নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ আগস্ট, ২০২০ ০০:৫৬

জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে শাবি শিক্ষার্থীরা, অপ্রতুল নজরদারি

দেশে জঙ্গিবাদি কর্মকাণ্ডের সাথে বারবার জড়িয়ে পড়ছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী জঙ্গি কার্যক্রমের সাথে জড়িয়ে পড়ছে বলেও অভিযোগ ওঠছে। বিভিন্ন সময় গোয়েন্দারাও শাবির শিক্ষার্থীদের জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে।

সর্বশেষ চলতি সপ্তাহে জঙ্গি সন্দেহে সিলেট থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে দুইজনই সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে নাইমুজ্জামান নামের শাবির এক শিক্ষার্থী নব্য জিএমবি’র সিলেটের সমন্বয়ক বলেও জানিয়েছেন পুলিশ।

নাইমুজ্জামান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তার সাথে গ্রেপ্তার হওয়া সানাউল ইসলাম সাদি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী।

এরআগেও বিভিন্ন সময় জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ততার অভিযোগে শাবি শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই অভিযোগে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ জন শাবি শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন উগ্রবাদী গোষ্টি সংক্রিয় থাকারও অভিযোগ ওঠেছে।

বিভিন্ন সময় এমন অভিযোগ পাওয়া গেলেও শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড থেকে ফেরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তেমন উদ্যোগ ও নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাধা প্রদানেরও অভিযোগ ওঠেছে অনেক সময়।

নজরদারি কার্যক্রম স্থিমিত হয়ে আসার কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যান ও পরামর্শ উপদেষ্ঠা অধ্যাপক রাশেদ তালুকদারও। সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে তিনি বলেন, দেশে জঙ্গিরা ব্যাপক তৎপরতা শুরু করার পর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র এতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠে। তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়মিত ছাত্রদের একটি তালিকা করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জমা দেই। এছাড়া র্আও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। তবে পরে জঙ্গি তৎপরতা কমে হয়ে যাওয়ায় আমাদের কার্যক্রমও স্থিমিত হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন



সম্প্রতি দুই ছাত্র জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণমাধ্যমের সূত্রে এ তথ্য আমি জেনেছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে পারিনি।  
 
২০১৫ সালে ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজার এলাকায় প্রকাশ্যে নিজ বাসার সামনে জঙ্গি হামলায় খুন হন বিজ্ঞান লেখক অনন্ত বিজয় দাশ। এই হামলার জড়িত সন্দেহে শাবির এক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অনন্ত নিজেও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। আর ২০১৭ সালের ৩ মার্চ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে হামলার শিকার হন এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

২০১৮ সালে গোয়ান্দাদের দেওয়া এক তথ্যে জানা গেছে, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ শিক্ষার্থী জঙ্গি সংগঠন এবিটি’র সাথে সম্পৃক্ত বলেও সেসময়  জানায় গোয়েন্দারা।

২০১৬ সালের জুলাইয়ে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গি তৎপরতায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের তথ্য জানা যায়। শুরুর দিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নাম বেশি আসলেও পরে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততার তথ্যও পাওয়া যায়। এর মধ্যে জঙ্গি তৎপরতায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে সিলেটের এই বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ছাত্র আটক হয়েছেন।
শাবি ক্যাম্পাসে হিজবুত তাহির, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের গোপন তৎপরতা রয়েছে বলেও  বিভিন্ন সময় গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আকারে জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠার পর কোন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অনুপস্থিত রয়েছেন কিনা তা পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করতে বিশ্ববিদ্যলয় প্রশাসনকে বলা হয়। এছাড়া কোন শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষকের বিষয়ে সন্দেহ হলে তাও পুলিশকে অবহিত করতে বলা হয়।

বিজ্ঞাপন



এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোতির্ময় সরকার বলেন, জঙ্গিবাদি কার্যক্রম রুখতে আমাদের নজরদারি ও তৎপরতা সবসময়ই অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারেও আমরা সতর্ক রয়েছি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও সচেষ্ট হতে হবে।

এদিকে, সিলেট থেকে চলতি সপ্তাহে  গ্রেপ্তার নব্য জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) পাঁচ সদস্যকে রাজধানীর পল্টনে পুলিশের চেকপোস্টের পাশে গত ২৪ জুলাই বোমা বিস্ফোরণের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

নাইমুজ্জামান ও সানাউল ইসলাম সাদি ছাড়াও রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে মদনমোহন কলেজের শিক্ষার্থী মির্জা সায়েম এবং অটোরিকশা চালক আব্দুর রহিম জুয়েল ও রুবেল আহমেকে।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত রোববার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত সিলেটের মিরাবাজার, টুকেরবাজার ও দক্ষিণ সুরমায় অভিযান চালিয়ে ওই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ল্যাপটপ ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। এই দলটি ২৩ জুলাই হজরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজারে হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে জানান তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত