নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০১:২৯

সিলেটে ১০ বিদ্রোহী নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ

পৌরসভা নির্বাচন

সিলেট বিভাগে অনুষ্ঠেয় সাতটি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। এসব পৌরসভার পাঁচটিতে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থীর বিপরীতে লড়ছেন ১০ বিদ্রোহী প্রার্থী।

শাস্তির খড়গ মাথায় নিয়েও পাঁচটি পৌরসভায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র হয়ে ভোটের মাঠে লড়ছেন তারা। এদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান ও সাবেক চার মেয়র। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হওয়ায় এরইমধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে চারজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দল থেকেও তাদের ব্যাপারে কঠোর মনোভাব দেখানো হয়েছে।

বিদ্রোহীদের আর কখনোই দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে না, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন হুশিয়ারির পরও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। ভোটের মাঠ থেকেও তাদের ফেরানো যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিষয়ে কেন্দ্রকে অবহিত করা হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে তাদের বহিষ্কার করা হবে।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল মতে, দ্বিতীয় ধাপে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, সুনামগঞ্জ সদর ও হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভায় ১৬ জানুয়ারি এবং তৃতীয় ধাপে সিলেটের গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার পৌরসভায় নির্বাচনে আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে।

দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠেয় পৌর নির্বাচনে বিভাগের চারটি পৌরসভার মধ্যে ৩টিতে অন্তত ৬ জন বিদ্রোহী প্রার্থী নৌকার বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর তৃতীয় ধাপে বিভাগের ৩টি পৌরসভায় অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে দুটিতে রয়েছেন দলের চার বিদ্রোহী।

আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন। একইভাবে বিপাকে পড়েছেন দলের সমর্থক ও তৃণমূল নেতাকর্মীরাও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপের ভোটে কমলগঞ্জ পৌরসভায় নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন পৌরসভার বর্তমান মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ‘নারিকেল গাছ’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি, তিনবারের নির্বাচিত পৌর কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন। দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হলেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি তিনি।

একই পৌরসভায় দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে প্রার্থী হওয়ায় বহিষ্কৃত হয়েছেন উপজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হেলাল মিয়া। তিনি ভোটে লড়ছেন ‘জগ’ প্রতীক নিয়ে।

কুলাউড়া পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও উপজেলা শ্রমিকলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদ। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মেয়র শফি আলম ইউনুস। তাকে এরই মধ্যে বহিষ্কার করেছে দল। এই পৌরসভায় আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী হলেন প্রবাসী শাহজাহান মিয়া।

হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভায় নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শ্রীধাম দাশগুপ্ত। এ পৌরসভায় দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দুইবারের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ মো. মুসলিম ও বর্তমান মেয়র হিরেন্দ্র লাল সাহার ছোট ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পঙ্কজ সাহা।

তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে গোলাপগঞ্জে নৌকার কাণ্ডারি হয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমদ। আওয়ামী লীগ মনোনীত এ মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটে লড়ছেন দলের পৌর কমিটির সভাপতি বর্তমান মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল ও পৌর কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক, সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু।

জকিগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিন। তার বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ফারুক আহমদ ও উপজেলা যুবলীগের সদ্য পদত্যাগী আহ্বায়ক আবদুল আহাদ। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে যুবলীগের আহ্বায়ক পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন আহাদ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত