জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, তাহিরপুর

১৫ নভেম্বর, ২০২০ ২১:০৯

হাওরের জালাচারে পানি, বিলম্বিত হবে বোরো চাষ

‘গেলবার হাওরে পানি থাকার কারণে এক মাস পিছে লামছিলো (নেমেছিল) এবার দেড় মাস পিছে লামবো (নামবে)। বোরো চাষে বিলম্ব হলে আগাম বন্যায় ফসলহানির ঝুঁকি রয়েছে।’ ফলে কৃষি বিভাগের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কার কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক মহি উদ্দিন।

তিনি আরও জানান, হাওরের পানি খুব ধীরগতিতে নামার কারণে এখনও অধিকাংশ জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ফলে চারা রোপণ করতে না পারায় চলতি মৌসুমে বোরো আবাদের চারা রোপণের কাজ পিছিয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘গেলবার এমন সময় জালাধান বাইনের কাজ পুরোদমে করেছি। এইবার ইখনো জালাচারও ফুট পানি। কোন দিন জালাচার ভাসব আর কোন দিন জালাবাইন করব।’

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জের বৃহৎ বোরো ফসলি তাহিরপুর উপজেলায় ছোট-বড় ২৩টি হাওর রয়েছে। ২৩টি হাওরে জমির পরিমাণ ২৮ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে চাষাবাদ উপযোগী রয়েছে প্রায় ২১হাজার হেক্টর।

এবারও পানি দেরীতে নামার কারণে সেখানে বোরো উৎপাদন করা কঠিন হয়ে যাবে। ফলে এবারও আগাম পাহাড়ি ঢলের আশংকার পাশাপাশি বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাঘাত ঘটবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

হাওর পাড়ের সচেতন মহল বলেন, হাওরগুলো এখনও পানিতে টইটম্বুর। অপরিকল্পিত বাঁধ, সড়ক নির্মাণ এবং নদী ও খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। এবারও বন্যা ও জলাবদ্ধতায় কৃষক প্রতিবছর মত ক্ষতির মুখে পড়বে।

মাটিয়ান হাওর পাড়ের কৃষক শফিক মিয়া তিনি জানান, হাওরে পানি থাকলে ক্ষেত লাগাইতে দেরি হয়, আর ক্ষেত লাগাইতে দেরি হলে পাহাড়ি ঢল ও আগাম বন্যার পানিতে কৃষক সর্বশান্ত হন। এজন্য স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। হাওরে জাঙ্গালগুলো (ক্লোজার) এমন ভাবে বাধা উচিত যেন ফসলের মৌসুমে হাওর থেকে পানি বের করে দেয়া যায় আবার আগাম বন্যার সময় ঢলের পানি ঠেকানো যায়।

জানা যায়, বীজতলা তৈরির পর ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে চাষাবাদ করতে হয়। পানি বিলম্বে নামার কারণে এ বছর ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বীজতলা তৈরির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিসেম্বরের ১৫তারিখ পর্যন্ত বীজতলা তৈরির সময় সীমা নির্ধারণ করলেও হাওরের জমিতে ধান লাগাতে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগবে। ওই সময়ে চাষাবাদ করলে আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকে। কারণ হাওরাঞ্চলে মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই আগাম বন্যার পদধ্বনি দেখা দেয়।

তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর পাড়ের বীরনগর গ্রামের কৃষক সাদেক আলী বলেন, হাওরের পানি সময় মত না কমায় বরাবরই জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকি। চাষ করতে পারি না। এ বছর পরপর চারবারের বন্যার কারণে এখনও হাওরে যথেষ্ট পানি রয়ে গেছে। ফলে আমরা বন্যায় ক্ষতির আশঙ্কা করছি।

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান উদ দোলা জানান, পানি দেরীতে নামার কারণে কৃষকগনের উদ্বিগ্ন হবার প্রয়োজন নেই। আমরা কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে সব সময় আছি আর সার্বিক পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টির ফলে সুনামগঞ্জে পরপর চারবার বন্যা হয়েছে। এমনকি গেল মাসেও বৃষ্টি হওয়ায় হাওরের পানি কমেনি। চারবারের বন্যার কারণে হাওরের পানি কিছুটা বিলম্বে নামছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, এখন পানি দ্রুত নামছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত