নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ আগস্ট, ২০২০ ০১:০৯

প্রস্তাবনা প্রদানের ছয় বছর পর কার্যক্রম শুরু

সিসিক সম্প্রসারণের উদ্যোগ

প্রস্তাবিত সম্প্রসারিত সিলেট সিটি করপোরেশনের নকশা

উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো ছয় বছর আগে। ছয় বছর ধরে আটকে ছিলো প্রস্তাবনা। অবশেষে ছয় বছর পর সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সম্প্রসারণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে রোববার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সিলেট জেলা প্রশাসন। এরফলে আকার বাড়তে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে ছোট এই সিটি করপোরেশনের।

সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এই গণবিজ্ঞপ্তিতে সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বেশ কিছু এলাকাকে সিলেট সিলেট সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

যদিও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলছেন, গেজেটেড মাস্টারপ্ল্যানে সিসিককে সম্প্রসারণ করে ৮৫.১৫ বর্গকিলোমিটারে উন্নিত করার নির্দেশনা ছিলো। তবে জেলা প্রশাসন সিলেট সিটি করপোরেশনকে প্রায় ৫৭ বর্গকিলোমিটারে উন্নিত করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

তিনি বলেন, গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ সিসিকের এলাকা সম্প্রসারণের একটি প্রাথমিক ধাপ। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষন করছি।

আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে ছোট সিটি করপোরেশন সিলেট। ২৬ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই নগরকে ২০১৪ সালে সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয় সিসিক। নগরীর বর্তমান আকারের প্রায় ছয়গুণ আয়তন বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব জমা দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে। তবে দীর্ঘদিন ধরে আটকে ছিল এ প্রস্তাবনা।

এ অবস্থায় গত বছরের নভেম্বর সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিটি করপোরেশন সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিয়ে সিলেট-১ আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নগরীর আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাবে একাত্মতা পোষণ করেন। এ ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনাও দেন তিনি।

এর প্রায় নয় মাস পর বুধবার নগর সম্প্রসারণে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসন। গণবিজ্ঞপ্তিতে সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভূক্ত করার জন্য প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের কোনো পরমার্শ বা অভিযোগ থাকলে আগামী ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন


 
গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে সিলেট সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হতে যাওয়া এলাকাগুলো হল- সিলেট সদর উপজেলার টুকেরবাজার ইউনিয়নের কুমারগাঁও, মইয়ারচর (দাগ নম্বর ৭৭, ৮২, ৮৩, ৮৯, ৯০, ৯১ ব্যাতীত) টুকেরবাজার ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ভূমি, খুরুমখলা শাহপুর, আখালিয়া (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যাতীত অবশিষ্ট ভূমি)।

খাদিমনগর ইউনিয়নের কুমারগাঁও, খাদিমপাড়া ইউনিয়নের সাদিপুর ১ম খন্ড (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যাতীত অবশিষ্ট ভূমি), টিলাগড়, দেবপুর (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যাতীত অবশিষ্ট ভূমি), কসবা কুইটুক, সুলতানপুর চক, পেশনেওয়াজ।

টুলটিকর ইউনিয়নের সাদিপুর ১ম খন্ড (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যাতীত অবশিষ্ট ভূমি), টিলাগড়, দেবপুর ( পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যাতীত অবশিষ্ট ভূমি)।

দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের হবিনন্দি (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যাতীত অবশিষ্ট ভূমি), মনিপুর ( পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যাতীত অবশিষ্ট ভূমি), আলমপুর ( পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যাতীত অবশিষ্ট ভূমি), গোটাটিকর (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যাতীত অবশিষ্ট ভূমি)।

বরইকান্দি ইউনিয়নের পিরিজপুর, ধরাধরপুর, বরইকান্দি (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যাতীত অবশিষ্ট ভূমি), গোধরাইল (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যাতীত অবশিষ্ট ভূমি)।
তেতলী ইউনিয়নের ধরাধরপুর, বরইকান্দি (অবশিষ্টাংশ) (পূর্বে সিটি করপোরেশন অন্তর্ভুক্ত অংশ ব্যাতীত অবশিষ্ট ভূমি), বলদী (আংশিক)।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ১৮৭৮ সালে পৌনে দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছিল সিলেট পৌরসভা। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে পরিধি বাড়ে। তখন ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার করা হয় সিটি করপোরেশনের আয়তন। আয়তন ও লোকসংখ্য কম হওয়ায় নগরীর ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় সিসিক কর্তৃপক্ষকে। এছাড়া এবড়োথেবড়ো মানচিত্রে নগর গড়ে ওঠায় নগর ব্যবস্থাপনায়ও সমস্যায় পড়তে হয়। ফলে সিটি করপোরেশন গঠনের প্রায় এক যুগ পর ১৬০ দশমিক ৬২ বর্গকিলোমিটার আয়তনে মহানগর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

সিসিকের জনসংযোগ দপ্তর জানায়, সিলেট নগরীর বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। তবে নগরের আশপাশের এলাকার আরও কয়েক লাখ বাসিন্দা সিসিকের নাগরিক সুবিধা ভোগ করেন। কিন্তু ওইসব এলাকা নগরের ভেতরে না হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না। এতে সিটি করপোরেশনের রাজস্বে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত