নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ০১:৩৫

রাতের নগরে আতঙ্কের নাম বেপরোয়া ট্রাক

সিলেট নগরে রাতের আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠেছে বেপরোয়া ট্রাক। রাতে নগরে ট্রাকের চাপায় পৃষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। নগরের ভেতর দিয়ে ট্রাক চলাচলের সময়সীমা বেধে দিলেও তা মানছেন না চালকরা।

নগরের ভেতরের সড়ক দিয়ে পাথর বোঝাই ট্রাকের বেপোরোয়া চলাচলের কারণে ঘটছে একের এক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। সর্বশেষ গত ১১ জানুয়ারি  (সোমবার) রাতে নগরের সুবিদবাজারের এলাকায় ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী দুই তরুণ। সজিব ও লুৎফুর নামের ওই দুই তরুণের মৃত্যুর খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এলাকাবাসী। ওই রাতেই তারা সুবিদবাজারে সিলেট সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে ৪ টি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়ন এবং ভাঙচুর করেন প্রায় ৩০ টির মতো ট্রাক। একইদিনে একটি বেপরোয়া ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ভেঙে দেয় নগরের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরের ফোয়ারা। এতে আহত হন ট্রাক চালক।

এর আগে ৯ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১২ টার দিকে নগরীর খাসদবির এলাকায় ট্রাক চাপায় কুটি মিয়া (৩০) নামের এক পথচারীর মৃত্যু হয়। ঘটনার পর আম্বরখানা-এয়ারপোর্ট সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় জনতা।

নগরে ট্রাকের চাপায় পৃষ্ট হয়ে এভাবে হতাহতের ঘটনা ঘটছে নিয়মিতই। ফলে নগরের ভেতর দিয়ে ট্রাক চলাচল বন্ধেরও দাবি ওঠেছে।

সোমবার রাতের দুর্ঘটনার পর মঙ্গলবার বিকেলে নগরে কফিন মিছিল করে একদল তরুণ। এই মিছিলের পর সমাবেশ থেকে অনতিবিলম্বে নগরীতে ভারী ট্রাকের প্রবেশ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।

একই দাবিতে বুধবার সভা করেছেন নগরের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

তবে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা সচেতনতার অভাবে ঘটে বলে মন্তব্য সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহেরের। তিনি বলেন, সকলকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকদেরকে সতর্ক হতে হবে। কারণ এসব সড়কে অন্যান্য পরিবহন চলাচল করলেও তুলনামূলক ভাবে ট্রাকের সাথে মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনাই বেশি হয়।

জানা যায়, সিলেটের বৃহৎ দুই পাথর কোয়ারি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং থেকে প্রতিদিন অসংখ্য ট্রাক নগরের ভেতর দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যায়। অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই ও বেপরায়াভাবে চলাচলকারী এসব ট্রাকের কারণেই ঘটে দুর্ঘটনা। নগরের ভেতরে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন সময় দাবি ওঠলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি।

সিটি করপোরেশন বলছে, ট্রাক চলাচলের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। আর ট্রাফিক পুলিশের দাবি, নগরের ভেতরে ট্রাক প্রবেশের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরআগে ট্রাক প্রবেশ করলে বাধা দেওয়া হয়।

সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নগরের ভেতরে ট্রাক চলাচলের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তেমূখি পয়েন্ট হয়ে সিলেট নগরে ট্রাক ঢুকতে পারবে রাত ৮টার পর। কোম্পানীগঞ্জ থেকে আসা ট্রাক রাত ৯টা ও হুমায়ুন রশীদ চত্ত্বর থেকে রাত ১০টার পর নগরে ট্রাক ঢুকতে পারবে। নগরের ভেতরে চলাচল করতে পারবে সকাল ৮টা পর্যন্ত। এসব ট্রাক কেবলমাত্র নগরের ইলেকট্রিক সাপ্লাই, আম্বরখানা ও সুনামগঞ্জ সড়ক ব্যবহার করবে।

তবে ট্রাক চালকরা এমন নির্দেশনা অমান্য করে সন্ধ্যার পরপরই সগরীতে ট্রাক নিয়ে ঢুকে পড়েন। নির্ধারিত সড়ক ছাড়াও উপশহর, শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাটসহ কয়েকটি সড়কে ট্রাক চলতে দেখা যায়। সেতুর টুল ফাঁকি ও সময় বাঁচাতে চালকরা নগরের ভেতর দিয়ে ট্রাক চলাচল করেন বলে জানা গেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, ট্রাক চলাচল আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। এটা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ দেখবে। অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাকের কারণে নগরের সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

জেলা ট্রাক মালিক গ্রুপের কার্যকরী কমিটির সভাপতি গোলাম হাদি ছয়ফুল বলেন, পুলিশের নির্দেশনা মেনে রাত ৯টার পর নগরের ভেতরে ট্রাক প্রবেশ করে।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ বলেন, বেপরোয়া ট্রাক নিয়ন্ত্রণে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করি। আমাদের সদস্যরা রাত ১১টা পর্যন্ত সড়কে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর শুধু আম্বরখানা ও সুরমা বাইপাসে ট্রাফিক পুলিশ থাকে। তাই রাতে নগরে ট্রাক নিয়ন্ত্রণ কঠিন।

তিনি বলেন, ট্রাকে ওভারলোড বন্ধে আমাদের কিছু করার নেই। যদি ওভারলোড কন্ট্রোল স্কেল থাকতো তবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত