বড়লেখা প্রতিনিধি

০৪ আগস্ট, ২০২০ ২২:১০

সংক্রমণভীতি নিয়েও হাকালুকিতে হাজারো পর্যটকের ভিড়

জলের বুকে ঢেউ তুলে একটার পর একটা ইঞ্জিনচালিত নৌকা ঢুকছে হাওরে। সবগুলোই পর্যটকে ঠাসা। হাল্লা গ্রামের পাড়ে নৌকার জন্য অপেক্ষমান অনেক মানুষ। হাওর ঘুরে একটা নৌকা পাড়ে ভিড়লেই ভাড়া নিয়ে মাঝিদের সঙ্গে পর্যটকদের চলছে দর-কষাকষি। কার আগে কে নৌকায় ওঠবেন, এই নিয়ে প্রতিযোগিতা।

গত সোমবার (৩ আগস্ট) বিকেলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের হাকালুকি হাওর এলাকার গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।

দূরদূরান্ত থেকে আসা অনেক পর্যটক নৌকা না পেয়ে হাওরে ঘুরতেই পারেননি। ফিরেছেন হতাশ হয়ে।

পাশেই হাকালুকি-কনোনগোবাজার সড়কে পার্কিং করা মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি। দূরের পর্যবেক্ষণ স্তম্ভ (ওয়াচ টাওয়ার), বন বিভাগের কার্যালয় ও হাওরপাড়ে পর্যটকদের বিশ্রামঘরে ছিলো নানাবয়সী মানুষের ভিড়।

করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই মাধবকুণ্ড ইকোপার্কসহ সকল পর্যটন স্পট বন্ধ। তাই ঈদের ছুটিতে উন্মুক্ত হাকালুকি হাওরকে বেছে নিয়েছেন পর্যটকরা। করোনা সংক্রমণের কারণে গত কয়েকমাস ঘোরাফেরা হয়নি। ঘরবন্দি সময়ের একঘেয়েমি কাটাতে সংক্রমণভীতি নিয়েও একটু স্বস্তির আশায় প্রকৃতির কাছে ছুটে গেছেন। মুক্ত আকাশের নিচে হাওরের অপার সৌন্দর্য, উন্মুক্ত বাতাস, সবুজ প্রকৃতি উপভোগ করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাওরের ওয়াচ টাওয়ার, বনবিভাগের বিট কর্মকর্তার কার্যালয়ের ছাদ ও হাওরপাড়ে পর্যটকদের বিশ্রামঘরে লোকে লোকারণ্য। ওয়াচ টাওয়ার ও বিট কার্যালয় থেকে লাফ দিয়ে অনেকে হাওরের পানিতে ঝাঁপাঝাপি করছেন। কেউ সাঁতার কাটছেন। ছবি তুলছেন কেউ। অনেকে নৌকায় দল বেঁধে গান বাজিয়ে হাওরে ঘুরছেন। হাকালুকি হাওর ঘিরে মানুষের এই ভিড় সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে একমাত্র বিট কর্মকর্তাকে।

বিজ্ঞাপন



বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হওরের বেশিরভাগ অংশই পড়ছে বড়লেখা উপজেলায়। হাওর-সংলগ্ন তালিমপুর ইউনিয়নের হাল্লা গ্রামে রয়েছে মনোহর আলী মাস্টারের পাখিবাড়ি। সারা বছর এই বাড়িতে পাখি থাকায় বাড়িটিকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া হাওরের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, বিট কর্মকর্তার কার্যালয় ও পর্যটকদের বিশ্রামঘর। বর্ষা ও শীতে হাকালুকির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ এবং পাখিবাড়ি, হিজল-করচের বাগান দেখতে ভিড় করেন মানুষ। প্রতিবছর দুই ঈদেই হাওর এলাকায় মানুষ আসেন। তবে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ জন। কিন্তু এবার অন্যান্য স্পট বন্ধ থাকায় গত শনিবার থেকে সোমবার এসেছেন প্রায় ১২ থেকে ১৩ হাজার পর্যটক। এতে পর্যটনকেন্দ্রিক স্থানীয় কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কেউ নৌকা চালিয়ে, কেউ পর্যটকদের সহায়তা করে আবার কেউ যানবাহন পাহারা দিয়ে আয় করছেন।

বন্ধুদের নিয়ে হাওরে ঘুরতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহি আবিদ বলেন, ‘করোনাদুর্যোগে মাধবকু-সহ সব পর্যটন স্পট বন্ধ। কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রকৃতি খুব টানে। হাকালুকি হাওর এলাকাটি উন্মুক্ত। তাই বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছি। অথৈ জলের হাকালুকি হাওর, পাখি বাড়িতে মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ। খুব ভালো লাগছে।’

বনবিভাগের হাকালুকি বিটের দায়িত্বে থাকা জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট তপন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘করোনাকালে সকল পর্যটন স্পট বন্ধ থাকলেও হাকালুকি হাওরটি উন্মুক্ত। অন্যান্য স্পট বন্ধ থাকায় মানুষ এখানে ঘুরতে আসছে। ঈদের আগে প্রতিদিন ২ থেকে ৩শ’ মানুষ আসত। এখন গড়ে প্রতিনিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষ আসতেছে। এখানে আমি একাই সামাল দিচ্ছি। নিরাপত্তা দেওয়া কষ্ট হচ্ছে। আরো কিছু স্টাফ পদায়ন করলে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হত। মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে পারত।’

বিটের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলতেই হাকালুকি হাওরে সন্ধ্যা নেমেছে। একঝাঁক পানকৌড়ি মাথার উপর দিয়ে উড়ে গেল পাখি বাড়ির দিকে। দূরে দূরে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়ানো জেলে নৌকাগুলোতে বাতি জ্বলে ওঠেছে। হাওরে জাল ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলেরা। একসময় পর্যটকবোঝাই শেষ নৌকাটি হাওর থেকে যাত্রা করেছে পাড়ের দিকে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত