নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:৩৪

সঙ্কটে থাকা সিলেটের আবাসন খাতে করোনার ধাক্কা

সিলেট দক্ষিণ সুরমা এলাকায় ‘রয়েল সিটি’ নামে একটি আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছে রয়েল হোমস নামের একটি  আবাসন গ্রুপ। করোনা সংক্রমণ শুরুর হওয়ার পর থেকেই স্থবির হয়ে পড়েছে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা। বিক্রি বন্ধ। আগে বিক্রি হওয়া প্লটের কিস্তিও পরিশোধ করছেন না ক্রেতারা।

রয়েল সিটির চেয়ারম্যান ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটের আবাসন খাতে দীর্ঘদিন ধরেই সঙ্কট চলছে। বিশেষত বিশ্বমন্দা শুরুর পর থেকেই। তবে করোনা এসে পুরো আবাসন খাতকে একেবারে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। ছয় মাস ধরে আমাদের বিক্রি বন্ধ। পুরনো কিস্তিও পাচ্ছি না। এমন অবস্থা আরও অনেকদিন চলবে বলেই মনে হচ্ছে।

একই কথা জানালেন সিলেট নগরের জিন্দাবাজারের আনন্দ টাওয়ারের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার জলিলও। তিনি বলেন, ব্যবসা বন্ধ তবে ব্যাংক ঋণ ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে। মুনাফার বদলে ঋণের সুদ দিতেই এখন আমরা দেউলিয়া হওয়ার পথে।

সিলেটের আবাসন খাতের প্রায় সব ব্যবসায়ী একই আক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। করোনার কারণে অব্যাহত লোকসানের মুখে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথাও ভাবছেন অনেকে।

আবাসন ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সিলেটে আবাসন খাতের ক্রেতা মূলত প্রবাসী। প্রবাসীদের উপর নির্ভর করে এই শতাব্দির শুরুর দিকে সিলেটে গড়ে উঠে শতাধিক আবাসন প্রতিষ্ঠান। প্রবাসী বিনিয়োগেও গড়ে ওঠে এর অনেকটি। তবে বৈশ্বিক মন্দা এসে ধাক্কা দেয় সিলেটের আবাসন খাতে। প্রবাসীরা বিনিয়োগ তুলে নেন। নতুন করে ফ্ল্যাট-প্লট ক্রয় বন্ধ করে দেন। এতে করে প্রায় অর্ধযুগ ধরেই ধুকছে সিলেটের আবাসন খাত। আর করোনাভাইরাস এসে ধুকতে থাকা এই শিল্পে অনেকটা শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে।

সরকারের ভুল নীতির কারণেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উল্লেখ করে আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, আমি মে মাসে আমার ফ্ল্যটগুলোর গ্যাস বিল পরিশোধ করতে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ব্যাংক বিল গ্রহণ না করে একসাথে আগস্টে দিতে বলেছে। কিন্তু আগস্টে এসে আমাকে বড় অংকের জরিমানাসহ বিল দিতে হয়েছে।

বিজ্ঞাপন



সিলেটের আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন সিলেট এপার্টমেন্ট এন্ড রিয়েল এস্টেট গ্রুপ (সারেগ) সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে এই সংগঠনটির সদস্য ছিলো ১শ’ ১০ টি প্রতিষ্ঠান। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে টিকতে না পেরে ইতোমধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন সারেগ’র সদস্য রয়েছে প্রায় ৫০টি। তবে করোনার লোকসানে এ বছর আরও অনেক প্রতিষ্ঠানই ব্যবসা গুটিয়ে নেবে বলে জানিয়েছেন সারেগ’র নেতারা।

সিলেটের সদর উপজেলার একটি আবাসন প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সিলেটে আবাসন খাতের মন্দা অনেকদিন ধরেই চলছে। জমির দাম অর্ধেক কমে গেছে। ক্রয় বিক্রয় বন্ধ। তবু ব্যাংক ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। তবু কোনোরকমে এতোদিন টিকে ছিলাম। কিন্তু করোনার পর আর টিকে থাকা সম্ভব হবে না। ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছি আমরা।

সারেগ’র সভাপতি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, সিলেটে আবাসনখাতের ক্রেতারা হলেন প্রবাসীরা। করোনায় প্রবাসীর সঙ্কটে আছেন। ফলে আমাদের নতুন বিক্রি তো বন্ধ আছেই, এমনকি আগে যারা কিনেছিলেন তারাও কিস্তি পরিশোধ করছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। বাকীরাও সময়মত প্লট হস্তান্তর করতে পারবে না।

জানা যায়, মূলত ইংল্যান্ডসহ ইউরোপ প্রবাসীদের আয় কমে যাওয়া, প্রবাসীদের তৃতীয় প্রজন্ম দেশের প্রতি আগ্রহী না হওয়ার কারণে সিলেটের আবাসন খাতে সঙ্কট দেখা দেয়। করোনার প্রভাবে প্রবাসীরাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। অনেকের আয় রোজগার প্রায় বন্ধ। অর্থনীতির এই সঙ্কট আরও অনেকদিন থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ফলে আবাসন খাতের সঙ্কটও সহজে কাটবে না বলে ধারণা সংশ্লিস্টদের।

আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দিয়ে সিলেটের ব্যাংকগুলোও পড়েছে বিপাকে। ঋণের টাকা তুলতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। ইতোমধ্যে বেশকয়েকটি আবাসন প্রতিষ্ঠানকে নিলামে তুলেছে কয়েকটি ব্যাংক।

সারেগ’র সাবেক সভাপতি হাসিন আহমদ বলেন, কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হলেও সিলেটে আবাসন ব্যবসা পরিকল্পনাহীনভাবে অনকেটা হুজুগে গড়ে ওঠেছে। যে যেখানে পারছে আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছেন। এছাড়া অনেকেই আবাসনের নামে ঋণ এনে অন্যখাতে টাকা ব্যবহার করেছেন। সেখানে লাভবান হতে না পেরে ব্যংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। এসব কারণেও ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত