নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ২৩:০৪

ছয় মাস পর আবার গানে-নাটকে সরব কবি নজরুল অডিটরিয়াম

সম্মিলিত নাট্য পরিষদের ৩ যুগপূর্তি

করোনা সংকটের কারণে জ্বলেনি নাট্যমঞ্চের আলো। টানা প্রায় ছয় মাসের বিরতি। নাট্যকর্মীরা অপেক্ষায় ছিলেন মঞ্চে ফেরার। তবে তাদের এ অপেক্ষার অবসান হয়েছে সিলেটের সম্মিলিত নাট্য পরিষদের ৩ যুগপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। রবিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নগরের রিকাবীবাজার কবি নজরুল অডিটোরিয়াম মূল মঞ্চে ‘‘সকল অন্ধকার দূর করে আলোর প্রত্যাশায়’’ প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে ফের সরব হলো সিলেটের নাট্যাঙ্গন।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে নাটক ‘সুরমা কান্দে’, ‘নূরুলদিনের সারাজীবন’ ও ‘দ্যা মার্চেন্ট অব ভেনিস’ নাটকের মাধ্যমে মুখোমুখি হয়েছেন দর্শক ও শিল্পীরা। দীর্ঘ ছয়মাস পর নাটকের টানে অনুষ্ঠানস্থলে ভিড় করা অসংখ্য দর্শকও মুগ্ধ হয়েছেন তিন নাটকে।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমেদ চৌধুরী মিশু’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্তের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা নাট্যজন নিজামউদ্দিন লস্কর, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত চন্দন, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মোকাদ্দেছ বাবুল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট বাউলশিল্পী আব্দুর রহমান, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের পরিচালক কনোজ চক্রবর্তী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি নিরঞ্জন দে যাদু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য শামসুল আলম সেলিম, বাংলাদেশ নৃত্য শিল্পী সংস্থার সাধারন সম্পাদক নিলাঞ্জনা যুই, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সহ সভাপতি উজ্জল দাস প্রমুখ।

আয়োজকরা জানান, নৃত্যশৈলী সিলেট’র নৃত্যশিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আবৃত্তি পরিবেশন করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী মোকাদ্দেছ বাবুল, সংগীত পরিবেশন করেন গীতবিতান বাংলাদেশের শিল্পীরা। মঞ্চে পর পর তিনটি নাটকের নাট্যাংশ মঞ্চায়িত হয়। সিলেটের আঞ্চলিক নাটক হিসেবে নাট্যকার বিদ্যুৎ করের ‘সুরমা কান্দে’ নাটকে নির্দেশনা দেন আফজাল হোসেন। বাংলাদেশের বিখ্যাত নাটক সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ‘নূরুলদিনের সারাজীবন’ নাটকটির প্রস্তাবনা ও প্রধান দুইটি দৃশ্য নাট্যজন অরিন্দম দত্ত চন্দনের নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হয়। সর্বশেষ নাটক হিসেবে ২০০ নাটকের নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়ার’র ‘দ্যা মার্চেন্ট অব ভেনিস’ নাটকটির কোর্ট দৃশ্য নাট্যজন নিজামউদ্দিন লস্কর’র রূপান্তর ও নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হয়। তিনটি নাটকে সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সদস্য দলসমূহ থেকে ২৫ জন অভিনেতা-অভিনেত্রী অংশ নেন। পরিষদের পক্ষ থেকে বৈষিক মহামারীতে নাটক মঞ্চায়নে বিশেষ অবদানে নাট্যজন নিজামউদ্দিন লস্কর ও নাট্যজন অরিন্দম দত্ত চন্দনকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এছাড়া ৩ যুগপূর্তি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সংগঠন ও শিল্পীকে শুভেচ্ছা স্মারক দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সিলেটের নাটকপাড়া প্রান্তিক চত্ত্বরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে নাট্য পরিষদ। সিলেটের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট’র ২০ সেপ্টেম্বর রবিবার ৩ যুগপূর্তি হলো। দীর্ঘ ৩৬ বছরে সিলেটের নাট্য আন্দোলনসহ সাংস্কৃতিক জাগরণে নাট্য পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। মঞ্চের পাদপ্রদীপের আলোয় বিগত তিন যুগে মঞ্চায়িত হয়েছে অনেক ভাল নাটক। বছরব্যাপী নানা আয়োজনে সিলেটের সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে মুখরিত রেখেছে নাট্য পরিষদ। এছাড়া করোনার দুর্যোগকালীন এই সময়ে সিলেটে সংকটে থাকা সাধারণ মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে নাট্যকর্মীরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত