নিজস্ব প্রতিবেদক

০৬ অক্টোবর, ২০১৬ ১৩:৪৬

অনন্ত বিজয় দাশের জন্মদিন আজ

ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের চাপাতির কোপে নিহত ব্লগার, বিজ্ঞান, লেখক ও ব্যাংকার অনন্ত বিজয় দাশের ৩৪তম জন্মদিন আজ। মৃত্যু পরবর্তী এটা তাঁর দ্বিতীয় জন্মদিন। ১৯৮২ সালের এ দিনে জন্ম নেন এ বিজ্ঞান লেখক।

২০১৫ সালের ১২ মে সকাল সাড়ে ৮টায় সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকার নূরানি আবাসিক এলাকায় অনন্ত বিজয় দাশকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি সুবিদবাজারের বনকলাপাড়ার নূরানি এলাকার ১২/১৩ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। ঘটনাস্থল থেকে অনন্তর বাড়ি ছিল ৩০ থেকে ৪০ গজ দূরে।

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেন অনন্ত বিজয়। এরপর কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন পূবালী ব্যাংকে। সিলেটের জাউয়াবাজারে অবস্থিত পূবালী ব্যাংক শাখায় কর্মরত ছিলেন।

এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ১২ মে রাতেই অজ্ঞাত পরিচয় ৪ জনকে আসামি করে অনন্ত বিজয় দাশের বড়ভাই রত্নেশ্বর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। প্রথমে পুলিশ তদন্ত করলেও পরে মামলাটির তদন্তভার সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগকে দেওয়া হয়। আনসার বাংলা ৮ নামের একটি সংগঠন এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে।

অনন্ত বিজয় হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশে পক্ষ থেকে জানানো হয়। এদের মধ্যে ৯ জন ব্লগার ড. অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার আসামী। তাদেরকে এই মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়েছে। আর ৪ জনকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অনন্ত বিজয় হত্যায় প্রথম গ্রেপ্তার করা হয় স্থানীয় ফটোসাংবাদিক ইদ্রিস আলীকে। তার বাড়ি সিলেটের ফতেহপুর এলাকায়। ইদ্রিস আলী বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। ইদ্রিস আলীর পর গত ২৭ আগস্ট সিলেট থেকে মান্নান ইয়াহিয়া (২৪) ও তার ভাই মোহাইমিন নোমানকে (২১) গ্রেপ্তার করে সিআইডি। দুই ভাই ইসলামী ছাত্র মজলিশের সক্রিয় সদস্য। গ্রেফতারকৃত সহোদর সিলেটের কানাইঘাটের পূর্বপালজুড় গ্রামের হাফিজ মইনউদ্দীনের ছেলে।

হত্যাকাণ্ডের আগে মান্নান ইয়াহিয়া নাম পরিবর্তন করে মান্নান রাহী এবং হত্যাকাণ্ডের পরে ইবনে মাইউন নামে ফেসবুকে লেখালেখি করতেন। মান্নান ইয়াহিয়া সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে অনার্স পরীক্ষা দিয়েছে। তার ভাই মোহাইমিন নোমান এমসি (মুরারি চাঁদ) কলেজের ইসলামিক শিক্ষা বিভাগের ছাত্র।

সহোদরদের দেয়া তথ্যমতে, গত ২ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার সিআইডির হাতে হয় আবুল খায়ের (২২)। তার বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটে। তিনি সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষ সম্মান শ্রেণীর ছাত্র। তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবিরের সক্রিয় কর্মী। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মান্নান ইয়াহিয়া আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

ওই সময় সিআইডি দাবি করে, মান্নানের জবানবন্দিতে বিজয় হত্যার বিষয়টি প্রায় পরিষ্কার হয়ে গেছে।

জবানবন্দি মতে, অনন্ত মুক্তমনা ব্লগে লেখালেখি করতেন। তার লেখালেখি বন্ধ করতে গ্রেফতারকৃত মান্নান রাহীর (প্রকৃত নাম মান্নান ইয়াহিয়া) সঙ্গে ফেসবুকে অনেক আগে থেকেই কথা হচ্ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অনিয়মিত ছাত্র এবং ছাত্র শিবিরের সাবেক সক্রিয় কর্মী শফিউর রহমান ফারাবীর।

সিআইডি সূত্র বলছে, হত্যার দেড় মাস আগে অনন্তকে হত্যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় ৫ জন। যদিও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত মান্নান রাহি ও আবুল খায়েরের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি সিআইডির।

অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার চার্জশিট এখনও দিতে পারে নি সিআইডি।

অনন্ত বিজয় দাশ ছিলেন বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতার ছোটকাগজ 'যুক্তি'র সম্পাদক। মানবতা এবং যুক্তিবাদ প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০০৬ সালে মুক্তমনা র‌্যাশনালিস্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।

তাঁর প্রকাশিত প্রবন্ধ গ্রন্থ : (১) পার্থিব, (সহলেখক সৈকত চৌধুরী), শুদ্ধস্বর, ঢাকা, ২০১১। (২) ডারউইন : একুশ শতকে প্রাসঙ্গিকতা এবং ভাবনা, (সম্পাদিত), অবসর, ঢাকা, ২০১১। (৩) সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও বিপ্লব : লিসেঙ্কো অধ্যায়, শুদ্ধস্বর, ঢাকা, ২০১২। (৪) জীববিবর্তন সাধারণ পাঠ (মূল: ফ্রান্সিসকো জে. আয়াল, অনুবাদ: অনন্ত বিজয় দাশ ও সিদ্ধার্থ ধর), চৈতন্য প্রকাশন, সিলেট, ২০১৪।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত