সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ১৮:১৭

বোনের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন

বড় বোনকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে যারা মেরেছে তাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ফেঞ্চুগঞ্জ থানার কটালপুর পালপাড়া গ্রামের প্রদীপ পালের মেয়ে প্রিয়াংকা রাণী পাল।

বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বেলা ২ টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানান তিনি।

সম্প্রতি নিহত লাকীর শ্বশুড় হলধর চন্দ্র পাল সংবাদ সম্মেলন করে যে মিথ্যাচার করেছেন তার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে স্কুল শিক্ষিকা প্রিয়াংকা রাণী পাল লিখিত বক্তব্যে বলেন, তারা চার বোন। লাকী রাণী পাল’র সাথে ২০১৮ সালের ১ মার্চ দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার সেনগ্রামের হলধর চন্দ্র পালের পুত্র স্কুল শিক্ষক হিমাদ্রী পালের বিয়ে হয়। বর্তমানে তার দেড় বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। লাকি বিয়ের পূর্ব হতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট অফিসে বিশ হাজার টাকা বেতনে কম্পিউটার ডাটা অপারেটর পদে চাকুরী করতেন। বিয়ের পর থেকে লাকির স্বামী ও শ্বশুরালয়ের লোকজন বেতনের সমস্ত টাকা নিয়ে নিত। শুধু তাই নয়, হিমাদ্রী পাল প্রায়ই শ্বশুর বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে দিতে লাকিকে চাপ প্রয়োগ করতেন। কিন্তু তাদের কথায় সায় না দেয়ায় তারা প্রায়ই লাকিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো।

প্রিয়াংকা রাণী পাল বলেন, অবুঝ সন্তানের দিকে থাকিয়ে আমার বোন অনেক সময় মুখ বুঝে সব সহ্য করে যেত। আর লাকির বেতনের টাকা প্রতিমাসে চেকের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক থেকে তার স্বামী উত্তোলন করে নিয়ে যেত। বেতনের পুরো টাকা তারা নিয়ে গেলে ও তাকে অফিসে যাতায়াতের টাকাটা দিতে কার্পণ্য করতো। বিশেষ করে সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে গাড়ি ভাড়াসহ যাতায়াত খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিনের জন্য টাকা বাড়িয়ে দিতে তার স্বামীকে বলেন লাকি। কিন্তু তারা টাকা না দিয়ে উল্টো তাকে তিরস্কার করে। ফলে কষ্ট করে অফিসে যাতায়াত করতো লাকি।

তিনি বলেন, যেদিন তাকে মেরে ফেলা হয় ঐ দিন সকালে বাবার বাসায় এসে খাওয়া-দাওয়া করে যায় লাকি। তখন সে বলে বেতনের টাকা নিয়ে তার স্বামী, শাশুড়িসহ অন্যরা খুব ঝামেলা করছে। বিশেষ করে জুলাই মাসের বেতনের টাকা না দেওয়াতে স্বামী ও শাশুড়ি তার উপর খুব খেপেছে। গত ৯ আগস্ট আনুমানিক রাত সাড়ে ৮ টায় বাবার মোবাইলে লাকীর শ^শুড় কল দিয়ে বলেন, লাকীর শরীরে আগুন লেগেছে। ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে টিকেট সংগ্রহ করুন। এমন খবর শুনে সবাই হতভম্ব হয়ে দ্রæত হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন বোনের শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ আগুনে পুড়েছে। এমনকি মাথার চুল পর্যন্ত পুড়ে গেছে।

লাকীর শ^শুড় হলধর পাল এবং তার দেবর হিমেল পাল তাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তখন বোনের সাথে কথা বললে তাকে কিভাবে এবং কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে বিস্তারিত জানেন প্রিয়াংকা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঐ দিন রাত সাড়ে ৪ টার দিকে লাকি মারা যান।
সংবাদ সম্মেলনে প্রিয়াংকা রাণী পাল বলেন, তার বোনকে আহত অবস্থায় যখন হাসপাতালে নেয়া হয়, তখন তার স্বামী হিমাদ্রী পাল ও শ^াশুড়ী শিখা রাণী পাল আসেনি। এমনকি মারা যাওয়ার পর ও তার স্বামী ও শ^াশুড়ী তাকে নিতে হাসপাতালে আসেনি। এতেই রহস্য আরও ঘণীভৃত হয়। লাকী মারা যাওয়ার পর ময়না তদন্ত শেষে তার লাশ নিয়ে তাদের গ্রামের বাড়ি সেনগ্রামে চলে যান সবাই। ১০ আগস্ট সকাল ৯ টার দিকে পুলিশ ও লাকীর শ^শুর তার বাবাকে থানায় যেতে বলেন। এ সময় তারা থানার বাইরে তার বাবাকে হুমকি দিয়ে বলে, তাদের কথামত স্বাক্ষর না দিলে তারা বোনপুত্র (ভাগনা) হিরক পালকে মেরে ফেলবে। হুমকি ও বোনের শিশু সন্তানের প্রাণের নিরাপত্তার কথা ভেবে বোনের মৃত্যু সংবাদটি তার বাবা লিখিতভাবে মোগলাবাজার থানাকে অবহিত করেন। আর বোনের শ্বশুর বাড়ির লোকদের আগের তৈরি কাগজে জোরপূর্বক সাক্ষর নেয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ১০ আগস্ট রাত দশটায় তাদের পঞ্চায়েতি শ^শানঘাটে লাকীকে সৎকার করা হয়। হাসপাতালে বোনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি জানতে পারেন ৯ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় লাকী রাণী পালকে তার স্বামীর বাড়ির পাসিসে প্রথমে তার স্বামী হিমাদ্রী পাল আক্রমণ করে। পরে লাকীর শ^াশুড়ী পেট্রোলের বোতল নিয়ে আসার জন্য লাকীর দেবর হিমেলকে বলেন। হিমেল তার বাবার কক্ষ থেকে পেট্রোলের বোতল এনে তার ভাইকে দেয়। এ সময় সকলে হাতে মুখে চেপে আঁকড়ে ধরে রাখে। এ সুযোগে হিমাদ্রী পাল লাকীর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। লাকীর সমস্ত শরীর প্রায় পুড়ে যাবার পর তারা হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অকাল মৃত্যু ঘটে। লাকীর স্বামী, শ^াশুড়ী, দেবর ও শ^শুর মিলে পরিকল্পিতভাবে তার বোনকে হত্যা করেছে।

এ ঘটনায় প্রিয়াংকা বাদী হয়ে গত ১৭ আগস্ট লাকীর স্বামী হিমাদ্রী পালকে প্রধান আসামি করে এসএমপির মোগলাবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাকী আসামীরা হলেন, লাকীর শাশুড়ি শিখা রাণী পাল, দেবর হিমেল পাল এবং শ^শুর হলধর চন্দ্র পাল। পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন আসামিকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি।


প্রিয়াংকা রাণী পাল আরও বলেন, লাকির শ্বশুর সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন রান্না করার সময় কুপি বাতি থেকে না কি শরীরে আগুন লেগেছে। অথচ লাকীর স্বামী হিমাদ্রী মোবাইলে বলেছেন তার বোন বাথরুমে ডুকে তার শরীরে নিজে নিজে আগুন দিয়েছে। তখন হিমাদ্রীর মা নাকি অন্য একটি কক্ষে আটকা ছিলেন। হিমাদ্রীর এসব বক্তব্য পুরোটাই মোবাইলে রেকর্ড করা হয়। মূলত হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দিতেই একের পর এক ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার করা হচ্ছে। তাই লাকী রাণী পালের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত আসামিদের দ্রæত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত লাকি রাণী পালের পিতা প্রদীপ পাল, মা প্রতিমা রাণী পাল, বোন পিংকি পাল, পূরবী পাল ও কাকা পরিতোষ পাল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত