নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ নভেম্বর, ২০২০ ১৯:৫৫

অনন্ত বিজয় হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলায় আজ মঙ্গলবার (৩ নভেম্বর) একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা জয়েছে। সিলেটে সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল আমিন বিপ্লবের আদালতে আজ সাক্ষ্য প্রদান করেন বিকাশ দাশ। এই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারকালে জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়ে তিনি সাক্ষ্যপ্রদান করেন।

এনিয়ে এই মামলার ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষগ্রহণ সম্পন্ন হলো।


এই মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আজ মামলা পরিচালনায় অংশ নেন এমাদউল্লাহ শহিদুল ইসলাম ও তার সহকারী হিসেবে মামলা পরিচালনায় সহযোগিতা করেন মোহাম্মদ মনির উদ্দিন ও মো. বুরহান উদ্দিন। আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে অংশ নেন অ্যাডভোকেট শাহ আলম মহি উদ্দিন।

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী ২৯ জনকে সাক্ষী করে ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সিলেটের আলোচিত এই মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে অনেক দেরিতে। খুন হওয়া অনন্ত বিজয় দাশের বড়ো ভাই রত্নেশ্বর দাশ মামলাটির বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হওয়ার জন্যে হতাশা প্রকাশ করেন।

আজ সাক্ষ্যগ্রহণকালে আসামি আবুল খায়ের রশিদ আহমদকে সিলেট কারাগার থেকে এবং শফিউর রহমান ফারাবী ঢাকা কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়।

এরআগে গত ৬ অক্টোবর বিজ্ঞান লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলায় দুই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

প্রসঙ্গত,  ২০১৫ সালের ১২ মে সকালে সিলেট নগরীর সুবিদবাজারে নিজ বাসার সামনে খুন হন বিজ্ঞান লেখক ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অনন্ত বিজয় দাশ। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হলে উগ্রবাদীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে।

সুবিদবাজারের রবীন্দ্র কুমার দাশ ও পীযূষ রানী দাশের দুই মেয়ে ও দুই ছেলের মধ্যে অনন্ত ছিলেন সবার ছোট। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে মাস্টার্স করার পর সুনামগঞ্জের জাউয়াবাজারে পূবালী ব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসেবে যোগ দেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের দিনই অনন্তের বড় ভাই রত্নেশ্বর দাশ বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে এতে অভিযোগ করা হয়।

মামলাটি পুলিশ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সন্দেহভাজন আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

অভিযুক্ত ৬ জন হলেন- সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন (২৫), খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ (২৭), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বীরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ (২৫), কানাইঘাটের পূর্ব ফালজুর গ্রামের মান্নান ইয়াইয়া ওরফে মান্নান রাহী ওরফে এবি মান্নান ইয়াইয়া ওরফে ইবনে মঈন (২৪), কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ (২৫) ও সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান ফারাবী ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমান (৩০)।

এর মধ্যে আবুল, ফয়সাল ও হারুন পলাতক। ফারাবী ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলারও আসামি। অভিযুক্ত আসামিদের মধ্যে মান্নান রাহী আদালতে অনন্ত হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালের ২ নভেম্বর মান্নান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

গত বছরের ৭ মে সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে এই মামলার সর্বশেষ সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এরপর সাক্ষীদের অনুপস্থিতির কারণে বারবার বারবার পিছিয়ে যায় সাক্ষ্যগ্রহণ। ফলে এখন পর্যন্ত এই মামলার আশাব্যঞ্জক কোনো অগ্রগতি হয়নি। দীর্ঘদিন সিলেটের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলার পর সম্প্রতি মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত