সিলেটটুডে ডেস্ক

২৭ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০

বিয়ানীবাজার ক্যান্সার হাসপাতালে ৮ মাসে ৬৬ জন ক্যান্সার রোগী সনাক্ত

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কার্যক্রম চালু হওয়ার পর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭শ ৪৭টি বাড়িতে গিয়ে ক্যান্সার বিষয়ক সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের মাঠকর্মীরা। আর এসব মাঠকর্মীদের তথ্য যাচাই এবং পরবর্তীতে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ৬৬ জন রোগীর ক্যান্সার সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।

এছাড়াও টিউমার, স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার সাদৃশ্যপূর্ন ৮১৯ জন রোগীর সন্ধান পেয়েছেন বিয়ানীবাজার ক্যান্সার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ (বিবিসিএইচ)।

বিবিসিএইচ এর তত্ত্বাবধায়ক ডা. সজিবুর রহমান এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, টিউমার, স্তন ও জরায়ুর ক্যান্সার সাদৃশ্যপূর্ণ যেসব রোগী পাওয়া গেছে তাদের আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা প্রয়োজন। এজন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও যারা ক্যান্সার রোগে ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরকে যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহনের পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে ফলোআপের মধ্যে রাখা হচ্ছে।

হাসপাতালের সিইও এম সাব উদ্দিন জানিয়েছেন, বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিকভাবে এ্যাওয়ারনেস ও ডিটেকশন সেন্টার চালু করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় হাসপাতালের ২০ জন প্রশিক্ষিত মাঠকর্মী প্রতিদিন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালিত করছেন।

তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাসপাতালে নিয়োজিত চিকিৎসকরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করছেন। এম সাব উদ্দিন আরও জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত নিয়মিতভাবে রোগী দেখা হচ্ছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন ফুলটাইম রোগী দেখার সার্ভিস চালু করা হবে।

এম সাব উদ্দিন জানান, ক্যান্সার রোগীদের জন্য নিয়মিত ডাক্তারদের পাশাাপাশি দেশের অভিজ্ঞ ও স্বনামধন্য অনকোলজিস্ট ডাঃ সাদ উদ্দিন জায়গীরদারও হাসপাতালের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে বিয়ানীবাজারের স্থানীয় প্রশাসন মিডিয়াসহ সর্বস্তরের বিয়ানীবাজারবাসী যেভাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন তা অভূতপূর্ব। এজন্য সকলের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

হাসপাতালের সার্ভিস সম্পর্কে হাসপাতালের উপদেষ্টা ডা. মহিউদ্দিন জানান, ক্যান্সার রোগী সনাক্তকরণের জন্য ডোর টু ডোর কার্যক্রম ছাড়াও এখানে গরীব রোগীদের ক্যান্সার রোগ সনাক্তকরণের জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহন করা, স্কিনিং, এক্সরে, ইসিজি, আলট্রাসাউন্ড, ল্যাবরেটরি সুবিধা আছে। এখানে ডে কেয়ার ছাড়াও নরমাল ডেলিভারীর সুবিধা রাখা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি এখানে সিজারিয়ান অপারেশনেরও সার্ভিস চালু করা হবে। জেনারেল বিভাগে এই পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজারের মতো রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে বিয়ানীবাজার কলেজ রোডে বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজ কাজ শুরু হয়। হাসপাতালের উদ্যোক্তারা প্রাথমিকভাবে চার মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় হবে ধারনা করে এর নির্মাণকাজ শুরু করেন। বিয়ানীবাজারে সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ লোকেশনে উপযুক্ত পরিমান ভূমি অধিগ্রহন করে পুরো হাসপাতালের কাজ তিন ফেইজে বিভক্ত করা হয়। প্রাথমিক ফেইজে এ্যাওয়ারনেস ও ডিটেকশন সেন্টার যা ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে।

দ্বিতীয় ফেইজে আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি সংযোজন কেমোথেরাপি চালুসহ ক্যান্সার রোগীদের আবাসিক চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালু।

তৃতীয় ফেইজে একটি পুর্নাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতালের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা প্রদানের চ্যালেঞ্জিং উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। উদ্যোগের শুরু থেকেই অসহায় ক্যান্সার রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে এই মহতী প্রকল্পে সম্পৃক্ত হয়েছেন দেশ বিদেশের সর্বস্তরের জনসাধারণ, বিশেষ করে বিলেতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা। মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত এই প্রকল্পে উদ্ধুদ্ধ হয়ে এগিয়ে এসেছেন বিলেতের অন্যান্য কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরাও।

বর্তমানে এ্যাওয়ারনেস সেন্টারের জন্য চারতলা বিশিষ্ট আধুনিক ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই ভবনে রয়েছে প্রথম তলায় রয়েছে রিসেপশন সেন্টার, ল্যাবরেটরী, ডে কেয়ার সেন্টার এবং এক্সরে ডিপার্টমেন্ট। দ্বিতীয় তলায় আছে ডক্টরস চেম্বার, অপারেশন থিয়েটার ও পোস্ট অপারেটিভ, আলট্রাসাউন্ড ও ইসিজি ডিপার্টমেন্ট। তৃতীয় তলায় রয়েছে ক্যান্টিন, ওয়ার্ড ও কেবিনসহ গাইনী বিভাগ, নিওন্যাটাল কর্ণার। চতুর্থ তলায় রয়েছে কনফারেন্স রুম, ক্যান্সার রোগীদের কেমোথেরাপি বিভাগসহ টার্মিনাল কেয়ার ইউনিট (টার্মিনাল কেয়ার ইউনিট অচিরেই চালু হবে)।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত