হয়৷
এখন এই সাদা চা দিয়ে আমরা চেষ্টা করবো তাদের চা তৃষ্ণা মেটানোর৷ এই সাদা চা আগে শুধু বিদেশী পর্যটক এবং উচ্চবিত্ত শৌখিন চা পিপাসুরা খেতে পারতেন কিন্তু এখন আমরা এই চা কে একেবারে মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে নিয়ে আসতে চাই, যাতে তারাও এই চায়ের স্বাদটা উপভোগ করতে পারেন। সাদা চা কে জনপ্রিয় ও সহজলভ্য করাই আমাদের লক্ষ্য৷

টি ট্রেডার্স অ্যান্ড প্লান্টারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সদস্য সচিব জহর তরফদার বলেন, সাদা চায়ের খুচরা পর্যায়ে সংযুক্তি চা শিল্পের উন্নয়নের একটা বড় ধাপ৷ সাদা চায়ের মত উন্নতমানের চা উৎপাদন ও বিপণন বৃদ্ধি পাওয়ার মাধ্যমে আমাদের দেশের চা শিল্প আরো উন্নত হবে৷ ক্রেতারা যেমন মানসম্পন্ন চা খেতে পারবেন পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও এর থেকে লাভবান হবেন৷

জানা যায়, সাদা চা দেখতে অনেকটা গ্রিন টি’র মতো। তবে কিছুটা পার্থক্য আছে। হোয়াইট টি গরম পানিতে দেয়ার পর রূপালী আভা দৃশ্যমান হয়। তাই নামকরণ হয়েছে হোয়াইট গোল্ড। বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় এই চা রপ্তানি করা হয়। কাজী এন্ড কাজী এই চা রপ্তানি করে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সাদা চা চীনে প্রাথমিকভাবে চাষ করা হয়েছিল, বিশেষ করে ফুজিয়ান প্রদেশে, কিন্তু অতি সম্প্রতি এটি পূর্ব নেপাল, তাইওয়ান, উত্তর থাইল্যান্ড, গল (দক্ষিণ শ্রীলংকা) ভারতে এবং বাংলাদেশেও খুব সীমিত আকারে উৎপাদন করা হচ্ছে। সাদা চা ক্যামেলিয়া সাইনেসিস নামক গাছের কুঁড়ি থেকে তৈরী করা হয়। গাছের কুঁড়িকে সূর্যের তাপে বিবর্ণ করা এবং শুকানো হয়।

"সাদা চা" মূলত ক্যামেলিয়া সাইনেসিস গাছের অনুদ্ঘটিত কুঁড়ির উপরের রূপালি-সাদা আঁশ থেকে নেয়া হয়েছে, যে আঁশের কারণে গাছটি সাদাটে রঙ-এর চেহারা পায়।

বাংলাদেশ চা সংসদ, সিলেটের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী জানান, বর্তমানে সাদা চায়ের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো সংজ্ঞা নেই। মূলত সাদা চা হলো একধরণের সংক্ষিপ্ত প্রক্রিয়ায় অন্যান্য প্রসেসিং ছাড়াই শুধু শুকানোর মাধ্যমে উৎপন্ন চা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত