নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ অক্টোবর, ২০২০ ২২:৫৬

পুলিশ ফাঁড়িতে বর্বর নির্যাতন : রায়হানের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন

সিলেটে নগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের নির্যাতনে মারা যাওয়া রায়হান আহমদের শরীরে ১১১ টি আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন ময়না তদন্তকারী  চিকিৎসকরা। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৪টি গুরুতর ছিলো বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়, রায়হানের দুটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলা হয়। মৃত্যুর ২ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে এসব নির্যাতন চালানো হয়।

এছাড়া তার শরীরে চামড়ার নিচ থেকে প্রায় ২ লিটার রক্ত পাওয়া গেছে। রায়হানের লাশের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে এসব তথ্য উল্লে­খ করা হয়েছে।  

সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ রায়হান আহমদের মরদেহের ময়না তদন্ত করে। ফরেনসিক বিভাগ থেকে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়। রায়হান হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রীর দায়ের করা মামলার তদন্তদ করছে পিবিআই।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর রাত ৩টা ৯ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডে স্বাভাবিক অবস্থায় রায়হানকে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে আনা হয়। পরে সকাল ৬টা ২৪ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে ফাঁড়ি থেকে বের করা হয়। ৬টা ৪০ মিনিটে ভর্তি করা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান।

বিজ্ঞাপন



ওই হাসপাতালেই বেলা ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ১৫ অক্টোবর সেই ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, রায়হানের মৃত্যুর ২ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। সে হিসেবে ফাঁড়িতে আনার পর থেকেই তার ওপর নির্যাতন চলে।

রিপোর্টে বলা হয়, রায়হানের ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুল আর বাম হাতের অনামিকার নখ উপড়ানো ছিল। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ কারণ ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লে­খ করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত রোববার (১১ অক্টোবর) ভোর রাতে নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার যুবক রায়হান আহমদকে পুলিশ ফাঁড়িতে ধরে এনে নির্যাতন করা হয়। এরপর ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদি হয়ে ১২ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর আকবরসহ ৪ পুলিশকে বরখাস্ত ও ৩ জনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ অক্টোবর বিকেল থেকে আকবর পলাতক রয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার রায়হানের মরদেহ কবর থেকে তুলে দ্বিতীবার ময়না তদন্ত করে পিবিআই। ওইদিনই শেষে বিকেলে আবার আখালিয়া নবাবী মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে রায়হানের মরদেহ ফের দাফন করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত