তপন কুমার দাস ও হামিদুর রহমান, মাধবপুর থেকে :

১৪ জানুয়ারি, ২০২১ ২৩:২৮

মাধবপুর পৌরসভায় সড়কের পাশে ময়লার ভাগাড়, মানুষের দুর্ভোগ

জনবসতিপূর্ণ স্থানে ময়লা ফেলা হয়েছে।

সড়কের পাশে উন্মুক্ত জায়গায়, পুকুরে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ময়লা ফেলা হচ্ছে। বছরের পর বছর আবর্জনা ফেলায় এসব জায়গা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। হবিগঞ্জের প্রথম শ্রেণির মাধবপুর পৌরসভার চিত্র এটি। উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে সেখানকার জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার দশা।

মাধপুর পৌরসভা কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে মাধপুর পৌরসভার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৮৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ১০৭ জন ও নারী ভোটার ৭ হাজার ৮৮০ জন। ২০১২ সালে পৌরসভাটি ‘ক’ গ্রেডে উন্নীত হয়। কিন্তু প্রথম শ্রেণীর এ পৌরসভায় গত প্রায় ৮ বছর থেকে শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য কোনো নির্দিষ্ট স্থান করা হয়নি। এর কারণে প্রতিদিন পৌরসভার গাড়িতে ভরে ময়লা এনে শহরের হাসপাতাল রোড, রিকশা স্ট্যান্ড ও সবজি বাজারের ভেতরের পুকুরসহ ৪টি পুকুরের পাড় এবং সোনাই নদীতে ফেলছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। জাগয়া সংকটের কারণে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।

মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের হাসপাতাল রোড, রিকশা স্ট্যান্ড ও সবজি বাজারের ভেতরের পুকুরসহ ৪টি পুকুরের পাড় এবং সোনাই নদীতে পৌরসভার যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে। আবাসিক এলাকা ও জনবসতিপূর্ণ স্থানের এসব আবর্জনার পচা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। পথচারীরা চলাচল করছেন নাকে কাপড় ঢেকে। এই শহরে পৌরসভার নির্বাচন ১৬ জানুয়ারি। শহরের আকাশ আড়াল করে ঝুলঝিল প্রার্থীদের নির্বাচনী পোস্টার। তবে ভোটের আলোচনা, প্রার্থী ও প্রতীকের বিষয়টি ছাপিয়ে এখানে জলাবদ্ধতার সংকট নিরসন, মশার উপদ্রব, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকার ক্ষোভই বড় হয়ে উঠেছে।

শহরের হাসপাতাল এলাকায় কথা হয় রামপাল পোদ্দারের সাথে। তিনি এই এলাকায় চাকুরীর সুবাদে বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা নেই। প্রতিদিন এখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। অনেক দিন ধরে এই অবস্থা। বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্যও এখানে ফেলা হয়। এসব ময়লা আগুনে পোড়ানো হয়। এর ধোঁয়া আশপাশের ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে লোকজন নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’

হাসপাতাল রোড এলাকায় ফজল মিয়া নামের এক বাসিন্দা অভিযোগ করেন, কাঁচা বাজারের প্রতিদিনের নষ্ট তরিতরকারি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বর্জ্যসহ বিভিন্ন রকমের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে এসব সড়কের পাশে, নদীতে। খুব কষ্ট হয় চলাচল করতে। অনেক কয়েক বছর ধরে এই অবস্থা। কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।’

তিনি আরও বলেন, শহরে বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা। মশার উপদ্রব তো আছেই। মশা কয়েল, স্প্রে ইতা মানে না।’

হাসপাতাল রোডের পাশেই ব্যবসা করেন জীবন দেবনাথ। তিনি বলেন, ‘ময়লার পচা দুর্গন্ধ ঠিকতে পারি না। এখানে সড়কের পাশে মানুষ প্রকাশ্যে প্রশ্রাব করছে। পাশেই বাসা-বাড়ির নারীরা কাপড় শুকাতে দেন। বিশ্রি একটা অবস্থা।’

কাজের জন্য শহরে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আবাসিক এলাকা, গ্রাম ও জনবসতিপূর্ণ স্থানে পৌরসভার ময়লা ফেলার বিধান না থাকলেও আমাদের এখানে যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এটি আবার প্রথম শ্রেণীর পৌরসভা। শুধু কাগজে কলমে প্রথম শ্রেণি।’

এ প্রসঙ্গে পৌরসভার মেয়র হিরেন্দ্র লাল সাহা বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিভাগীয় কমিশনার স্যার সব মেয়রদের ডাকাইছিলেন। শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ডিসি এবং ইউএনওকে চিঠি দেওয়া হয়। খাস জমি দেখে, যেখানে কোনো সমস্যা নাই পৌরসভাকে হস্তান্তর করার জন্য। বিভাগীয় কমিশনার সার সরেজমিনে এসেছিলেন। আমরা তিনটি স্থান দেখিয়েছি। তিনটির যে কোনো একটি দিলে হবে বলেছি। এক দেড় বছর হয়েছে। কিন্তু জায়গা দেয়নি তারা। কিছু জায়গায় মামলার কারণে। আর কিছু জায়গায় প্রশাসনিক কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উন্নয়ন কাজ।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত