নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ অক্টোবর, ২০১৫ ২০:৫৫

২৮ বছর পর বাড়ি গেলেন ফজলু মিয়া

২৮ বছর আগে ফজলু মিয়ার বয়স যখন ১২ কিংবা ১৩ তখন রাগ করে বাড়ি থেকে চলে এসেছিলেন ফজলু মিয়া। এরপর অনেক কাহিনী ঘটে গেছে। বিনা দোষে, বিনা বিচারে প্রায় ২২ বছর জেল খাটতে হয়েছে ফজলু মিয়াকে। কিন্তু আর বাড়ি যাওয়া হয়নি তাঁর।

অবশেষে আজ (সোমবার) ২৮ বছর জামালপুরে নিজ বাড়ির উদ্যেশেও রওয়ানা দিয়েছেন ফজুল মিয়া। আজ সন্ধ্যায় দক্ষিণ সুরমার তেলিবাজারে তেতলী ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে ফজুল মিয়াকে নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা করেন তারঁ মা, বোন আর মামা। সঙ্গে ছিলেন জামালপুরের এনডিসি জ্যোতিস্মর পাল। যিনি জামালপর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ফজুল মিয়াকে নিতে সিলেট আসেন।

সিলেট ছাড়ার আগে জ্যাতিস্মর পাল জানান, ফজলু মিয়াকে প্রথম জামালপুর জেলা প্রশাসকের বাসভবনে নেওয়া হবে। সেখানে তাঁর জন্য জেলা প্রশাসকসহ গণমাধ্যম কর্মীরা অপেক্ষা করছেন। জেলা প্রশাসকের উদ্যােগে ফজলু মিয়াকে সংবর্ধনা প্রদানের পর তাকে তাঁর নিজ বাড়িতে পাঠানো হবে।

ফজলু মিয়ার জামিনদার সমাাজকর্মী কামাল উদ্দিন রাসেল বলেন, আইনী ঝামেলা শেষে আজ সন্ধ্যায় ফজলু মিয়াকে নিয়ে তাঁর বাড়ির লোকজন সিলেট ছেড়েছেন।

জানা যায়, জামালপুর সদর উপজেলার নারায়ণপুর এলাকার শাউনিয়া বাঁশছড়া এলাকায় ফজুল মিয়ার বাড়ি। ১০-১২ বছর বয়সে ফজলু বাড়ি থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানেই তাঁর সঙ্গে দেখা হয় সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার ধরাধরপুর গ্রামের সৈয়দ গোলাম মাওলার সঙ্গে। তিনি ফজলুকে তাঁর বাড়ি নিয়ে আসেন।

ফজলু মিয়ার মামা মফিজ উদ্দিন জানান, প্রায় ২৮ বছর আগে ফজলু মিয়া বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন। তারপর দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন।

মফিজ উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে টেলিভিশনে ফজলু মিয়াকে দেখে তাঁর ভাতিজা রাজু মিয়া ফোন করে জানান, ফজলু বেঁচে আছেন। এরপর বিভিন্ন পত্রিকায় ফজলু মিয়ার সচিত্র প্রতিবেদন দেখে তাঁরা নিশ্চিত হন, এই ফজলুই তাঁদের হারিয়ে যাওয়া ফজলু। এরপর তাঁরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

জামালপুর জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান বিষয়টি জানতে পেরে ফজলুর প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত করতে পরিবারের সদস্যদের ডাকেন। সিলেটে অবস্থানরত ফজলুর সঙ্গে তাঁর মোবাইল ফোনে কথাও হয়। এরপর জেলা প্রশাসক উদ্যোগী হয়ে ফজলু মিয়াকে জামালপুর নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।

জানা যায়, ফজলু মিয়া একসময় গলায় ডালা বেঁধে সিলেট নগরে পান-সিগারেট বিক্রি করতেন। সিলেট শহরের বন্দরবাজার আদালতপাড়ায় তিনি ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করতেন। ১৯৯৩ সালের ১১ জুলাই তিনি আদালতপাড়ায় পান-সিগারেট বিক্রি করছিলেন। জাকির হোসেন নামের এক ট্রাফিক সার্জেন্ট সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করার জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করেন। ৫৪ ধারায় কোতোয়ালি থানায় ফজলু মিয়ার বিরুদ্ধে ডায়েরি করেন সার্জেন্ট জাকির। এরপর পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে ফজলু মিয়ার বিরুদ্ধে পাগল আইনের ১৩ ধারায় অভিযোগ আনে। তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কারাগারে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি। প্রায় ২২ বছর পর গত ১৫ অক্টোবর তিনি জামিনে মুক্তি পান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত