নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ জানুয়ারি, ২০২১ ০২:২২

লাঠিসোটা নিয়ে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার আহ্বান বিএনপি প্রার্থীর

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী এক সভায় লাঠিসোটা নিয়ে নেতাকর্মীদের ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার কথা বলেন। ব্যত্যয় ঘটলে লাঠিসোটা ব্যবহারের কথা বলেন তিনি। তার এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ভোটের মাঠে তৈরি করেছে আলাদা উত্তাপ। 

গত ৯ জানুয়ারি তার নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত নেতা-কর্মীদের নিয়ে বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

তার এমন বক্তব্যের পরদিন ১০ জানুয়ারি নবীগঞ্জ নতুনবাজার মোড়ে নবীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম রসুল রাহেল চৌধুরীর পথসভায় পেট্রল বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ৩ পথচারী আহত হন। পেট্রল বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় নবীগঞ্জের সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে।

এই সভায় বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘১৬ তারিখ নির্বাচনে যদি কেউ কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা করতে চায়, আমারা উইড়া আইছি না ইনশাআল্লাহ। যত হাজার মানুষ দিয়া হউক ইটা (এটা) মোকিবেলা করা অইব। ইটার (এটার) লাগি দুশ্চিন্তা করবা না।’

বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘ভোটের দিন বিভিন্ন সেন্টারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকবেন। ভোটার ভোট দেবে। কোনো ব্যত্যয় ঘটে ‘ছেলি উলি (লাঠি-সোটা) সেন্টারের কান্দাত থাকব’। ‘ছেলি উলি (লাঠি-সোটা) রেডি থাকব। কোনো ব্যত্যয় ঘটলে এগুলো কামে (কাজে) লাগাই লাইবা।’

সভায় বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী দল এই নির্বাচনকে আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করেছে। আমরা রাজপথে আন্দোলন করতে পারছি না। নেত্রী বলেছেন নির্বাচনকে আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করব। অনেক জায়গায় নির্যাতিত হচ্ছি। আমাদের বক্তব্যটা মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দেব। এটার কারণেই নির্বাচনে আসা। এই নির্বাচনটা, আন্দোলনটা, যুদ্ধটা আমাদের বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবেলা করতে হবে।’

দলের দায়িত্বশীল নেতাদের অসহযোগিতার বিষয়ে দুঃখ করে বলেন, ‘সবার কাছে আমার বিনীত নিবেদন আমি আপনাদের দলের একজন বিশেষ কর্মী। যেহেতু দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। তাই দূরত্ব, মান-অভিমান, হানাহানি ভুলে গিয়ে আমাদের নেত্রীর মুখকে উজ্জল করার জন্য নবীগঞ্জের ধারাবাহিক বিজয় অক্ষুন্ন রাখতে সহযোগিতা করুন।’

‘কিন্তু নবীগঞ্জের অনেক নেতাকর্মী কাজ করছেন না। তারেক রহমান যখন মনোনয়ন দিয়েছেন সকলের সাথে দেখা করেছি, যখন যাকে প্রয়োজন জড়িয়ে ধরেছি। কিন্তু তাদের মন আমি পরিস্কার করতে পারি নাই। আমার দুর্ভাগ্য ও না দলের দুর্ভাগ্য বলতে পারি না।’

বিএনপির এই প্রার্থী আরও বলেন, ‘প্রশাসন এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষ আছে। অযথা দোষারোপ করছি না। যদি উনারা নিরপেক্ষতা লঙ্ঘন করেন (কারো পক্ষাবলম্বন)। নবীগঞ্জ বাংলাদের মধ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করবে। স্পষ্ট বলতে চাই, নিরপেক্ষভাবে এই নির্বাচন করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশের মধ্যে নজির সৃষ্টি করবে নবীগঞ্জের বিএনপি।’

এদিকে পেট্রল বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার রাতেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করে।

আওয়ামী লীগের সংবাদ সম্মেলন বোমা হামলার জন্য বিএনপি প্রার্থী ও তার সর্মথকদের দায়ী করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ‘আগেরদিন উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার পরদিন এই ঘটনা। বিএনপি নিশ্চিত পরাজয় জেনে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’

অপরদিকে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘বোমা হামলাটি সাজানো নাটক।’

কেন্দ্রে লাঠিসোটা থাকবে এরকম বক্তব্যের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে ছাবির আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করতেছি ভোট কারচুপি অইব। ভোট ডাকাতি অইব। এর লাগি আমরার নেতাকর্মীরে নির্দেশ দিছি ভোটের দিন ছেলি, (লাঠি-সোটা) লইয়া কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাহারা দেওয়ার জন্য।’

প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১৬ জানুয়ারি এই পৌরসভায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে আওয়ামী লীগের গোলাম রসুল চৌধুরী রাহেল, বিএনপির ছাবির আহমদ চৌধুরী ও স্বতন্ত্র মাহবুবুল আলম সুমন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ৯টি ওয়ার্ডের ১০টি কেন্দ্রের ৪৮টি বুথে ভোট নেওয়া হবে। মোট ভোটার ১৮ হাজার ৭৭৭।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত